বিডি প্রতিবেদক উখিয়া :
কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালীতে তিনটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজার ঘরবাড়ি সম্পুর্ন পুড়ে গেছে। আজ রবিবার বিকেল তিনটার দিকে প্রথমে ১১ নম্বর ক্যাম্পের বি ও ই ব্লকে এই আগুন সুত্রপাত হয়। পরে পার্শ্ববর্তী ১০ ও ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন ৩ ঘন্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কক্সবাজার স্টেশনের উপ সহকারি পরিচালক অতীশ চাকমা। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট কাজ করে।
তিনি জানান, ৬ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসা সম্ভব হয়েছে। তবে আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
তিনি জানান, আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষত-ক্ষতি নির্ধারণে কাজ চলছে। তা বলতে সময় লাগবে।
রোববার বিকাল ৩ টার দিকে বালুখালীর ১১ নম্বর ক্যাম্পের বি বøকের একটি ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন মূহুর্তের মধ্যে ৯, ১০, ১২ নম্বর ক্যাম্পে সরিয়ে পড়েছে।
উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের ১০ টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ পর্যন্ত ২ হাজারের কাছা-কাছি ঘর পুড়ে গেছে বলে ধারণা করা হলেও তা নিশ্চিত করে বলতে সময় লাগবে। এ পর্যন্ত কোন হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।
৮ এবিপিএন এর সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, ৩ টার দিকে হঠাৎ করে আগুন দেখা যায়। কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ক্যাম্পের ঘরগুলো পাশাপাশি হওয়ায় আগুন ১২, ১১, ১০ ও ৯ নম্বর ক্যাম্পে সরিয়ে পড়েছে। আগুনের সূত্রপাত কি কারণে তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও সন্দেহজনক এক যুবকে আটক করেছে এপিবিএন ও পুলিশ। আটক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
ঘটনাস্থল থেকে অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা জানিয়েছেন, প্রাথমিক অবস্থায় ২ হাজারের মত ঘর পুড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুনের কারণ এখন বলা যাচ্ছে না। হতাহতের কোন তথ্যও পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ২ হাজার ঘর, ২২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৩৫ টি মসজিদ, বিভিন্ন এনজিও সংস্কার, স্কুল, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র সহ ৫২ টি ।
কক্সবাজারের শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান ১১ নম্বর ক্যাম্পের একটি বাড়ির রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সুত্রপাত হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তিনি জানান আগুন লাগার সাথে সাথে উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের দুটি টিম পরে কক্সবাজার শহর রামু টেকনাফে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিসের ১০ টি টিম আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। তিনি জানান ক্যাম্পের প্রতিটি বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার রয়েছে। আগুনে এসব গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হওয়ায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়। অগ্নিকাণ্ডে এসব ক্যাম্পের দুই হাজার ঘরবাড়ি সম্পুর্ন পুড়ে গেছে এবং ২২ হাজার বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ প্রতাপাসন কমিশনার মিজানুর রহমান নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে না দিয়ে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে নাশকতার অভিযোগে সন্দেহবাজন একজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ক্যাম্পের এই আগুনকে পরিকল্পিত নাশকতা বলেছেন রোহিঙ্গারা। ওই ক্যাম্পের ক্ষতিগ্রস্থ বাসিন্দা আবলু কামাল, আবদুল গফুর ও শামসুল আলম জানিয়েছেন, আরসা সন্ত্রাসীরা এ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
১১ নাম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা, রফিকুল ইসলাম ও কলিমুল্লাহ জানিয়েছেন, শনিবার রাতে, ও রবিবার সকালে কয়েকটি ছোটখাট ঘটনা ঘটেছে আমাদের ক্যাম্পে। কয়েকজন ছেলেকে আগুন দিতে গিয়ে স্থানীয়রা দৌড়ানি দিয়েছে, তখন তারা পালিয়ে যায়। উক্ত দুই যুবক জানান, আমরা আশঙ্কা করছি সন্ত্রাসীরাই আগুন দিয়েছে আমাদের ক্যাম্পে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানান, অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি দেখার জন্য আমি নিজে এসেছি। আমরা দেখছি কি কারণে আগুন লেগেছে। কি কারনে আগুন লেগেছে এবং ক্ষয়ক্ষতি কি হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শরণার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহ হারা
মানুষগুলোর মাঝে রাতে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, একই ক্যাম্পে ২০২১ সালের ২২ মার্চ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা হয়ে ছিল। ওই সময় ১১ জনের মৃত্যু, ৫ শতাধিক আহত হয়। পুঁড়ে গিয়ে ছিল ৯ হাজারের বেশি ঘর।