রাইতুল রাহাত :
সাগরের তাণ্ডবে সব কিছু হারিয়ে নি:স্ব কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নের পশ্চিম রোমাই পাড়ার মমতাজ বেগম (৫০)। স্বামীর শেষ সম্বল ওই সাগরে বসতভিটা এক দশক আগেই বিলীন হয়েছে। প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ছিলো। সেই মস্তবড় গ্রামটি বিলীন হয়ে এক কোনে মাত্র কয়েকটি বসতভিটা আছে। ওখানেই দুই চালা ঘর করে খেয়ে, না খেয়ে পড়েন সাগরপাড়ে। অভাবের সংসারে পরিবারের একমাত্র ছেলে রিকশা চালক। সেই শত চেষ্টা করেও নতুন বসতভিটা নিতে পারছেন না। তাই সাগরপাড়েই ছোট্ট বসতঘর করে কোন রকম জীবন-যাপন করছেন। আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের সাইট পাড়ার বৃদ্ধা জানুয়ারা বেগম (৭৫) বলেন, গত অমাবস্যার জোয়ারে স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত বসতভিটা সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে। এতদিন ছোট্ট ঘর করে সাগরপাড়ে স্বামীর শেষ স্মৃতি বসতভিটাও রক্ষা করতে পারেনি। দিনভর কপালে হাত দিয়ে সাগরের দিকে তাকিয়ে স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত বসতভিটার কথা মনে করে দু’চোখে অশ্রু টলটল করছিল। পরিবার - পরিজনহীন এই নারীর নেই কোনো সহায়সম্বল, নেই সরকারি সহায়তা কিংবা নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। সাগরের প্রতিকূলে প্রতিনিয়ত লড়াই করে টিকে থাকার এই সংগ্রামী নারী আক্ষেপ করে বলেন, তাদের আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই! সোহাগ খাতুন, বিবি আয়েশা, হাজেরা বেগম, মোস্তফা বেগম, আয়েশা বেগম ও খোরশিদা বেগমসহ অনেকেই বলেন, প্রতি বর্ষায় তাদের বাড়ীঘর সরাতে হয়। মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও নিরাপদ নয়। ভাঙাগড়া নিয়ে প্রতিবছর তাদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বুধবার বিকেলে সরেজমিনে কুতুবদিয়া উপজেলার সাগরপাড়ের বাসিন্দারা এভাবেই অস্তিত্ব হারানো সাগরের প্রতিকূলে টিকে থাকার কথা এ প্রতিবেদককে জানান। শুধু ওই দুই ইউনিয়ন নয়, গত অমাবস্যার জোয়ারে দ্বীপ জুড়ে সাগরপাড়ে ৩ শতাধিক বসতঘর এভাবে সাগরগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব বাসিন্দারা এখন আর কারো সান্ত্বনার বাণী শুনতে চান না। সাগরের এ আগ্রাসন থেকে বাঁচতে টেকসই বেড়ীবাঁধ চায়। বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মালেক বলেন, গত অমাবস্যার জোয়ারে ২০-২৫টি বসতবাড়ি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। আগামী পূর্ণিমার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই স্থানে কোন ব্যবস্থা না নিলে আরও ৩০-৪০টি বসতবাড়ি বিলীন হওয়ার আশংকা করেন। তিনি আরও বলেন, জোয়ারের তাণ্ডবে মানুষের বসতবাড়ি, রাস্তা বিলীন এবং বিদ্যুৎ সংযোগের খুঁটিও পড়ে যাওয়ার কথা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তারা এখন পর্যন্ত বসতবাড়ি হারানো অসহায় মানুষদের খোজখবর নেয় নি বলে জানান তিনি। কুতুবদিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী সুভাষ কান্তি চৌধুরী বলেন, অমাবস্যার জোয়ারে ওই এলাকায় বেড়ীবাঁধ বিলীন হওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগের খুঁটি পড়ে গেছে। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান। এদিকে জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতি গ্রস্ত বেড়ীবার্ধ এর কাজ করতে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানান উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী এলটন চাকমা। উপজেলা সহকারী (ভুমি) কমিশনার ও বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ সাদাত হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে সাগর পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে, ইউনিয়ন পরিষদে আলাদা কোন বরাদ্দ নেই।