কক্সবাজারে মিয়ানমার থেকে বাস্তুুুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গা আগমনের ৭বছর পুর্ণ হয়েছে আজ। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, নির্যাতনের মুখে পড়ে সাত লাখের অধিক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বনভূমিতে আশ্রয় নেয়। কক্সবাজারে আগে থেকে আশ্রয় নেয়া আরও সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা সহ বর্তমানে ১২ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা বর্তমানে কক্সবাজারের ৩৩টি ক্যাম্পে বসবাস করছে।
মিয়ানমারের রাখাইনে গৃহযুদ্ধের কারণে বিপুল সংখ্যক এই রোহিঙ্গার প্রত্যাবাশন আরো অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় কখন তারা স্বদেশে ফিরে যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে সরকারের শরনার্থী বিষয়ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাশন নিয়ে মিয়ানমারের সাথে আলোচনা চলমান রয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাস দমনের নামে সে দেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর জাতিগত নিধন চালানো হলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আসতে থাকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঢল। ২৫ আগস্টের পর দুই তিন মাসের মধ্যেই উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয় সাড়ে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা। এছাড়া কক্সবাজারে আগে থেকে আশ্রয় নেয়া আরও সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা সহ ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গাকে ৩৩টি ক্যাম্পে অবস্থান করছে। পরবর্তীতে জাতিসংঘের তত্বাবধানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা গুলো নিশ্চিত করা হয়। ২০১৭ সালেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করে। পরবর্তিতে কয়েক দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিলেও একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত যায়নি। গত প্রায় এক বছর ধরে মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মির সাথে মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে দু’পক্ষের সংঘাত সংঘর্ষে রোহিঙ্গারা আহত নিহত হচ্ছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাশন আরো অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।
রোহিঙ্গাদের দাবী- তাদের নাগরিকত্ব, জাতিগত পরিচয়, জায়গা জমি ও গণহত্যার বিচারের নিশ্চয়তা না পেলে তারা মিয়ানমারে গিয়ে আবারও সেদেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পড়বে।
রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতারা বলছেন, ছোট এই দেশে রোহিঙ্গারা দিন দিন বোঝা হয়ে যাচ্ছে। তাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ যেকোন উপায়ে মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক এই রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো হউক।
রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন উল্লেখ করে কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার সামসুদ্দৌজা নয়ন জানিয়েছেন, আজ রোহিঙ্গা আগমনের ৭ বছর পেরিয়ে ৮ বছরে পদাপন করবে। আজকে ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা তাদের মত করে সভা-সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসাবে রোহিঙ্গা শিশুদের চিত্রাংকন থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা রয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যত বিলম্ব হচ্ছে, দিন দিন সংঘাত বেড়ে চলছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর প্রত্যাশা স্থানীয়দের।