প্রতিবেশী দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে করলে আমরা তার প্রতিদান দিব–মিজানুর রহমান আজহারী

নিউজ রুম / ৫১ বার পড়ছে
আপলোড : শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৪৯ অপরাহ্ন

দেলওয়ার হোসাইন :

প্রতিবেশী দেশ বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে করলে আমার তার প্রতিদান দিব,যদি কর্তৃত্ববাদের ভূমিকা রাখে তাহলে আমরা এমন প্রতিবেশী চাইনা। ইসলাম আমাদের ধৈর্য্য ধারণের শিক্ষা দেয়। কক্সবাজারের পেকুয়ায় গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশের আলোচিত ও জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারির ওয়াজ মাহফিলে প্রধান বক্তার আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
তিনি প্রতিবেশী দেশকে বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের আহবান জানান।

কক্সবাজারের পেকুয়ায় মরহুম মাওলানা শহিদুল্লাহ স্মৃতি সংসদ ও পেকুয়া সমাজ উন্নয়ন পরিষদের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত তাফসির মাহফিলে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত ঘটেছে । বিশাল তাফসির মাহফিলের কর্মসূচি  সকাল ৯ টায় থেকে আরম্ভ হওয়ার কথা থাকলেও আগের দিন রাত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ মাহফিলে উপস্থিত হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কন্টেন্ট ক্রিয়েটারগণ দুই দিন আগে থেকে মাহফিলে এসে  খুটিনাটি প্রচার করতে থাকে।

সকাল ৯টায় আরম্ভ হওয়া তাফসির মাহফিলের সভাপত্বিত করেন, মাওলানা এ এইচ এম  বদিউল আলম, উদ্বোধনী বয়ান করেন জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা শায়েখ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন। এরপর ধারাবাহিক আলোচনা করেন, মুফতি কাজি ইব্রাহিম, মাওলানা জসিমউদদীন রহমানী,আবদুল্লাহ হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
এসময় প্রায় ৬ লক্ষ মুসল্লীদের নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন,জুমার খুতবা পড়ান মাওলানা সালাহউদ্দিন মাক্কী,জুমার নামাজের ইমামতি করেন,আবদুল্লাহ হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

জুমার পর দ্বিতীয় অধিবেশনের সভাপতিত্বে করেন জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী, ধারাবাহিক আলোচনা  করেন, মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, সাদেকুর রহমান আজহারি,আবদুল্লাহ আল আমিন।
বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদ,এরপর জনতার উদ্দেশ্যে ভার্চুয়ালি ভিডিও কলে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

রাত ৯ টা ২০ মিনিটে মঞ্চে উঠেন প্রধান মুফাসিসর আল্লামা মিজানুর রহমান আজহারি। তিনি মঞ্চে আসার আগেই মাহফিলের চারপাশ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।

মাহফিলে পেকুয়া থানা পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে, মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ।

বিগত আওয়ামীলীগ সরকার মিজানুর রহমান আজহারিকে মাহফিল করতে না দেয়া ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। জুলাই আগষ্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম ঢাকার বাইরে মাহফিল হওয়ায় দুর দুরন্ত থেকে পেকুয়ার ওয়াজ মাহফিলে লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মানুষের জমায়েত দেখা গেছে।
সবচেয়ে আকর্ষণের বিষয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ মাহফিলে বক্তব্য রাখার বিষয়টি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হলে লক্ষ লক্ষ  লোক সমাগমের বিষয়টি আরও গুরুত্ব পায় । তিনি দীর্ঘদিন পর নিজ এলাকায় বক্তব্য রাখবেন এমন খবর প্রচার হলে দলীয় নেতা কর্মী ও স্থানীয় মানুষের  মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দেয় । তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের বেশ জনপ্রিয় রাজনৈতিক হওয়ায় তার বক্তব্য শুনতে জনস্রোতের সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হয় । যদিও তিনি বর্তমানে দেশের বাহিরে রয়েছেন। সালাহউদ্দিন আহমদ রাত ৮টায় ভার্চূয়ালি বক্তব্য রাখেন, বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশে কিছু আগেও তাফসির মাহফিল করতে অনুমতি নিতে হতো, নিষিদ্ধ করা হয়েছিল হক্কানি আলেমদের মাহফিল, আজ ফ্যাসিস মুক্ত দেশে অনুমতি ছাড়া মাহফিল হচ্ছে। পুলিশ তাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। তিনি উপস্থিতি হতে না পারায়  সকলের প্রতি সালাম দেন ও দোয়া কামনা করেন।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের ১শ সদস্যের বিশেষ টিম পেকুয়ায় অবস্থান করছে। মাহফিলে আগত মুসল্লীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের এ বিশেষ টিম কাজ করছে। পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা, সেনাবাহিনী, র‍্যাবসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকে বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে।

এবিষয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা বলেন,পেকুয়ায় বাংলাদেশের আলোচিত ও জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলে আগত মুসল্লীদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পেকুয়া থানা পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে, অনেক লোক জমায়েত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। মাহফিল ঘিরে বা এই সুযোগে কোন দুষ্কৃতকারী অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সে বিষয়টি বিবেচনা রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সুতরাং আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে কোন দুষ্কৃতকারীদের সুযোগ দেয়া হবেনা। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে পেকুয়া থানা পুলিশের বিশেষ টিম মাঠে রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য কক্সবাজার জেলা পুলিশের সহযোগিতায় ১শ সদস্যদের পুলিশের বিশেষ টিম পেকুয়ায় কাজে নেমে পড়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনা বাহিনী, র‍্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা সদস্যরা মাঠে রয়েছে,সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বিগত আওয়ামীলীগ সরকার ইসলামিক বক্তৃতাদের মাহফিল নিষিদ্ধ করার কারণে ও ইসলামিক বক্তাদের নামে মামলা দিয়ে আটক করে  জেলে রাখা হলে ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আওয়ামীলীগ সরকার আলেম  বিদ্বেষ এমন মনোভাবের কারণে মাহফিল গুলো ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে আরও বেশী গুরুত্ব হয়ে উঠে। এতে ধর্মীয় আলোচনা শুনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে মানুষের উপস্থিতি আরও বাড়িয়ে দেয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর