শিরোনাম :
মিয়ানমার অভ্যন্তরে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ : আরসা প্রধান আবু আম্মার আতাউল্লাহ জুনুনী গ্রেপ্তারের খবর সীমান্ত এলাকার মানুষের মাঝে আতংক কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদী সীমান্তে অভিযান চালিয়ে দুই লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছে বিজিবি রশিদনগরে বিএনপির মতবিনিময় ও ইফতার মাহফিলে ইঞ্জিনিয়ার সহিদুজ্জামান কক্সবাজার শহরে ‘ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের’ বিক্রির টাকার লেনদেনের বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের মারধর ও ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত ঈদগাঁওতে বৃদ্ধকে গুলি করে হত্যা অনরার দু:খ কষ্ট বুঝিলইবার লাই ও আইস্সে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব, শুনলেন গণহত্যার বর্ণনা প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে ইফতার করবেন প্রতি ব্লকের ৭০ রোহিঙ্গা রোহিঙ্গাদের তৈরি শিল্পকর্ম দেখলেন জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজার বিমানবন্দর ও খুরুশকুল পুনর্বাসন প্রকল্প পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টা

দ্বাদশ নির্বাচন ঘিরেই উদ্বোধন হচ্ছে কক্সবাজার রেলপথ

নিউজ রুম / ৫৭ বার পড়ছে
আপলোড : বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৯ অপরাহ্ন

বিডি প্রতিবেদক :

অবশেষে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই শেষ হচ্ছে রেলপথে পর্যটন নগরীতে যাবার অপেক্ষা। আগামী ১১ নভেম্বর উদ্বোধনের তোড়জোড় চলছে দেশের একমাত্র আইকনিক রেল স্টেশনের। সাধারণ মানুষের মন জয় ও পর্যটকদের কক্সবাজারে যাতায়াত আরো সহজতর করতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের আগেই রেলপথ চালু ও আইকনিক রেল স্টেশন উদ্বোধনের উদ্যোগ চলছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

জাতীয় নির্বাচনের আগে এ রেল লাইন উদ্বোধন হলে নির্বাচনে অনেকটা পজিটিভ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন কক্সবাজারবাসী। ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার থেকে পুরো রেলস্টেশন এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী। প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে রেললাইন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ নানা মেগা-প্রকল্পের ছবি সম্বলিত প্লেকার্ড, পেস্টুনে ছেয়ে যাচ্ছে রেললাইন স্টেশনের যাবার সড়কের দু’পাশ ও স্টেশন এলাকা।

অন্যদিকে, স্বাধীনতা পূর্ব ও পরবর্তী  কক্সবাজারবাসীর স্বপ্ন রেল লাইন। রেলে যাতায়াত ও পর্যটনখাতে বাণিজ্যিক প্রসারতার আশায় বুক বেঁধে ছিল জেলাবাসী। সেই আশার সফলতার ছোঁয়া এসেছে ৫ নভেম্বর। এদিন নবনির্মিত রেলপথ দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার এসে পৌঁছে প্রথম পরিদর্শন ট্রেন। এটি আসার খবর প্রচার হওয়ায় সকাল থেকে আইকনিক রেল স্টেশন এলাকায় ভীড় জমান হাজারো আবালবৃদ্ধবনিতা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রেলটি কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছালে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে উপস্থিত লোকজন। রাত ১০টা পর্যন্ত স্থানীয় নারী-পুরুষের আনাগোনা ছিল স্বপ্নের রেল আসা দেখতে।

রেল স্টেশন এলাকার বাসিন্দা তারেক আরমান, মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ও সরোয়ার হাসান বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছরের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশ স্বাধীনের পর ৩৫ বছর নানা দল দেশ পরিচালনায় ছিল। কিন্তু বৃটিশ আমলের পর আর কোন সরকার কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের বিষয়ে কল্পনাও করেনি হয়ত। তবে, গত ১৫ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা পর্যটন বিকাশের লক্ষ্যে কক্সবাজারে রেললাইন স্থাপনের ঘোষণা দেন এবং বাস্তবায়নও করে দেখান। এটা এখনো স্বপ্নের মতোই দেখাচ্ছে।

রামুর আবদুল মালেক ও আনিস নাঈম বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ বিরোধী মতাদর্শই বেশি লক্ষ্যনীয়। একাদশ নির্বাচনেই কেবল জেলার চার আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এর আগে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীর জয় বেশি এখানে। এসব চিত্রকে মাথায় না নিয়ে টানা তিনবারে সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ কক্সবাজারকে ঘিরে লক্ষ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরমাঝে রেল, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র এবং গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ১১ নভেম্বর এ প্রকল্পসহ ডজনাধিক প্রকল্প উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছে। দৃশ্যমান এসব প্রকল্পের পরও কক্সবাজারবাসী স্বপ্রনোদিত হয়ে নৌকায় ভোট না দিলে মোনাফেকি হবে।

দেখা যায়, কক্সবাজার সরকারি কলেজের উত্তরপাশে চাঁন্দেরপাড়া বিলে গড়ে উঠা আইকনিক রেল স্টেশন এলাকায় কাজ শেষ করার তোড়জোড় চলছে। প্রধান সড়ক থেকে রেল স্টেশনে যাবার চারলেন সড়কের কাজ শেষ। টার্মিনালের সামনে বিশাল আকৃতির ঝিনুকের পেটে মুক্তার দানা শোভাপাচ্ছে। আধুনিক ও বিশ্বমানের বিমানবন্দরের টার্মিনালকেও হারমানাচ্ছে পর্যটন নগরীর আইকনিক রেলস্টেশন ভবন।

