মিয়ামারের অভ্যন্তরীন ত্রিমুখী সংঘর্ষে এবার অস্থির হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্ত। সেদেশ থেকে ছোড়া গুলি এসে বাংলাদেশের বাড়িঘর ভেদ করে। এতে অল্পের জন্য প্রানে বঁাচে দুটি পরিবার। দিনে কম হলে ও রাতে বেড়ে যায় গুলির শব্ধ। শনিবার সকালে ও দুপুরে একাধিক এলাকায় গুলির শব্দ শোনার কথা জানয় এলাকার লোকজন।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারী) ভোর ৬ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মাঝের পাড়া গ্রাম সংলগ্ন সীমান্ত ঘেষে মিয়ানমারের কুমির খালীতে এ ঘটনা ঘটে।
গ্রামবাসী থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, শনিবার ভোরে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেষা গ্রামে কুমিরখালীতে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। ওইসময় মর্টার শেলের বিকট শব্দে হোয়াইক্যংয়ের এপারের গ্রামগুলো কেঁপে উঠে। একই সময়ে ওপারের গোলাগুলি বুলেট মাঝেরপাড়া গ্রামের হাজী আফসারের
জানালা ভেদ করে বসতঘরে পড়ে। আরেকটি বুলেট একই এলাকার
মনোয়ারার টিন ভেদ করে ভেতরে ঢুকে পড়ে।
অল্পের জন্য রক্ষা পায় পরিবার দুটি। এ ছাড়া অপর একটি মার্কেটেও একটি বুলেট এসে পড়ে।
হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, ভোরে ওপারে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। এই সময় আমাদের গ্রামে অনেকগুলো বুলেট এসে পড়ে। এতে কেউ হতাহত না হলেও গ্রামবাসী ভয়ে ও আতংকে রয়েছে।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ভোরে মিয়ানমারের কুমিরখালী সীমান্তচৌকির কাছে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এপারের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল ও উনচিপ্রাং এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গুলি এসে পড়েছে। এ সময় কেঁপে ওঠে এপারের বসতবাড়ি। সকালে কয়েকটি বাড়ির উঠানে গুলি পাওয়া গেছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
উনছিপ্রাং সীমান্তের স্থানীয়দের দাবি, ওপারে ঢেঁকিবুনিয়া এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ঘাঁটিগুলো দখল করার পর আরাকান আর্মি ও অন্যান্য বিদ্রোহীরা টেকনাফ অংশে মিয়ানমারের শহর শীলখালী, বলিবাজার ও কুইরখালী দখল নিতে এই হামলা করছে।
উনছিপ্রাং এলাকার বাসিন্দা তাহের ,নাঈমুল হক ও রফিক জানান, সকাল থেকে কুমিরখালীর ঘাঁটি দখল নিতে বিদ্রোহীরা হামলা করছে। মর্টার শেলের বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ও আগুনের ফুলকিও দেখা যায়। বোমা যখন বিস্ফোরণ হয় তখন ভূমিকম্পের মতো অনুভূত হয়।
হোয়াইক্ষং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারী বলেন,শনিবার সকাল থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলা গৃহযুদ্ধের গুলাগুলির বিকট শব্দ শুনা যায়। স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। হয়তো উনছিপ্রাং সীমান্তের কাছাকাছি মিয়ানমারের শহর কুমিরখালী দখল নিতে এই হামলা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত গুলাগুলি হয়েছিল। দিনে কিছুটা শান্ত ছিল। শনিবার সকাল থেকে নতুন করে আবারো গুলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।
বিজিবির একটি সূত্র জানিয়েছে,
মিয়ানমারের কুমার খালী ও বিলাই চাড় দ্বীপে গুলাগুলি ও ফায়ারিংয়ে ঘটনা ঘটেছে। সেইখানে বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে নবী হোছন গ্রুপের সাথে এ গুলাগুলি হয়। নবী হোছন গ্রুপ বাংলাদেশের সীমানা ঘেঁষে আশ্রয় নেওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
হোয়াইক্যং বিওপির কোম্পানি কমান্ডার আবু জানান, গুলাগুলির শব্দ ও কয়েকটি বুলেট এপারে এসেছে বলে শুনেছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ওপারের বুলেট এপারের গ্রাসবাসীর ঘর ভেদ করেছে বলে শুনেছি। তবে অন্য একটি জরুরী কাজে টেকনাফে বাইরে থাকায় যেতে পারিনি। কিন্তু সীমান্তের লোকজনকে সতর্ক থাকার জন্য আগে থেকে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।
এবিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো.আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীন সংঘর্ষের কারনে ঘুমধুম, উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত বেশ কয়েকদিন ধরে অস্থির। প্রথমদিকে টেকনাফ সীমান্ত স্বাভাবিক থাকলেও গেল দুই একদিন ধরে এখানকার সীমান্ত ঘেষে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ভোরে কিংবা রাতে গোলাগুলি হয়। শনিবার ভোরে অন্যদিনে৷র চেয়ে বেশি হয়েছে। এতে কয়েকজন গ্রামবাসীর ঘরে বুলেট বিদ্ধ হয়।
তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামবাসীকে সতর্ক ও প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া রয়েছে।