মুকুল কান্তি দাশ:
২০১৫ সালের ৬ মে রাত ৯টার দিকে গুলি করে কুপিয়ে হত্যা করা হয় পেকুয়ার কলেজ শিক্ষক ফরহাদ উদ্দিনকে। মা রাহেলা মুসতারির সামনে ঘটে ছেলের হত্যাকান্ড। এর কয়েক মাস পরই ছেলে হত্যার শোক সইতে না পেরে স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হন তিনি। এখন অন্যের সাহায্য ছাড়া হাত-পা নাড়াতে পারেন না। ঘরের একটি কক্ষে মৃত্যুর অপেক্ষায় কাটে তাঁর দিনকাল। এর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান এই মা।
এস এম ফরহাদ উদ্দিনের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের আব্দুল হামিদ সিকদার পাড়ায়। তিনি চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি কলেজের গণিত শিক্ষক ছিলেন। ফরহাদের বাবা মোহাম্মদ ইউনুছ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ফরহাদের ছয় ভাই বোন। এদের মধ্যে নাফিসা নূর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
নিহত কলেজ শিক্ষক ফরহাদের বাড়িতে গেলে কথা হয় তাঁর মা রাহেলা বেগমের সঙ্গে। স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হওয়ার পর থেকে স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারেন না তিনি। ভাঙা ভাঙা স্বরে রাহেলা বলেন, ‘আমার ছেলের হত্যাকারীরা একজনও ধরা পড়েননি। চোখের সামনে তাঁরা ঘুরে বেড়ায়। কেউ তাঁদের আটকায় না। মরার আগে হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চাই। আল্লাহ যেন আমাকে সেই পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখেন।’
মামলার কাগজপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৬ মে রাত নয়টার দিকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় কলেজ শিক্ষক এস এম ফরহাদ উদ্দিনকে। ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাফিসা নূর। ঘটনার পর ৮ মে তাঁর বাবা মোহাম্মদ ইউনুছ বাদি হয়ে পেকুয়া থানায় স্থানীয় ছালেহ জঙ্গী ওরফে ছোটন, তাঁর স্ত্রী আসমাউল হোসনা লিপি, ছালেহের ভাই সিরাজুল মোস্তফা, নুরুল আবছার ও তাঁর স্ত্রী শাহেদা বেগম এবং মেয়ে শিরিন জন্নাত আঁখির বিরুদ্ধে মামলা করেন।
দীর্ঘ তদন্তের পর পেকুয়া থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শহীদ উল্যাহ ছালেহ জঙ্গী ও তাঁর স্ত্রী আসমাউল হোসনা লিপির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। মামলার বাদি মোহাম্মদ ইউনুছ না-রাজি দেন। পরে কক্সবাজার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত মামলার সব আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন।
কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারী কৌঁসুলি মোজাফ্ফর আহমদ হেলালী জানান, ‘মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর আদালত মামলাটির রায়ের দিন রেখেছেন।’
মামলার বাদি ও ফরহাদের বাবা মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ‘আমার ছেলেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করার সাত বছর পেরিয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত একজন আসামিও গ্রেপ্তার হননি। সব আসামি চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। বাড়িতে এসে আরও হত্যাকান্ড ঘটাবে বলে আমাদের প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে।’
মোহাম্মদ ইউনুছ কান্নাজড়িত কন্ঠে আরও বলেন, ‘গত সাত বছর থানা ও আদালতে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি। মামলার চার নম্বর আসামি সিরাজুল মোস্তফা প্রতিনিয়ত হুমকির ওপরে রেখেছেন আমাদের। একপর্যায়ে গত ১৩ জুলাই নিরাপত্তা চেয়ে পেকুয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি।
এ ব্যাপারে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরহাদ আলী বলেন, ‘সাধারণ ডায়েরির তদন্ত চলছে। পুলিশ মামলার বাদির সঙ্গে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছে। আসামিদের অবস্থান শনাক্তেও পুলিশ কাজ করছে।’##