এম বশির উল্লাহ.মহেশখালী :
কক্সবাজার উপকূলে তপ্তরোদে মাঠে কৃষকদের উৎপাদিত ক্ষেতের গর্তে মজুদকৃত লবণের বেচাবিক্রি হঠাৎ বেড়ে প্রাণ ফিরেছে সাদাসোনাখ্যাত লবণ শিল্পে।
১ মাস আগেও প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছে ২৫০-২৮০ টাকায়। ঈদুল আজহার পর থেকে প্রতি মণ লবণের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ বর্তমানে প্রতি মণ লবণ মাঠ পর্যায়ে চাষিদের খরচবাদ দিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি লবণের দাম পড়ছে ৮ থেকে ৯ টাকা, যা আগে বিক্রি হয়েছিল ৫ থেকে ৬ টাকায়। কিন্তু বিসিক বলছে চাষিদের খরচ বাদ দিয়ে লবণের দাম প্রতিমণ ৩৩০ টাকা থেকে ৩৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে বাজারে আয়োডিনযুক্ত প্যাকেটজাত লবণ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়।
চাষি নুরুল হোসেন বলেন, এক দশক ধরে চাষিরা প্রতি কেজি লবণ বিক্রি করেন তিন থেকে ছয় টাকায়। হঠাৎ করে লবণের দাম বাড়ায় চাষিরা খুশি। এত দিন লোকসানের অভাবে ফেলে রাখা লবণ বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা। মাঠ থেকে ট্রাক বোঝাই করে বিপুল পরিমাণ লবণ সরবরাহ করা হচ্ছে চট্টগ্রাম, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
তবে বিসিক জানায়, লবণ উৎপাদনের মৌসুম না হলেও এখন দেশে লবণের সংকট নেই। সরজমিন দেখা যায়, মহেশখালীর কালারমারছড়া, মাতারবাড়ী, ধলঘাটা, কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নে,চকরিয়ার বদরখালী, পেকুয়ার রাজাখালীতে প্রতি কেজি লবণ পাইকারিতে ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মহেশখালী দ্বীপের চাষি হেলাল উদ্দিন বলেন, গত মার্চ মাসে মাঠে উৎপাদিত প্রতি মণ লবণ তিনি বিক্রি করেছিলেন ২০০ টাকায়। প্রতি মণ লবণ উৎপাদনের বিপরীতে তাঁর খরচ হয়েছিল ২১০ টাকা। লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি না করে তিনি তখন কয়েক’শ মণ লবণ মাটির নিচে পুঁতে (মাটিচাপা) রাখেন। এখন সেই লবণ প্রতি মণ ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে তিনি জানান জেলার বিভিন্ন মোকামে মনপ্রতি লবণ ৩৪০ টাকা দামে বিক্রি হলে ও দালাল সিন্ডিকেটের কারসাজিতে তারা লবণের নায্যামূল্য পাচ্ছেনা।
বিসিকের দেওয়া তথ্যমতে, গত মৌসুমে (১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৮ মে পর্যন্ত পাঁচ মাস) কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও এবং বাঁশখালী উপজেলার ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৩১ হাজার ৯৩১ মেট্রিক টন। এবার লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন ধরা হয়েছিল জানিয়ে বিসিক কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল বলেন, মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লবণের বাম্পার উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু মৌসুমের শেষ দিকে এপ্রিল-মে মাসে কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হওয়ায় ২০ থেকে ২৫ দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ ছিল। তাই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে এ কারণে দেশে লবণের সংকট হবে না। বর্তমানে মাঠে চাষিদের কাছে ও গুদামে আছে সাড়ে পাঁচ লাখ টন লবণ। এই লবণে আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলে যাবে। ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার উপকূলে নতুন করে শুরু হবে লবণ উৎপাদন।
বিসিক কর্মকর্তারা বলছেন, গত মৌসুমের শেষ মুহূর্তে (এপ্রিল-মে) বাজারে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছিল ২৫০-২৮০ টাকায়। এখন সেই লবণ বেচাবিক্রি হচ্ছে ৩৩০-৩৪০ টাকায়।
মহেশখালী কুতুবদিয়া সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক জানান, ইতিমধ্যে শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহেশখালী সহ কক্সবাজার উপকূলের লবণ চাষিদের আহাজারির কথা জানানো হয়েছে। বাইরের লবণ আমদানি বন্ধ হওয়ার কারণে লবণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই লবণ শিল্পে প্রাণ ফিরেছে, বলেই লবণ চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।