এম এন আলম :
রোহিঙ্গা দুর্বৃত্ত, কিশোর গ্যাং, ছিনতাইকারি এবং ধর্মান্ধতার কারণে কক্সবাজারে এবারের দূর্গা পূজায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ নেতারা। জেলার তিন উপজেলায় ১৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পূজা মন্ডপের তালিকা করে জেলা প্রশাসনের কাছে দেয়া হয়েছে।
তারা বলেছেন, অনাকাংখিত যেকোন ঘটনা এড়াতে পূজা মন্ডপগুলো সিসি ক্যামরার আওতায় আনা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার লালদীঘিস্থ ব্রাক্ষ্ম মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসব মুখর পরিবেশে পালনের লক্ষ্যে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে এসব কথা জানিয়েছেন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা।
তারা বলেন, উখিয়া রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় হওয়ায় সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ একটি গোষ্টি ক্যাম্পের পাশে থাকা মন্ডপসহ ৭টি, কক্সবাজার শহরের কিশোর গ্যাং এবং ছিনতাইকারীদের কারণে বৈদ্য ঘোনা, গোলদিঘির পাড়, বিজিবি ক্যাম্পসহ ৫টি এবং পেকুয়া উপজেলার ৬টি মন্ডপকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি গোষ্টি দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে তৎপর। তারা সুযোগ পেলেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় এ উৎসব দূর্গা পূজায় হামলার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে।
কক্সবাজার একটি অসাম্প্রদায়িক জেলা দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বক্তারা আরো বলেন, প্রতি বছর প্রতিমা বির্সজনের সময় উপস্থিত পাঁচভাগের তিনভাগই ভিন্ন ধর্মের লোকজন উৎসবের আনন্দ উপভোগ করেন। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেয়া তথ্য মতে, এবারের ৩০৫টি মন্ডপে শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে ১৪৮টিতে প্রতিমা ও ১৫৭টি ঘট পূজা। তবে, প্রতিমা পূজাকে ঘিরে দূর্গপূজার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ইতিমধ্যে মহালয়ার শুভ আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে শারদীয় দূর্গাপূজার ক্ষণগণনা। এবার দেবী দুর্গা গজে (হাতি) চড়ে মর্ত্যলোকে আসবেন। ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মালম্বীদের বৃহৎ এ উৎসব শেষ হবে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত তালিকায় দেখা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলায় ১৭টিতে প্রতিমা পূজা ও ১১টি ঘট পূজা, ঈদগাঁও উপজেলায় ১৭টি প্রতিমা পূঁজা ও ৯টিতে ঘট পূজা, কক্সবাজার পৌরসভায় ১১টিতে প্রতিমা পূজা ও ১০টিতে ঘট পূজা, রামু উপজেলায় ২২টিতে প্রতিমা পূজা ও ১০টিতে ঘট পূজা, চকরিয়া উপজেলায় (পৌরসভাসহ) ৪৮টিতে প্রতিমা পূজা ও ৪৩টিতে ঘট পূজা, পেকুয়া উপজেলায় ৫টিতে প্রতিমা পূজা ও ৪টিতে ঘট পূজা, কুতুবদিয়া উপজেলায় ১৩টিতে প্রতিমা পূজা ও ৩২টিতে ঘট পূজা, মহেশখালী উপজেলায় (পৌরসভাসহ) ১টিতে প্রতিমা পূজা ও ৩০টিতে ঘট পূজা, উখিয়া উপজেলায় ৭টিতে প্রতিমা পূজা ও ৮টিতে ঘট পূজা, টেকনাফ উপজেলায় ৬টিতে প্রতিমা পূজা ও উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১টিতে প্রতিমা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জল কর।
সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক মুহাম্মদ আলী জিন্নাত, সাংবাদিক মমতাজ উদ্দিন বাহারি, শামসুল হক শারেক, পূজা কমিটির সহ-সভাপতি সাংবাদিক দীপক শর্মা দীপু, উদয় শংকর পাল মিঠু প্রমূখ।
জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি পূজা মন্ডপের কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে নিয়ে কাজ করছি। দূর্গা পূজায় যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
জেলার ৩০৫টি মণ্ডপের জন্য ১৫৩ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। পূজার আয়োজন ও ঐতিহ্য মতে সকল মণ্ডপে বরাদ্দ বন্টন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন পূজা উদযাপন পরিষদ নেতারা। ###