বিডি প্রতিবেদক :
স্পা সেন্টার থেকে তথ্য পেয়ে কক্সবাজার ভ্রমন শেষে চট্টগ্রামে ফেরার পথে পুলিশ পরিচয়ে চট্টগ্রামের দুই পর্যটককে অপহরণ করেছে একটি চক্র বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় বুধবার রাতে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২ জনকে পলাতক দেখিয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন চট্টগ্রামের ডিস ব্যবসায়ী মো. নুরুল আইয়ুব (৪০)। আর মামলার এজাহারভুক্ত ৪ আসামীকে গ্রেফতার করেছে ট্যুরিষ্ট পুলিশ।
ধৃতরা হলেন, কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালি র মৃত আবদুর রহমানের ছেলে মো. রুবেল (৩১), ঈদগাঁওয়ে মৃত শামসুদ্দিনের ছেলে মো. সালাউদ্দিন (৩৫)। এই দুইজনকে ৫ সেপ্টেম্বর কলাতলী রোড়ের হোটেল মোটেল জোনের হোটেল সীপার্ল ওয়ান থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সেই হোটেলের কর্মচারী। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে দুইটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়, এবং অপহরণের সাথে জড়িত ঈদগাঁওয়ের নুর আজিজের ছেলে আশিক (২৮) ও মৃত মনসুর আলীর ছেলে মো. মোবারক আলী (৩০) কে হোটেল কক্স টুডের সামনের গলি থেকে বুধবার সকাল ৯ টায় গ্রেফতার করা হয়।
এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে মামলার বাদী চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলা সদরের চুন্নাপাড়া গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে নুরুল আইয়ূব চৌধুরী ও তাঁর বেয়াই কর্নফুলির উত্তর বন্দর গ্রামের মো.নেওয়াজ নাছির (২৪) ২ টি মোটর সাইকেল নিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টায় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের পথে রওয়ানা করে। ৪ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৫ টায় তারা কলাতলী সমুদ্র সেকতে পৌঁছে। এরপর সকাল সাড়ে ৮ টায় কলাতলীর আলফা ওয়েব গেস্ট হাউজে কক্ষ নেয়। পরে সকাল ১০ টায় মামলার বাদী নুরুল আইয়ূব ওই হোটেলের ৬ ষ্ঠ তলার চায়নারোজ স্পা সেন্টারে যায় এবং স্পা করে। সেখানে স্পা কর্মী রিয়া তার পেশা ও আয় জেনে নেয়। স্পা শেষে তিনি হোটেলের ২০৩ নম্বর কক্ষে গিয়ে অবস্থান করে। পরে বেলা ৪ টায় তারা ফের মোটর সাইকেল নিয়ে চট্টগ্রামের পথে রওয়ানা দেয়। কিন্তু সন্ধ্যা ৭ টার দিকে মামলার বাদী ঈদগাঁও বাজারে পৌঁছাইলে ১ টি মোটরসাইকেলে ২ জন যুবক পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁর গতিরোধ করে বলে স্যার আসতেছে। ২০/২৫ মিনিট পর আরেকটি মোটরসাইকেলে করে ২ জন যুবক ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তারা পর্যটক নুরুল আইয়ূবের বেয়াই এক্সিডেন্ট করেছে বলে নুরুল আইয়ূব কে তুলে নেয়। সেসময় ওেই পরযটকের মোটর সাইকেল অন্য আরেকজন নিয়ে নেয়। পরে রাত ৯ টার দিকে হোটেল মোটেল জোনের সী-পার্ল ওয়ান হোটেলের ৫-সি নাম্বার কক্ষে নিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবীতে মারধর শুরু করে। সেখানে বাদীর বেয়াই নাছিরও বাঁধা অবস্থায় দেখে ভিকটিম। নির্যািতন সইতে না পেরে মামলার বাদী তার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে। পরে তার স্ত্রী ও তার ভাগ্নে আজাদ ও তার বন্ধু মিঠু মিলে ৪ টি বিকাশ নম্বরে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা পাঠায়। একই সময়ে তার স্ত্রী ৯৯৯ এ ফোন করে। ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে ট্যূরিষ্ট পুলিশ সী পার্ল ওয়ান থেকে দুই পর্যটককে উদ্ধার এবং হোটেলের কর্মচারী রুবেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার দেয়া তথ্যমতে একই হোটেলের কর্মচারী সালাউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সালাউদ্দিনের দেয়া তথ্যে কলাতলী বে ওয়ান্ডার্স হোটেলের পার্কিং হইতে একটি মোটরসাইকেল ও ওয়ার্ল্ড বীচ রিসোর্ট এর সামনে থেকে আরেকটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ।
এজাহারে আরো উল্লেখ রয়েছে, বাদীর বেয়াই নেওয়াজ নাছিরকে ৪ সেপ্টেম্বর শহরের বাসটার্মিনাল এলাকা সংলগ্ন মহাসড়ক থেকে পুলিশ পরিচয়ে তার কাছে মাদক আছে বলে তুলে নেয় দুই যুবক। আরেকজন তার মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায়।
এবিষয়ে মামলার বাদী চট্টগ্রামের ডিস ব্যবসায়ী নুরুল আইয়ূব চৌধুরী বলেন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও মোটর সাইকেল লুটের ঘটনায় আমি ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২ জনকে অজ্ঞাতনামা রেখে মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করেছি।
আসামীদের নাম ঠিকানা কিভাবে পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার বাদী বলেন, হোটেল কর্মচারী রুবেল ও সালাউদ্দিন থেকে আসামীদের নাম পরিচয় জেনে তারপর মামলা করেছি।
তিনি আরো বলেন, আমার সন্দেহ চায়না রোজ স্পা সেন্টারের মেয়ে রিনা আমার সাথে কথা বলে আমার সম্পর্কে সমস্ত তথ্য অপহরণকারী চক্রটিকে দিয়েছে। বিষয়টি আমি এজাহারেও উল্লেখ করেছি।
ট্যুরিষ্ট পুলিশের কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বলেন, বুধবার সকালে অপহরণে জড়িত এজাহারভুক্ত দুই আসামীকে গ্রেফতার করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এরা ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। এদেরকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হবে।
তিনি আরো বলেন, এজাহারে থােকা সমস্ত তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। চক্রটি কি করে ওই দুই পর্যটকের সম্পর্ক তথ্য পেলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।