বিডি প্রতিবেদক :
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে নির্বাচনে ৭ প্রার্থী থাকলেও এখন পর্যন্ত সাধারণ ভোটারদের যত হিসাব-নিকাশ বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহিন আক্তার এবং স্বতন্ত্রের আবরণে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মো: নুরুল বশরকে ঘিরে। পছন্দের প্রার্থীকে বেঁচে নিতে হাতে সময় আছে আর মাত্র ১০ দিন।
দুই হেভিওয়েট প্রার্থী মাঠে গণসংযোগের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে টানার রীতিমত প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন। এক কথাই দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ভাগে নিতে মরিয়া হয়ে পড়েছে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী। আবার নিজ দলের দুই প্রার্থীকে ঘিরে অনেকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছেন। সাধারণ নেতাকর্মীদের অনেকে নির্বাচনে কোন প্রার্থী বিজয়ী করবেন তা নিয়ে পড়ে গেছেন দোটানায়।
কারণ এ মুহূর্তে সিদ্ধান্তে ভুল করলে পরে রাজনীতিতে মাশুল দিতে হবে বেশি। তাই কোন দিকে পা বাড়াবেন তা নিয়ে তারা কৌশলী ভূমিকা নিচ্ছেন। আবার এ দুই প্রার্থীকে ঘিরে আওয়ামী লীগের অনেকে আপাতত নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন।
উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির স্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার এবার কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে পেয়েছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা। এ আসনে শাহীন আক্তারের স্বামী আবদুর রহমান বদি (২০০৮ ও ২০১৪) সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়ে ছিলেন।
স্বাভাবিকভাবে এবারও সাধারণ ভোটারেরা মনে করেছিলেন তাকেই আওয়ামী লীগ সমর্থন দেবে। কিন্তু এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেছে। আইনি জটিলতার কারনে আবদুর রহমান বদি নির্বাচন করতে না পারার কারনে তার ইচ্ছে বা চাহিদা অনুযায়ী গতবারের মতো এবারও তার স্ত্রী শাহিন আক্তার হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে আবদুর রহমান বদি এবার সহ টানা ৪ বার নৌকা প্রতীক তার পরিবারের দখলের রেখে দিতে সক্ষম হয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মো: নরুল বশর। তার প্রতীক ঈগল। টেকনাফ উপজেলায় তার রয়েছে ব্যাপক নিজস্ব কর্মী-সমর্থক। টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ মূল অঙ্গ সংগঠন গুলো ঈগল প্রতীক তথা আলহাজ্ব মো: নুরুল বশরকে সমর্থন দিয়ে তার পক্ষেই কাজ করছেন। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকায় শাহীন আক্তারের সাথে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ মূল অঙ্গ সংগঠনের বেশিরভাগ নেতার সমর্থন রয়েছে। তারা নৌকা প্রতীক তথা শাহিন আক্তারের পক্ষে কাজ করছেন।
তবে শাহিন আক্তার বর্তমান এমপি হওয়ার পরও গত ৫ বছর এলাকায় না থাকার কারণে আলহাজ্ব মো: নুরুল বশরের মতো তৃণমূলে তার (শাহিন আক্তারের) কর্মী-সমর্থক তুলনামূলক কম এবং সৃষ্টিও হয়নি। কিন্তু শাহিন আক্তারের স্বামী সাবেক সংসদ আবদুর রহমান বদির মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি রয়েছে। এছাড়াও এলাকায় আবদুর রহমান বদি একজন দানবীর হিসাবে সমাদৃত ও প্রচার রয়েছে। তাই স্থানীয় ভোটারদের মতে, উখিয়া-টেকনাফ আসনে এ দুই প্রার্থীর মধ্যে হাডা-হাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
তাছাড়া উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিজের কাছে টানতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন এ দুই প্রার্থী। মাঠে গণসংযোগের চেয়ে তারা দলীয় কর্মীদের নিজের পক্ষে নিতে সময় ব্যয় করছেন বেশি। কিন্তু উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা কর্মীরা সম্পূর্ণ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ আলহাজ্ব মো: নুরুল বশরের পক্ষে ভোটের মাঠে কাজ করছে। আর উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকর্মী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন আক্তারের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছে।
গত তিন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে আবদুর রহমান বদি ২ বার ও শাহিন আক্তার ১বার খুব সহজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে স্বামী-স্ত্রী টানা ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এবার শাহিন আক্তারকে বেশ বেগ পেতে হবে বলে জানিয়েছেন সাধারণ ভোটারেরা। এ কারণে ভোটারদের মাঝে শাহিন আক্তারকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে খুবই কম। ইতোমধ্যে দুই প্রার্থী পড়ায় মহল্লায় ও বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে প্রস্তুতিসভা ও মতবিনিময় করছেন।
উখিয়া-টেকনাফ আসনে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন, এরা হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশর (ঈগল), আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার (নৌকা), জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো (লাঙল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুল আলম (আম), তৃণমূল বিএনপির মুজিবুল হক মুজিব (সোনালী আঁশ), ইসলামি ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরি (মিনার), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ ইসমাইল (ডাব)।
নির্বাচনে এখনও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মো: নুরুল বশর ও জাতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার ভূট্টোর ছাড়া অন্য প্রার্থীরা এখন পর্যন্ত পোস্টারও বের করেননি। চোখে পড়ছে না তাদের প্রচারের মাইকিং ও গণসংযোগ।
জাতীয় পাটির মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার ভূট্রোও মাঠে চষে বেড়াচ্ছে নির্বাচনী মাঠে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোট লড়াইয়ে টিকে থাকতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন তিনি। তবে সাংগঠনিক অবস্থার কোন ভিত্তি না থাকায় তিনি এখনও মাঠ দখলে নেওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেননি।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭১জন। এর মধ্য ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৪১ পুরুষ, ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮২৮ নারী এবং ২ জন হিজড়া ভোটার রয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ের মাধ্যমে সাধারণ ভোটারগণ কাকে বেঁচে নেবে সীমান্ত জনপদ উখিয়া-টেকনাফের প্রতিনিধিকে।
