বিডি প্রতিবেদক :
নারী-পুরুষ সমতা বিষয়ে শিশুদের সচেতন করতে কক্সবাজারে আরডিআরএস বাংলাদেশের নতুন প্রকল্প শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের আটটি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে নারী-পুরুষ সমতার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সেই সমতা বাস্তবায়নে অনুকূল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে বিশেষ একটি প্রকল্প যাত্রা শুরু করেছে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান আরডিআরএস বাংলাদেশ। ২২ ডিসেম্বর, আরডিআরএস বাংলাদেশ কক্সবাজারে হোটেল বিচ ওয়েতে কর্ম এলাকার এনজিও দের নিয়ে সভা আয়োজন করে, যেখানে ২৭ জন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিও প্রতিনিধি, প্রধান শিক্ষক, সাংবাদিক প্রতিনিধি , জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সহ স্কুলে লিঙ্গ সমতা এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি (জিইএসআই) প্রচারে এনিজিওদের ভূমিকা অন্বেষণ করতে একত্রিত করে। এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল কক্সবাজারে নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষামূলক পরিবেশের সমর্থনে এনজিও প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা জোরদার করা।
প্রকল্পটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দা নূরে নাবিলা তাবাসসুম কর্মসূচিটি উপস্থাপন করেন এবং লিঙ্গ-সংবেদনশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক বিদ্যালয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাফল্য ও চ্যালেঞ্জগুলি কভার করে জিইএসআই-কেন্দ্রিক উদ্যোগগুলিকে সমর্থন করার জন্য এনিজিও কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রকল্পটির গবেষণা সহযোগী মোঃ নাজমুল হুসাইন একটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে আরডিআরএসের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং আরডিআরএস বাংলাদেশের চলমান জিইএসআই উদ্যোগ, স্থানীয় বিদ্যালয়ের পরিবেশ নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা এবং জিইএসআই-সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এনিজিও কীভাবে সহায়তা করতে পারে সে সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছেন। উপস্থাপনাটি লিঙ্গ সমতা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষাগত উন্নতিতে এনিজিওদের রূপান্তরমূলক প্রভাবকে তুলে ধরেছেন। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন প্রকল্পটির ফিনান্স এন্ড এডমিন এসিস্ট্যান্ট জনাব অশোক মালাকার।
অতিথিদের চিন্তাভাবনাঃ
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা আফিসার মোঃ শাহীন মিয়া বলেন পরিবর্তন অবশ্যই বাড়ির ভিতর থেকে শুরু করতে হবে, পরিবারগুলি লিঙ্গ সমতা এবং ন্যায়সঙ্গত আচরণ অনুশীলন করবে। তিনি সাংবাদিকদের লিখতে উৎসাহিত করেন যা পারিবারিক সমতা প্রচার করে এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তনকে অনুপ্রাণিত করে, জোর দিয়ে বলেন যে লিঙ্গ ও অন্তর্ভুক্তির প্রতি পরিবার ও সম্প্রদায়ের মনোভাবের পরিবর্তনকে অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা গণমাধ্যমের রয়েছে। এনজিওদের ভুমিকাগুলো পর্যালোচনা করেন। পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন এবং সেটা শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে শুরু করার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা আফিসার মোহাম্মদ সাজ্জাদ (ভারপ্রাপ্ত) বলেন বিদ্যালয়গুলিতে জিইএসআই-এর বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং বিদ্যালয় উন্নয়নমূলক উদ্যোগগুলিতে সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণকে শক্তিশালী করতে এনজিওদের সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। উভয় শিক্ষা আধিকারিকই এনজিওদের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোগত উন্নতি এবং বিদ্যালয়গুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।
জেলা শিক্ষা অফিসার রাম মোহন সেন বলেন জেন্ডার সমতা বাংলাদেশে অতীব গুরুত্বপুর্ণ। সমাজ ব্যবস্থায় ইথিক্স দরকার এবং সমাজের উন্নয়নে এনজিওদের ভূমিকা অপরিসীম। গবেষনাটির সার্বিক সহযোগিতার ব্যাপারে প্রতুশ্রতি দেন।
এনজিও প্রতিনিধিদের বক্তব্যঃ
কিছু এনজিও প্রতিনিধি মনে করেন পারিবারিক কাউন্সেলিং সেশন, সংবাদপত্র ও অনলাইন মিডিয়াতে লিঙ্গ সমতা নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ এবং জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য সেমিনার আয়োজনের পরামর্শ দেন।
রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এবং বাল্যবিবাহ ও লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার মতো ক্ষতিকারক অনুশীলনের বিরুদ্ধে প্রচারের জন্য এনজিওদের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁরা মেয়েদের শিক্ষা ও কর্মজীবনের সুযোগ সৃষ্টির ওপর বিশেষ জোর দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নকে উৎসাহিত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন।
শিশুর জন্য সুরক্ষা, বাল্য বিবাহ রোধ, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, উন্নত স্বাস্থ্যবিধি স্কুল পর্যায়ে নিশ্চিত করার বিষয়েও এনজিওদের ভুমিকা অপরিসীম বলে মনে করেন
সবাইকে একসাথে শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করার আহবান জানিয়ে সভা শেষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন জেলা শিক্ষা অফিসার।