প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১২, ২০২৫, ৫:১৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০২৫, ৩:৫৬ পি.এম
উখিয়ায় পাহাড় কেটে দিন-রাত কৃষিজমি ভরাট

সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার :
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে বন ধ্বংস ও অবৈধভাবে কৃষিজমি ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। রাতের আঁধারে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট পাহাড় কেটে অন্যের জমি দখল করে মাটি দিয়ে ভরাটের মহোৎসব চালাচ্ছে। তবে বনবিভাগ ও প্রশাসন এই কর্মকাণ্ড দেখেও না দেখার ভান করছে।
এমনই এক ঘটনা ঘটেছে উখিয়া উপজেলার কোর্টবাজার-ভালুকিয়া সড়কের বড়ুয়া পাড়া এলাকায়। প্রায় সাড়ে ৭ কানি জমি নিয়ে চলছে বিতর্ক। জমির প্রকৃত মালিক সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক। তবে আইনী জটিলতা এড়াতে জমিটি তার ছেলে রাহাত মালিকের শাশুড়ি ফারজিনা আক্তারের নামে রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু সম্প্রতি ওই জমিতে অন্য লোকের দখলদারিত্ব নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল ওই জমিতে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে, যেখানে ক্রয়সূত্রে মালিক হিসেবে হুমায়ুন কবির নাম দেখানো হয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হুমায়ুন কবির আসলে জাহিদ মালিকের কেয়ারটেকার এবং জমির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। অথচ কাগজপত্র পর্যালোচনা করে হুমায়ুন কবিরের নামের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
মালিকানা বিষয়টি জানার জন্য হুমায়ুন কবিরের নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে মাটি পাচার করা হচ্ছে এবং কৃষিজমি ভরাটের কাজ অব্যাহত রয়েছে। দেশের পট পরিবর্তনের পরও এই পরিবেশ ধ্বংসকারী কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়নি। তারা অভিযোগ করেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও বনবিভাগ নীরব ভূমিকায় রয়েছে।
বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করে সাবেক মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা গফুর উদ্দিন বলেন, তিনি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সাড়ে জমিটির চাষাবাদের দায়িত্বে ছিলেন, কিন্তু মূল মালিক জায়গাটা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকের বেয়াইনকে বিক্রি করায় এখন তিনি আর দায়িত্বে নেই।
এদিকে, জমির সাবেক মালিক আশিষ বড়ুয়া জানান, জমি সংক্রান্ত বিষয়গুলো জাহিদ মালিকের কোম্পানি থাই অ্যালুমিনিয়ামের ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের চিপ এক্সিকিউটিভ অসীম বড়ুয়া দেখভাল করতেন। অসীম বড়ুয়ার সাথে যোগাযোগের একাধিক চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে উখিয়া রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক জানান, বিষয়টি তদন্তাধীন এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
অন্যদিকে, স্থানীয় ছাত্র-জনতা ও সচেতন মহল এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা দাবি করেছেন, যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টি নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পরিবেশ ধ্বংস ও অবৈধ দখলদারিত্বের এই কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা কামনা করেছেন তারা।
এই ঘটনা শুধু উখিয়া উপজেলার স্থানীয় সমস্যা নয়, এটি পরিবেশ ও আইনের লঙ্ঘনের একটি উদাহরণ। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপই পারে এই অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করে পরিবেশ ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করার।
Email : bdworld24net@gmail.com