কক্সবাজার, বাংলাদেশ | ১২ নভেম্বর ২০২৫:
– “দায়িত্বশীল পর্যটন: চর্চা, শাসন ও অংশীদারিত্ব” শীর্ষক জাতীয় সেমিনার আজ ওশান প্যারাডাইস হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উপকূলীয় গন্তব্য কক্সবাজারে টেকসই পর্যটনের ভবিষ্যৎ গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) *“ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিজ ফর উইমেন অ্যান্ড ইয়ুথ ইন কক্সস বাজার (ISEC)”* প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত এবং *এনরুট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড* কর্তৃক বাস্তবায়িত এই সেমিনারটি *গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা*-এর সহায়তায় অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে নীতি-নির্ধারক, বেসরকারি খাতের নেতা, পর্যটন পেশাজীবী এবং স্থানীয় প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন, যাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জলবায়ু সহনশীল পর্যটন বিকাশের পথ নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত সচিব নুজহাত ইয়াসমিন* উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “পর্যটনের বিকাশ প্রকৃতির ক্ষতির বিনিময়ে হতে পারে না। আমাদের লক্ষ্য হলো এমন গন্তব্য তৈরি করা যা হবে টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশ-সমন্বিত।”
*যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মঈজ্জেম হোসেন* বলেন, কক্সবাজারে নারী ও যুবদের পর্যটন সংশ্লিষ্ট দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোকে প্রশিক্ষিত তরুণ-তরুণী নিয়োগ এবং সম্মানজনক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
সেমিনারে দুটি উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যা শিল্প বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অর্থবহ সংলাপের সুযোগ তৈরি করে।
প্রথম অধিবেশনের শিরোনাম ছিল *“Empowering Women and Youth through Decent Work and Inclusive Growth in the Tourism Sector”, যেখানে **শেয়ারট্রিপের সিইও সাদিয়া হক, **কক্সবাজার উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জাহানারা ইসলাম, এবং **দ্য ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ* বক্তব্য রাখেন। তাঁরা পর্যটনকে একটি সম্মানজনক ও লিঙ্গসমতা-বান্ধব পেশা হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা এবং নারী উদ্যোক্তাদের সফলতা তুলে ধরার আহ্বান জানান।
দ্বিতীয় অধিবেশনের বিষয় ছিল *“Building Climate-Resilient Destinations: Policy, Innovation, and the Future of Responsible Tourism”, যেখানে **ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শোয়েবুর রহমান* এবং *রাখাইন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতি মং আয়ে খেন* অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা বলেন, স্থানীয় ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জ্ঞান ও অভিযোজনমূলক অনুশীলনগুলো টেকসই পর্যটন শাসনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
*আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনন* বলেন, আইএলও কক্সবাজারে এমন একটি পর্যটন খাত গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং স্থানীয় জনগণকে ক্ষমতায়ন করবে।
*এনরুট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু দাউদ খান* বলেন, সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা ছাড়া টেকসই পর্যটন ব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বশীল উদ্যোক্তা উন্নয়ন সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে *“Safe Entry” নামের হোটেল সেফটি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারটি কক্সবাজার জেলা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়, যা পর্যটন নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। এই হস্তান্তর কার্যক্রম পরিচালনা করেন **আইএলও’র ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম. নবীদ আকবর*।
এছাড়াও, অনুষ্ঠানে *“Destination Development Plan for Cox’s Bazar”* বইটির প্রচ্ছদ উন্মোচন করা হয়। উন্মোচন করেন *বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের সিইও নুজহাত ইয়াসমিন* ও *আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনন*।
দিনব্যাপী সেমিনারে আরও ছিল নারী ও যুব উদ্যোক্তাদের তৈরি পরিবেশবান্ধব আতিথ্যসেবা, স্থানীয় হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং কক্সবাজারের গন্তব্য-ভিত্তিক অভিজ্ঞতা প্রদর্শনী। অনুষ্ঠানটি একটি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার মাধ্যমে শেষ হয়, যেখানে স্থানীয় ঐতিহ্য ও প্রতিভা উদযাপিত হয়।