শিরোনাম :
দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম প্রতিমা বিসর্জন কক্সবাজার সৈকতে পেকুয়ায় নিহত স্কুল শিক্ষক আরিফের জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল পেকুয়ায় নিখোঁজের ১৪ দিন পর স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ আরিফ এর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ মিয়ানমারের নৌ বাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আহত জেলেদের ফেরত আনা নিয়ে যেসব তথ্য জানালেন কোস্টগার্ড বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও দুর্গাপূজায় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর এহসান যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেফতার মিয়ানমারের চেয়ে ভালোভাবে পূজা করতে পারছে বাংলাদেশ আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা হিন্দুরা পরিবেশ সম্মত আধুনিক পর্যটন শিল্প গঠন করে কক্সবাজারকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে হবে-তাহলে বিদেশী পর্যটকরা ভ্রমনে আসবে পেকুয়ায় শারদীয় দূর্গাপূজা মন্ডপে সর্তক অবস্থানে র‍্যাব,আইনশৃঙ্খলা সুমন্নত রাখা হবে : এ এসপি র‍্যাব ১৫ মহেশখালী ঘাটের অনিয়ম বন্ধ ও সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম প্রকল্প বাতিলের দাবি উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারের জেরে আরসা ও আরএসও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলিতে এক যুবক নিহত এবং পাঁচজন আহত

বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে থমথমে পরিস্থিতি:ঝুঁকিতে থাকা ৩ শ পরিবারকে সরানোর প্রস্তুতি

নিউজ রুম / ১৯ বার পড়ছে
আপলোড : সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২৮ পূর্বাহ্ন

বিডি প্রতিবেদক :
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে থমথমে ব্যবস্থা বিরাজ করছে। মোহ মোহ গুলির শব্দে চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন সীমান্ত এলাকার অধিবাসীরা। সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডের পাশে ঝুঁকিতে থাকা ৩শ পরিবারকে সনাক্ত করা হয়েছে সরানোর জন্য। সোমবারও গুলির শব্দ শুনেছেন সীমান্ত এলাকার অধিবাসীরা। তবে কোন মোটর সেল বা গুলি বাংলাদেশে এসে পড়েনি। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সহ প্রশাসনের একটি প্রতিনিধি দল সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ঘুমধুম সীমান্ত এলাকার ৪৯৯ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে সরিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপাল এলাকায় পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সীমান্তের অধিবাসীরা চরম উৎখনটা আর আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছে। রাত হলেই বেড়ে যাচ্ছে গুলি আর মোটরসেল এর শব্দ। বিশ্লেষকরা বলছেন মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে মিয়ানমার যে সামরিক তৎপরতা চালাচ্ছে তার জবাব দিতে হবে কূটনৈতিকভাবে। বাঙ্কার থেকে চূড়া গোলার বিকট শব্দে কাঁপছে এপারের সীমান্ত এলাকা।

সীমান্ত এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে তুমব্রু এলাকা পরিদর্শন করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম তারিক। বেলা ১১ টার দিকে ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে এসে জিরো পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখেন ডিসি।

ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলা প্রশাসনের বৈঠকে ঝঁকিতে থাকা সীমান্তের নিকটবর্তী ৩০০ পরিবারকে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রশাসন বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে।

এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি অব্যাহত থাকায় সীমান্তে বাংলাদেশি যেসব পরিবার ঝুঁকির মুখে রয়েছে, তাদের সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, বসবাসকারিদের মতামতেই তাদের সরানো হবে। প্রাথমিক ভাবে প্রস্তুতি নেয়া আছে, পরিস্থিতি খারাপ হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সরকার। সীমান্ত বিষয়ে জেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে। ঝুঁকির মুখে স্থানীয়দের সরিয়ে নিতে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আপাতত ৩০০ পরিবারকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা নেয়া আছে। মূলত তুমব্রু, ঘুমধুম, ফাত্রাঝিরি সীমান্তের খুব কাছে বসবাসকারি পরিবারগুলোকে সরানো হবে। সরানো পরিকল্পনায় থাকা ৩০০ পরিবারের আশ্রয়ের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। মূল কথা সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সব কিছু গুছিয়ে রাখা হয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনের আগে ঘুমধুম ইউপি কার্যালয়ে স্থানীয়দের ঝুঁকির বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস, ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সীমান্তে আতংকের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা চিন্তা করে উখিয়ার কুতুপালংয়ে সরিয়ে নেওয়া ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসির পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার।