সূত্রমতে, কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের অর্ধেকই আসেন একদিনের জন্য। পর্যটকরা যেন কক্সবাজারে এসে সারাদিন ঘুরে আবার ফিরে যেতে পারেন, রেলস্টেশনে সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আইকনিক স্টেশনে লাগেজ রেখে সারাদিন সৈকত বা আশপাশ এলাকায় ঘুরে আবার রাতের ট্রেনে চলে যেতে পারবেন তারা। এতে হোটেল ভাড়া সাশ্রয় হবে পর্যটকদের।

আইকনিক স্টেশন ভবনে যাত্রীদের লাগেজ রাখতে লকার সিস্টেম ছাড়াও থাকছে আধুনিক ট্রাফিক সুবিধা, নিচতলায় টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনা, দ্বিতীয় তলায় শপিংমল ও রেস্তোরাঁ। তিন তলায় তারকা মানের হোটেলের সুবিধায় অর্ধশতাধিক রুম, কেনাকাটার ব্যবস্থাসহ থাকছে হলরুম। ৫০০টি লকার ব্যবস্থার সাথে স্টেশন ভবনে থাকছে আধুনিক বাথরুমও। রাখা হয়েছে মসজিদ, শিশু যতœ কেন্দ্র ও চলন্ত সিঁড়ি। থাকছে সাধারণ ও ভিআইপিদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ড্রপ এরিয়া, বাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস এবং থ্রি হুইলারের জন্য আলাদা পার্কিং এরিয়া। এটিএম বুথ, পোস্ট অফিস, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ ছাড়াও থাকবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবাকেন্দ্র। ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৯ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত স্টেশন ভবনটি এ অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানে রূপপেয়েছে।

আইকনিক ভবন ও আশপাশের রেলপথ নির্মাণ কাজের প্রকৌশলী এনামুল হক সরকার এনাম বলেন, অবকাঠামোসহ আইকনিক স্টেশন ভবন এখন পর্যটক বরণে প্রস্তুত। সামগ্রিক ভাবে প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। ১১ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রেলপথ ও রেল স্টেশন উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। পথের সক্ষমতা যাচাইয়ে গত ৫ নভেম্বর পরিদর্শন রেল এসে ঘুরে গেছে। উদ্বোধনের পর পরই বাণিজ্যিক রেল চলাচল না করলেও মাস দেড়েক পর বাণিজ্যিক ভাবে কক্সবাজারে রেল যোগাযোগ শুরু হবে বলে আমাদের বিশ^াস। তবে, কার্যাদেশ অনুসারে চলতি অর্থবছরের শেষ সময়ে আমাদের কাজ পুরোপুরি বুঝিয়ে দেয়া হবে।

তথ্য বলছে,চট্টগ্রামের-দোহাজারী থেকে কক্সবাজার ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১০ সালে এবং ২০১৩ সালে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে, ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল একনেকে অনুমোদিত হয়। ২০১০ সালে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাকি চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।

একনেকে অনুমোদনের পর, প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন। তবে, ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি হস্তান্তরে বিলম্ব, ক্ষতিপূরণ প্রদানে বিলম্ব ও জমির বাস্তব দখল প্রাপ্তিতে বাধা, বনভূমি ডি-রিজার্ভকরণ ও বনভূমি ব্যবহারের অনুমতি পেতে বিলম্ব, প্রকল্প এলাকা থেকে বৈদ্যুতিক পোল (খুঁটি) স্থানান্তরে বিলম্ব এবং করোনার প্রভাবের কথা উল্লেখ করে প্রকল্পটি সার্বিকভাবে সম্পাদনে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয। দোহাজারী-কক্সবাজার-রামু রেলপথ নির্মাণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় এক হাজার ৩৬৫ একর জমি জেলা প্রশাসন কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হয়। তবে তা যথাসমযে ঠিকাদারকে বুঝিয়ে দিতে বিলম্ব হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় ১৬৫ একর জমি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছিল, যা ডি-রিজার্ভকরণসহ প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য অনুমতি পেতে দীর্ঘ সময় যায়। ফলে ২০১৯ সালের শেষাংশে এসে সংরক্ষিত বনাঞ্চলভুক্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় ঠিকাদার গাছপালা কাটা ও ভৌত কাজ শুরুর সুযোগ পায়। প্রকল্প এলাকায় পিজিসিবি, বিপিডিবি ও বিআইবি’র বৈদ্যুতিক টাওয়ার ও পোল ছিলছ। এগুলো স্থানান্তরে চারদফা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। এতে প্রকল্পের ভৌতকাজ বিলম্বিত হয়। এর সাথে যোগ হয় করোনা মহামারি। ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১২ মে’র মধ্যে মধ্যবর্তী প্রায় দেড়মাস প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। এতে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের অনুপস্থিতিতে প্রকল্পের কাজে বিঘœ ঘটে। আর বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে প্রকল্পের আমদানিকৃত বিভিন্ন মালামাল সঠিক সময়ে দেশে এসে পৌঁছেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে সবকাজ শেষ হতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, এ রেলপথের ১০২ কিলোমিটার লাইনের কাজ শেষ। চলছে ফিনিশিং কাজ। শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করছেন। আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার রেললাইন ও আইকনিক স্টেশনের উদ্বোধন করবেন।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর