শিরোনাম :
কক্সবাজার শহরে ‘ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের’ বিক্রির টাকার লেনদেনের বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের মারধর ও ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত ঈদগাঁওতে বৃদ্ধকে গুলি করে হত্যা অনরার দু:খ কষ্ট বুঝিলইবার লাই ও আইস্সে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব, শুনলেন গণহত্যার বর্ণনা প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে ইফতার করবেন প্রতি ব্লকের ৭০ রোহিঙ্গা রোহিঙ্গাদের তৈরি শিল্পকর্ম দেখলেন জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজার বিমানবন্দর ও খুরুশকুল পুনর্বাসন প্রকল্প পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টা চকরিয়ায় হাইওয়ে পুলিশের জীপ খাদে পড়ে পুলিশ সদস্য নিহত, এসআইসহ আহত ৪ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়: গুতেরেস রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ২৭০ টি সামুদ্রিক কাছিমের বাচ্চা অবমুক্ত

নিউজ রুম / ৫২ বার পড়ছে
আপলোড : সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩০ পূর্বাহ্ন

:: ড. শফিকুর রহমান ::
কক্সবাজারের রামু উপজেলার পেচাঁরদ্বীপ সমুদ্র সৈকতে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইউএসএআইডির অর্থায়নে নেকম ইকোলাইফ প্রকল্পের কাছিম হ্যাচারী থেকে এ সিজনে প্রথম ২৭০ টি কাছিমের বাচ্চা অবমুক্ত করা হয়েছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন জনাব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার, মহাপরিচালক, সমুদ্র গবেষনা ইনস্টিটিউট (অতিরিক্ত সচিব), জনাব সারওয়ার আলম, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ, জনাব মুসা ইবনে———–, পরিদর্শক, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার, জনাব ড. শফিকুর রহমান, উপ প্রকল্প পরিচালক, নেকম-ইকোলাইফ প্রকল্প, সিএমসি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিগন।
সিএমসি, ভিসিজি ও নেকম-ইকোলাইফ প্রকল্প থেকে পেঁচারদ্বীপ, শীলখালী ও শাহপরীরদ্বীপে ৩টি কাছিমের হ্যাচারীস্থাপন করা হয় ও ৬টি ইনসিট্যু কনজারভেশন করা হয়েছে । ২০২৩ সালে প্রশিক্ষিত গার্ডদের মাধ্যমে ৫৮ টি কাছিমের ৭,৫২৮ টি ডিম ( পেঁচারদ্বীপে ১৮ টি কচ্ছপ ২০৩০ টি, শীলখালী ৯ টি কচ্ছপ ১২৩৯ টি ও শাহপরীরদ্বীপে ৩১ টি কচ্ছপ ৪২৫৯ টি ডিম) সংগ্রহ করে হ্যাচারীতে রাখা হয়েছে। ২০২১ সালে মোট ৪১ টি কচ্ছপ থেকে ৪,৭১৩ টি ডিম যা থেকে ৪১৬৭ টি বাচ্চা অবমুক্ত করা হয়েছে। ২০২২ সালে মোট ৪৯ টি কচ্ছপ থেকে ৫,৭৬৩ টি ডিম যা থেকে ৪,৮৬০ টি বাচ্চা অবমুক্ত করা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের ভাষায় এরা সবাইই কচ্ছপ বা কাছিম বলে পরিচিত হলেও বই-পুস্তকের ভাষাতে, যারা পানিতে বাস করে তাদেরকে কাছিম, স্থলে বাস করলে কচ্ছপ এবং যারা ঈষৎ লবণাক্ত পানিতে বাস করে তাদেরকে টেরাপিন বলে। কাছিমের পায়ের আঙ্গুলগুলোর মাঝে বুনট চামড়ার জাল থাকে কিন্তু কচ্ছপের এরকম থাকে না যার কারণে কচ্ছপ মাটিতে হাঁটতে পারলেও কাছিম পারেনা।
পৃথিবীর প্রায় সকল সমুদ্রেই এদের বিস্তৃতি রয়েছে এবং এরা বাসা বানানোর জন্য সাধারণত তুলনামূলক উষ্ম অঞ্চল পছন্দ করে। খাবার গ্রহণ, বিপরীত লিংগের সাথে মিলন থেকে শুরু করে সকল আনুষঙ্গিক কাজই সাগরে করলেও ডিম পাড়ার সময়ে স্ত্রী কাছিমকে দ্বীপে আসতেই হয়। এরা ডিম পাড়ার সময়ে খুব নির্জন স্থান বেছে নেয় এবং যদি সেখানে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি দেখে তাহলে সাথে সাথে ডিম পাড়া বন্ধ করে মা কাছিম আবার সাগরে ফেরত চলে যায়।
