বিডি প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের ঈদগাঁওর জালালাবাদে টমটম (ইজিবাইক) চালকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধারের ক্লু-লেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাব-১৫’র সদস্যরা। এসময় আলামত উদ্ধারের পাশাপাশি হত্যাকান্ডের মূল অভিযুক্তসহ অটো রিকশা ছিনতাইয়ের সংঘবদ্ধ চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রধান অভিযুক্তকে কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়া এবং তার সহযোগী অপরজনকে পিএমখালী হতে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-১৫’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী। শনিবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, কক্সবাজারের ঈদগাঁওর জালালাবাদ ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মিয়াজিপাড়ার আবদু শুক্কুরের ছেলে মোরশেদ আলম(৩১) এবং তার সহযোগী কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীর চৌধুরীপাড়ার ছগির আহমদের ছেলে মো. শাহ আলম (৪২)।
র্যাব-১৫’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টায় ঈদগাঁওর জালালাবাদের মিয়াজি পাড়ার সুপারি বাগান থেকে অজ্ঞাত যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ক্লু-লেস এ হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে র্যাব-১৫ তদন্ত কার্যক্রম এবং গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। এক পর্যায়ে নিহত ব্যক্তি চৌফলদন্ডীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ পাড়ার শামসুল আলমের ছেলে মোরশেদ আলম (২০) বলে পরিচয় মিলে। ভিকটিম মোরশেদ পেশায় অটো-রিকশা (টমটম) চালক।
তিনি আরো বলেন, ঘটনা সূত্রে প্রকাশপায় ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ভিকটিম মোরশেদ আলম অন্যান্য দিনের মত নিজের অটোরিকশা নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি ভিকটিমের রক্তাক্ত মরদেহ সুপারি বাগানে মিলে। কিন্তু ঘটনাস্থলে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং অটোরিকশাটি পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় এটি একটি সংঘবদ্ধ অটো রিকশা ছিনতাই চক্র কর্তৃক সংঘটিত হত্যাকান্ড।
র্যাব-১৫ ঘটনায় সম্পৃক্তদের গ্রেফতারে বিভিন্ন কৌশলাদি অবলম্বনসহ এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। পরবর্তীতে আভিযানিক দল গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে কক্সবাজার পৌরসভা ৪নং ওয়ার্ড উত্তর টেকপাড়া জনতার সড়কে জনৈক বোরহান উদ্দিনের ভাড়া বাসা হতে মোরশেদ আলমকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এসময় তার কাছ হতে৷ নিহত ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল সেটটিও উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে তার সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য সহযোগীদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন রাত সাড়ে ৮টায় দিকে সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের পশ্চিম মুহসিনিয়া পাড়া হতে শাহ আলম (৪২)কে গ্রেফতার ও ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১৫’র কর্মকর্তা আবু সালাম চৌধুরী ধৃতদের বরাত দিয়ে আরো জানায়, গ্রেফতারকৃত মোরশেদ অটো-রিকশা ছিনতাইকারী চক্রের দলনেতা। বিভিন্ন সময়ে মোরশেদ ও তার সহযোগী ছিনতাই চক্রের সদস্যরা কক্সবাজার শহর এবং আশপাশ এলাকার অটো-রিকশা ভাড়ার কথা বলে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করতঃ সর্বস্ব লুটে নেয় এবং ছিনতাইকৃত অটোরিকশা অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তারা ভিকটিম মোরশেদ আলমের অটো-রিকশাটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ভাড়া নেয়। পরবর্তীতে ভিকটিমকে হত্যা পূর্বক অটো-রিকশা ও ভিকটিমের মোবাইল ফোন ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর হতে এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীরা গ্রেফতার এড়াতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে চলে যায়।
উল্লেখ্য, প্রাথমিকভাবে নিহত ভিকটিমের পরিবারের ধারনা ছিল জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিবেশী কেউ শত্রুতা মূলকভাবে হত্যা করতে পারে এবং এই সংক্রান্তে কতিপয় ব্যক্তিকে বিবাদী করে ভিকটিমের পরিবার ঈদগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মোরশেদ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে বর্ণিত হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হলো। তাদেরকে ঈদগাঁও থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।