ঘুমধুম এলাকার বাসিন্দা রহিম উদ্দিন জানান, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরকান আর্মির মাঝে চলমান সংঘাতে আমরা খুবই আতংকে রয়েছি। দিন-রাত সমানে গুলিবর্ষণ ভীত সন্ত্রস্থ করে রেখেছে। দেড় মাস ধরে চলা এ সংঘাতে সীমান্তের প্রায় মানুষ স্বজনদের কাছে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে। তুমব্রু বাজারের প্রায় দোকান পাট বন্ধ।

ঘুমধুম ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ আলম বলেন, রবিবার রাতেও মিয়ানমারের মংডুর তুমব্রু, পানিরছড়া ও রাইম্মাখালি গ্রাম গুলোতে প্রচন্ড গোলাগুলি চলেছে। গুলির মুহুর্মূহ শব্দে রাত জেগে সময় কেটেছে সীমান্তে বসবাসকারিদের। আতংকে ধান চাষ, ক্ষেত খামার ও শাকসবজির ক্ষেতেও যাওয়া যাচ্ছে না।

গৃহিনী মনীষা বালা বলেন, চাষাবাদ দেখতে যাওয়া দূরে থাক, ঘর থেকে বের হওয়াও কঠিন। গোলা-গুলির বিকট শব্দে শিশুরাও কেঁপে ওঠছে। পুরো সময় কাটছে আতংকে। কারো বাসায় যাবার মতো স্বজন না থাকায় এলাকাও ত্যাগ করা যাচ্ছে না।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম তারিক বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সীমান্তে বসবাসরত লোকজনদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত লোকজনের নিরাপত্তায় কাজ করছি আমরা। সার্বিক গোয়েন্দা নজরদারি রাখা হচ্ছে।

অপরদিকে, কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীর সীমান্তবর্তী এলাকার অর্ধশতাধিক পরিবারকেও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া পরামর্শ দিয়েছেন পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী। ওপারে ব্যাপক গোলাগুলিতে সীমান্তের এসব পরিবার আঘাতপ্রাপ্ত হবার আশংকায় উপজেলা প্রশাসনের কাছে এ আবেদন করেন চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রতিদিনই সংঘর্ষের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংকার থেকে ছোড়া গোলার বিকট শব্দে কাঁপছে এপারে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু, বাইশাফাড়ি, রেজু গর্জনবনিয়া, আমতলিসহ পুরো সীমান্ত এলাকা। মাঝে মাঝেই
মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলা, মর্টারশেল এসে পড়ছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এমতাবস্থায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সীমান্তলাগোয়া বাংলাদেশিদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে মিয়ানমারের ছোড়া গুলিতে একজন নিহত ও ৬ জন আহতের ঘটনায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ সময় তার কাছে প্রতিবাদলিপি হস্তান্তর করা হয়। গত আগস্ট থেকে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো তাকে তলব করা হলো।

বিশ্লেষক রফিক আল ইসলাম বলেন, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে যে সামরিক তৎপরতা চালাচ্ছে তার জবাব দিতে হবে কূটনৈতিকভাবে। বাংলাদেশকে কৌশলগত দিকটি বিবেচনা করে কূটনীতিকভাবে এ তৎপরতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমার থেকে নিক্ষেপ করা ২টি মর্টার শেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় ঘুমধুমের তুমব্রু’র উত্তর মসজিদের কাছে পড়ে। এ ঘটনার পাঁচ দিন পর গত ৩ সেপ্টেম্বর ঘুমধুম এলাকায় দুটি গোলা পড়ে এবং ৯ সেপ্টেম্বর একে ৪৭ এর গুলি এসে পড়ে। তবে গত শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) মাইন বিস্ফোরণ ও গুলি-মর্টার শেল নিক্ষেপে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে নো ম্যান্স ল্যান্ডে বসবাসরত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। তুমব্রু বাজার ও উত্তরপাড়া, বাইশারি সীমান্তে বিজিবির কঠোর অবস্থান রয়েছে। সহজে কাউকে সীমান্ত এলাকাসহ বাজার, গ্রামে ঢুকতে দিচ্ছে না।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর