বিডি প্রতিবেদক :
মহিষ চুরির মামলায় কক্সবাজারের চকরিয়ার সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী ওরফে নইব্যা চোরাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আবুল মনসুর সিদ্দিকী তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানাযায়, মহেশখালীর কুতুবজোমের তাজিয়াকাটার মৃত দুদু মিয়ার ছেলে এবাদুল হক ২০২১ সালের ৫ জুন চকরিয়ার শাহারবিল এলাকার মৃত হাবিবুর রহমান ওরফে হাইব্যা চোরার ছেলে নবী হোসেন চৌধুরী ওরফে নইব্যা চোরা তার ভাই লেদু মিয়াসহ ৯জনকে মহেষ চুরির অভিযোগে আসামী করে মহেশখালী থানায় মামলা করেন (৬/২০২১)। এতে উল্লেখ করা হয়, এবাদুল হকের পরিবারে ১৮টি মহিষ রয়েছে। তা তাজিয়াকাটায় খামারে রাখা হয়। ২০২১ সালের ৪ জুন ভোররাত ২টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত তার খামার হতে চারটি মহিষ নিয়ে ইঞ্জিন বোটে তুলে নদী পথে এলাকা ত্যাগ করে। তাদের পেছনে বোট নিয়ে এসে দেখতে পান চোর চক্র চকরিয়ার চোরারফাড়ি ঘাটে বোট নোঙর করে মহিষগুলো নিয়ে পাড়ায় ঢুকে পড়ে। একপর্যায়ে তারা মহিষগুলো একটি বাড়িতে ঢুকিয়ে পেলে। এবাদুল নদীর ঘাট হতে তাদের পেছন পেছন গিয়ে সকল দৃশ্য কৌশলে ভিডিও ধারণ করে। পরে স্থানীয় লোকজনকে ভিডিও দেখিয়ে বাড়িটি নবী হোসেন ওরফে নইব্যা চোরার বলে সনাক্ত করার পর চোরদের তথ্য সংগ্রহ করে মামলা করেন। সেই মামলায় কারান্তরিণ আসামী বোট চালক আবুল হাশেম নামে একজন ঘটনায় নবী হোসেন ওরফে নইব্যা চোরার সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ দেন। তখনই উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেন নবী হোসেন। সেই জামিনের সময় শেষ হলে বিগত ১৩ ডিসেম্বর নিম্ম আদালতে জামিনের আবেদন করেন মামলার প্রধান আসামী নবী হোসেন।
সূত্র আরো জানান, ১৫ ডিসেম্বর সেই আবেদন শুনানী করা হয়। জামিন প্রার্থি আসামীর পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবীর আবেদনে রাষ্ট্রপক্ষের এপিপি জামিনের বিরোধীতা করেন। হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ, মামলার মূলনথি ও অন্যান্য কাগজাত পর্যালোচনান্তে, জামিন প্রার্থি আসামীর বিরুদ্ধে আঘাত, আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ পূর্বক রাত্রিবেলায় সংগোপনে অনধিকার প্রবেশ করতঃ মহিষ চুরির অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ তদন্তে প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হওয়ায় পুলিশ রিপোর্ট দাখিল হয়েছে। মামলায় ইতিপূর্বে অপর আসামী আবুল হাশেম অত্র (নইব্যা চোরা) আসামীকে ঘটনায় জড়িত স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। অত্র আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হয়। অধিকন্তু আসামীকে সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের মিস্ মামলায় আগাম জামিন প্রদানে সম্মত নন উল্লেখে অত্র' আদালতে আত্মসমর্পন করার নির্দেশনা দেন। এ পর্যায়ে আসামী জামিন পেলে বিচার কার্য ব্যাহত হতে পারে মর্মে আদালতের প্রতীয়মান হয়। সার্বিক পর্যালোচনায় আসামী নবী হোসাইন চৌধুরী ওরফে নইব্যা চোরার জামিনের আবেদন না-মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হলো।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, নবী হোছাইন চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতার তকমায় চলেন। তার বিরুদ্ধে গরু চুরির মামলাও রয়েছে। এলাকায় তাকে 'নইব্যা চোরা' হিসেবে সম্বোধন করেন লোকজন। চকরিয়া, লামা, আলীকদম, লোহাগড়া,সাতকানিয়া, পেকুয়া, বাঁশখালী, কক্সবাজারের অন্যসব উপজেলার আতংক 'নইব্যা চোরা'র চক্র। কক্সবাজারসহ আশপাশের তিনজেলা দাপিয়ে বেড়ান তার চক্র, এমনটি অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। তার চক্রের সদস্যরা প্রায় প্রতিরাতে কোন না কোন এলাকা হতে গরু-মহিষ চুরি করে চকরিয়ার সাহারবিল এলাকার নবী হোসেনের 'ডেরায়' এনে মজুদ করেন। বছর দুয়েক আগে গরু চুরি করে কক্সবাজার হতে চকরিয়া ফেরার পথে মহাসড়কের খুটাখালী এলাকায় দু'যুবক গণপিটুনিতে মারা যান। তারা দুজনই নবী হোসেন গ্রুপের সদস্য এবং এদের একজন নবী হোসেনের নিকটাত্মীয় বলে সেসময় পরিচয় প্রকাশ পায়।
এতসবের পরও গত ইউপি নির্বাচনে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরই মাঝে মহেশখালী হতে বেশ কিছু মহিষ চুরি করে আনে তার চক্র। সেই ঘটনায় মামলা করেন চুরি যাওয়া মহিষের মালিক মহেশখালীর বাসিন্দা। এরপর তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালতের জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তিনি নিম্ম আদালতে হাজির হয়ে জামিন চান। কিন্তু বিচারক জামিন না মনজুর করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।