কক্সবাজারে রাখাইন সম্প্রদায়ের জলখেলী উৎসব শুরু

bdworldbdworld
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০১:০৬ AM, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিডি প্রতিবেদক :

মগীসনকে বিদায় ও বরণকে সামনে রেখে কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের ৩ দিনের সাংগ্রাইং পোয়ে বা ঐতিহ্যবাহি জলকেলি উৎসব শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। তবে এবারের উৎসবে কোন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল না। উৎসব উপলক্ষে রাখাইন পল্লীগুলো সেজেছে নানা রঙ্গে। কক্সবাজার, মহেশখালী, টেকনাফ ও চকরিয়া রাখাইন পল্লীগুলোতে আনন্দ উৎসব চলছে। রাখাইন তরুণ তরুণীরা একে অপরকে মঙ্গল জল ছিটিয়ে নতুন বছরের শুভ কামনা জানাচ্ছে। রাখাইনদের এই জলখেলী উৎসব দেখতে রাখাইন পল্লীগুলোতে ভিড় করছে কক্সবাজারে আগত পর্যটক ও স্থানীয় নানা সম্প্রদায়ের লোকজন। পুরো জেলায় করা হয়েছে অর্ধশত প্যান্ডেল। মঙ্গল জল ছিটিয়ে ও নেচে গেয়ে এসব প্যান্ডেলে চলছে পুরানো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের উৎসব।

রাখাইন সম্প্রদায়ের এ জলখেলি উৎসব উপলক্ষে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করার লক্ষ্যে পয়লা বৈশাখ থেকে সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করে থাকেন। এর মধ্যে ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী চলে ‘সাংগ্রাং পোয়ে’ উৎসব। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

রাখাইনপল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র দাবদাহে ঠান্ডা জলে শরীর ভিজিয়ে আনন্দ-উল্লাস করছেন রাখাইন তরুণ-তরুণীরা। কয়েকটি প্যান্ডেলে শিশু-কিশোরেরাও অংশ নিয়েছে জলকেলিতে। এ জন্য কক্সবাজার শহরের হাঙরপাড়া, টেকপাড়া, বড়বাজার, চাউলবাজার, বৌদ্ধমন্দির সড়কের ক্যাং পাড়া ও এসএ (থংরো) পাড়া, টেকনাফের রাখাইন পল্লী, মহেশখালীর বড় রাখাইনপাড়া, ছোট রাখাইন পাড়া, চকরিয়ার হারবাং রাখাইন পল্লীতে অর্ধশত প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে।

রঙিন ফুল আর নানা কারুকাজে সাজানো হয়েছে প্যান্ডেলের চারপাশ। রাখাইনদের প্রতিটি বাড়িও সেজেছে নতুন সাজে। উৎসবে আসা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার পরনে নতুন কাপড়।

ঢোল-বাজনা, গানে তরুণ-তরুনী সহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ শোভযাত্রা সহকারে যাচ্ছে প্যান্ডেলে-প্যান্ডেলে। এরপর দাঁড়ান নৌকার এক পাশে বসা তরুণীদের সামনে। তরুণদের হাতে থাকে পাত্রভর্তি মঙ্গলজল। পছন্দের তরুণীকে লক্ষ্য করে এ জল ছুড়ে মারেন তরুণ। তরুণীর ইচ্ছা হলে তরুণের ডাকে সাড়া দেন এবং তরুণকে লক্ষ্য করে জল ছুড়ে মারেন। এভাবে প্যান্ডেলে জোড়ায় জোড়ায় চলে তরুণ-তরুণীদের জল ছুড়ে মারার সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসব ‘সাংগ্রাং পোয়ে’। বাংলায় যাকে বলে ‘জলকেলি’ উৎসব।

শহরের বড়বাজার এলাকায় একটি প্যান্ডেলে কথা হয় আবু রাখাইন ও মংলা রাখাইনের সাথে, তারা বলেন, প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে আমরা নতুন মগীসন স্বাগত জানাতে এই উৎসবের আয়োজন করেছি। আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজন অনেক আনন্দ করছি।

কয়েকটি প্যান্ডেলে গিয়ে দেখা যায় , রাখাইনদের এই উৎসব দেখতে কক্সবাজার আগত পর্যটক ও স্থানীয় নানা সম্প্রদায়ের লোকজনের সমাগম। খুলনার ডুমুরিয়া থেকে আসা পর্যটক আব্দুর রহমান, মহিয়ান, ও আলিয়া বলেন, কক্সবাজারে বেড়াতে এসে রাখাইন সম্প্রদায়ের এই বর্ষবরণ উৎসব আমাদের জন্য বাড়তি পাওয়া।

মহেশখালী বড় রাখাইন পাড়ার মম রাখাইন বলেন, অনেক গরম, তারপরেও আমাদের উৎসব চলছে। তিনি সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও জানান।

রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্ষপঞ্জিকা মতে, ১৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাতে শেষ হয়েছে ১৩৮৫ মগীসন। ১৭ এপ্রিল (বুধবার) শুরু হল রাখাইন নতুন বর্ষ ১৩৮৬ মগীসন।

অন্যান্য বছর প্রশাসনের কর্তারা গিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেও এ বছর সেরকম কোন আয়োজন দেখা যায়নি।

রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ বলছেন, পুরাতন বছরের সকল গ্লানি, দুঃখ জলে মুছে নতুনভাবে জলে জলে পরিশুদ্ধির জন্য এই উৎসব। টানা ৩ দিন চলবে এই উৎসব।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম পিপিএম বলেন, রাখাইন সম্প্রদায়ের এই বর্ষবরণ উৎসবকে ঘিরে পুরো জেলায় জুড়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রাখাইন পল্লীগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রাখাইন সম্প্রদায়ের এই বর্ষবরণ উৎসব যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সে লক্ষে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলেও জানান পুলিশ সুপার।

আপনার মতামত লিখুন :