বিডি প্রতিবেদক :
বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ অর্জন করেছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম। মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে তাকে এ পদক পরিয়ে দেয়া হয়। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম বিগত ২০০৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন। গত ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন কক্সবাজারে।
পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল যানবাহন চালক ও গাড়ির স্মার্ট ডাটাবেস ‘কক্স-ক্যাব’ এর উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানতম পর্যটন শহরে নিরাপদ ও পর্যটন-বান্ধব স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন।
প্রেক্ষাপটঃ বাংলাদেশের প্রধানতম পর্যটন স্পট পৃথিবীর দীর্ঘতম বালিয়াড়ি সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিদিন লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজারে আসেন। পর্যটকদের জন্য উন্নতমানের হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট সহ নানা অবকাঠামো তৈরী হলেও কক্সবাজার পর্যটন এলাকায় পর্যটন বান্ধব, উন্নত ও নিরাপদ যানবাহন সুবিধা এখনো তৈরি হয়নি।
কক্সবাজার পৌর এলাকায় রিক্সা, পৌরসভার নিবন্ধিত ৩হাজার ইজিবাইক(টমটম), ৩হাজার সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, শতাধিক ট্যুরিস্ট জীপ, শতাধিক কার-মাইক্রো-মিনিবাস চলাচল করে থাকে। কার-মাইক্রো-বাস-মিনিবাসের চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিশ্চিত করা গেলেও পর্যটন এলাকায় চলাচলরত যানবাহনের সিংহভাগের অর্থাৎ ৮সহস্রাধিক রিক্সা-টমটম-ইজিবাইক চালকদের কোন তথ্য ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সরকারি কোন সংস্থার কাছে নেই।
তাছাড়া কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া ১২লক্ষাধিক মায়ানমারের বাস্তচ্যুত নাগরিকদের মধ্যেও অনেক রোহিঙ্গা জীবিকার তাগিদে পর্যটন এলাকায় এসে বাংলাদেশী পরিচয় দিয়ে গাড়ি চালায়। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে রোহিঙ্গারা চালকের বেশে চুরি ছিনতাইসহ পর্যটন এলাকায় নানা অপরাধে যুক্ত হচ্ছে যা পর্যটন খাতে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। এসব কারনে কক্সবাজারে নিরাপদ ও পর্যটন-বান্ধব ট্রাফিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাই বিদ্যমান অবকাঠামোকে ব্যবহার করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কক্সবাজারে নিরাপদ ও পর্যটন-বান্ধব স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ার লক্ষ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারীর পরিকল্পনা ও দিক-নির্দেশনায় কক্সবাজার জেলা ট্রাফিক বিভাগ পর্যটন এলাকায় চলাচলরত সকল যানবাহন ও চালকদের একটি স্মার্ট ডাটাবেস তৈরী করেছে। উক্ত স্মার্ট ডাটাবেসের নামকরণ করা হয়েছে কক্স-ক্যাব। যার ওয়েবসাইট www.coxscab.com
চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ১০ ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারে নেতৃত্ব প্রদানঃ গত ২৩/০৪/২৩খ্রিঃ সদর থানাধীন কুতুবদিয়া পাড়া সাগর পাড় এলাকায় একটি বোটে স্থানীয় লোকজন একজন মৃত ব্যক্তির লাশের গলিত পা পানির উপর ভাসমান অবস্থায় এবং বোটের হিমাগরের মুখ পেরেক মেরে বন্ধ করা অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে সংবাদ দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও লোকজন পৌঁছে উক্ত বোটের মাছ রাখার কল (হিমাগার) হতে পেরেক দিয়া আটকানো কাঠ ভেঙ্গে হাত, পা, জাল ও রশি দিয়ে বাঁধা সর্বমোট ১০ জন গলিত ও বিকৃত মৃতদেহ পাওয়া যায়। আমার দিক-নির্দেশনায় প্রাপ্ত লাশগুলো উদ্ধার, সুরতহাল, ডিএনএ প্রোফাইলিং করতঃ স্বজনদের নিকট যথাসময়ে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় জনৈক রোকিয়া আকতার বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করলে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা নং- ৪৫(৪)২৩, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়। মামলা রুজুর পর নিম্নস্বাক্ষরকারীর নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনায় ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করতঃ হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সুমনসহ ৯ জন আসামীকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের মধ্যে ৭ জন আসামী বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ ১৬৪ মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। বিজ্ঞ আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক উক্ত মামলার ঘটনার সাথে জড়িত ৩০ জন আসামীকে সনাক্ত করা হয়েছে।
মানবপাচারঃ
বর্ণিত সময়ে মানবপাচার বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ১৫৬ জন ভিকটিম উদ্ধার করতঃ ২৭টি মামলা রুজু এবং মামলা সমূহে ১৬৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারঃ তার দিক সঠিক নির্দেশনায় নিম্নলিখিত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করার ফলে সারা বাংলাদেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার অভিযানে কক্সবাজার জেলা গ্রুপ “খ” এ প্রথম স্থান অর্জন। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারগুলো হলোঃ- পিস্তল-০৪টি, এলজি-৪৭টি, একনলা বন্দুক-১৫টি, দুনলা বন্দুক-০১টি, থ্রি-কোর্য়াটার বন্দুক-০২টি, ওয়ানশুটারগান-১৫, পাইপগান-০১টি গুলি-১৮৬৫ রাউন্ড, রাইফেলের গুলি- ১২টি, কার্তুজ-৭৩ রাউন্ড, ভাঙ্গা গুলি-০৩টি, গুলির খোসা-০৬টি, কার্তুজের খোসা-২৮টি, দা-০৮টি, চাকু-০২টি, হাতুড়ি-০১টি, কোদাল-০১টি, অস্ত্র তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি-১৯৩টি, তলোয়ার-০১টি, চাপাতি-০১টি, ছুরি-০৩টি, কিরিচ-০৭টি, রাম দা-১, ম্যগজিন-০১টি এবং রড-২টি। মাদক উদ্ধারঃ তার দিক সঠিক নির্দেশনায় নিম্নলিখিত মাদক করার ফলে সারা বাংলাদেশে মাদক উদ্ধারে কক্সবাজার জেলা গ্রুপ “খ” এ ৩য় স্থান অর্জন। ২০২৩ সালে তার নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনায় বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলায় উদ্ধাকৃত মাদকদ্রব্যসমূহ হলো- গাঁজা/গাঁজার গাছ ৩৭ কেজি ৮১৫ গ্রাম, বিয়ার ১৩৯০.৫০০ লিটার, বিদেশী মদ ৮১৯.৭০০ লিটার, ফেন্সিডিল ২.৫০০ লিটার, দেশী মদ ৮৯৪৩.