ডিম পাড়ার সময় বালিতে গর্ত করে ডিম পাড়ে এবং শেষ হবার সাথে সাথে বালি দিয়ে ঢেকে দেয় যাতে করে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার সাথে সাথেই বাচ্চাগুলো আবার সাগরে চলে যেতে পারে। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার জন্য মোটামুটি একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রার প্রয়োজন পড়ে। গড়ে ৬০ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে বাচ্চাগুলো সাগরে পাড়ি জমায়। পুরুষ কাছিম একবার ডিম ফুটে গভীর সাগরে চলে যাওয়ার পরে আর কখনো দ্বীপে ফেরত আসেনা, সমগ্র জীবনচক্র তার সাগরেই কেটে যায়।
সমগ্র পৃথিবীতে মাত্র সাত প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিমের দেখা মেলে এর মধ্যে চার প্রজাতিকেই দুস্প্রাপ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই সাত প্রজাতির মধ্যে আমাদের সৈকতে Olive Ridley বা জলপাই রঙা কাছিম বেশ দেখা যায়। Leatherback Sea Turtle আকারের দিক থেকে সবথেকে বড়। Green Sea Turtle যেখানে আটলান্টিক মহাসাগর ধরে প্রায় ১৩০০ মাইল পথ পাড়ি জমায় সেখানে স্ত্রী Leatherback Sea Turtle প্রশান্ত মহাসাগর হয়ে প্রায় ১২০০০ মাইল পথ পাড়ি দেয়।
প্রজাতিভেদে এদের গড় আয়ু ৫০ বছর। এসব সামুদ্রিক কাছিমের খাবারের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন রকমের সামুদ্রিক আগাছা কিংবা বিভিন্ন সামুদ্রিক গাছ অপরদিকে কিছু প্রজাতি ছোট স্কুইড কিংবা মাছও শিকার করে থাকে।
জেনে রাখা ভাল যে, এরা যেই ডিম পাড়ে তা থেকে প্রায় সব ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলেও তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক সদস্যই পরিণত অবস্থায় রূপান্তর হতে পারে। এর পেছনে প্রধান কারণ ঐসব বাচ্ছা কাছিমগুলোর শারীরিক অক্ষমতা নয় বরং জলবায়ুর পরিবর্তন, উচ্চ অর্থ লোভের কারণে অনৈতিকভাবে খোলস বিক্রির বাণিজ্য, মাংসের চাহিদা থাকার কারণে নানান দেশে রপ্তানি, সাগরের মাঝে মাঝে জাল দিয়ে মাছ চাষ, বাসস্থান ধ্বংস, তৈলাক্ত পানি এবং নানাবিধ কারণ।
জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বাচ্চা কাছিমগুলো বাইরের প্রতিকূল পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনা যার কারণে অনেক সদস্যই মারা পড়ে। টাকার লোভে অনেক চোরাচালানকারী কাছিমগুলোকে ধরে খোলস ছিড়ে এদের ফেলে দেয় যার কারণে প্রচন্ড কষ্ট পেতে পেতে এরা ধীরে ধীড়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। আবার পৃথিবীর অনেক দেশেই এদের মাংস খাওয়া হয় যার কারণে নির্বিচারে এদের ধরা হয় এবং মেরে ফেলে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আবার উপকূলীয় জেলে যারা সাগরে মাছ ধরেন তাঁরা মাঝে মাঝেই বড় বড় জাল দিয়ে রাখেন যার কারনে ঐসব বাচ্চা কাছিমগুলো আর গভীর সাগরে যেতে পারেনা এবং এখানেই মারা যায়। ঐসব জেলে জাল ওঠানোর পড়ে মাছ বা প্রয়োজনীয় সবকিছু রেখে কাছিমগুলোকে বালির মধ্যেই ফেলে দেয়।
এভাবেই প্রতিনিয়ত বিশ্বের নানান প্রান্তে হাজার হাজার সামুদ্রিক কাছিম মারা যাচ্ছে অথচ তাদেরকে বাচানো গেলেও বেশিরভাগ লোকই ঐসব না চিন্তা করে শুধু নিজের স্বার্থের কথা ভেবে নির্বিচারে নিধন করে চলেছে। কাছিম সংরক্ষণে বীচ বাইক বন্ধ করতে হবে, ডিম পাড়ার স্থান সংরক্ষণ করতে হবে, বীচে আলো জ্বালানো ও ক্যাম্প ফায়ার বন্ধ করতে হবে, শব্দ দূষণ ও পরিবেশ দূষণ কমাতে হবে, জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সৈকতে জোনিং করতে হবে।
এমন সোনার ডিমের আশাতেই যদি সবাই জীববৈচিত্রের কথা না ভেবে নির্বিচারে প্রকৃতির নানান প্রজাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে থাকে তাহলে সেদিন খুব বেশি দূরে নেই যেদিন পৃথিবীতে একটা মানুষও অবশিষ্ট থাকবে না।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর