এস এম হুমায়ুন কবির :
শতাধিক পাওনাদারের টাকা না দিয়ে লাপাত্তা ইটভাটা মালিক। পাওনাদারদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিখোঁজ ইটভাটা মালিককে খোঁজে বের করা হলো। পরে সেই মালিকের ইটভাটা নিলামে বিক্রয় করে প্রাপ্ত অর্থ পরিশোধ করা হলো ওইসব পাওনাদারদের। ইটভাটা মালিক সমিতির সহায়তায় দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা চালিয়ে পাওনাদারের টাকা জনসমক্ষে ফিরিয়ে দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করলেন- কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু, ঈদগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল। ব্যতিক্রমী এ ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের রামু উপজেলার চাকমারকুল এলাকায়।
পাওনাদারের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার এ মহৎ কর্মযজ্ঞে এমপি কমল ছাড়া আরও ভূমিকা রাখেন- রামু উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ি আবদুল গফুর কোম্পানী, সহ সভাপতি ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো কোম্পানী, সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন কোম্পানী, অর্থ সম্পাদক কক্সবাজার জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য নুরুল হক কোম্পানী ও নির্বাহী সদস্য মো. জামাল উদ্দিন কোম্পানী।
জানা গেছে- কক্সবাজার সদর উপজেলার বাংলাবাজার মৌলভীপাড়া এলাকার মালেকুজ্জামানের ছেলে মৌলভী রফিক উল্লাহ ২০১২ সালে চাকমারকুল ইউনিয়নে এমএসআর ইটভাটা চালু করেন। চালুর পর থেকে ইটভাটায় বিনিয়োগসহ নানা অজুহাতে স্থানীয় এবং আশপাশের শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমান টাকা ধার নেন।
লেনদেনের বিপুল পরিমান অর্থ ফেরত দিতে না পেরে ২০১৯ সাল থেকে উধাও হয়ে যান ইটভাটা মালিক মৌলভী রফিক উল্লাহ। পাওনাদাররাও খোঁজাখুজি করে ইটভাটা মালিকের কোন হদিস পাচ্ছিলো না। ফলে বিনিয়োগের অজুহাতে ধার দেয়া অর্থ ফেরত না পেয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়েন পাওনাদাররা।
অবশেষে নিরুপায় পাওনাদাররা দলবদ্ধ হয়ে বিষয়টি সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমলের কাছে অবহিত করেন। সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলও বিভিন্নস্থানে মৌলভী রফিক উল্লাহকে খোঁজাখুজি শুরু করেন। দীর্ঘদিন খোঁজাখুজির পর ১ বছর পূর্বে সন্ধান পান এ ইটভাটা মালিকের।
পরে ইটভাটা মালিক ও পাওনাদারদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে এমপি কমল ও ইটভাটা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। ওই বৈঠকে মৌলভী রফিক উল্লাহ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চেক, স্ট্যাম্প, সাদা কাগজে চুক্তি ও মৌখিকভাবে টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্তু তিনি জানান- ইটভাটা ছাড়া তার আর কোন সম্পদ নেই।
এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মৌলভী রফিক উল্লাহর আর কোন সম্পদ আছে কিনা তা নিয়ে অনুসন্ধান চালান বিচারকরা। অনুসন্ধানে ইটভাটা ছাড়া আর কোন সম্পদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ফলে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধের উদ্দেশ্যে মৌলভী রফিক উল্লাহর সম্মতিতে ইটভাটা প্রকাশ্যে নিলাম দেয়া হয়। এতে সর্বোচ্চ দরে মৌলভী রফিক উল্লাহর এমএসআর নামের ইটভাটাটি হোছন আলী নামের এক ব্যক্তি ক্রয় করেন। পরে নিলামে প্রাপ্ত টাকা থেকে আনুপাতিক হারে পাওনাদারদের পরিশোধ করা হয়।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রামু উপজেলার চাকমারকুল ও ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের সীমান্তবতর্ী তেচ্ছিপুল স্টেশন চত্বরে প্যান্ডেল টাঙিয়ে এবং মঞ্চে মাইকে ঘোষনা দিয়ে শত শত জনতার সামনে মৌলভী রফিক উল্লাহর পাওনাদারদের এসব অর্থ বিতরণ করেন- সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল ও ইটভাটা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
এখানে আরো উল্লেখ্য পাওনাদারদের টাকা পরিশোধের উদ্দেশ্যে প্রথম দফা পাওনাদারের খোঁজে মাইকিং করা হয়। ২য় দফা মাইকিং করা হয় ইটভাটা নিলাম দেয়ার জন্য। সর্বশেষ নিলামে প্রাপ্ত টাকা পাওনাদারদের বিতরণের জন্যও মাইকিং করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জানান- দফায় দফায় বৈঠক ও মাইকিং করার পর শতাধিক পাওনাদার মৌলভী রফিক উল্লাহর কাছ থেকে সাড়ে ৭ কোটি টাকা দাবি করেন। এরমধ্যে পাওনাদারদের প্রমানাদি ও মৌলভী রফিক উল্লাহর স্বীকারোক্তি মতে ৭৫ জন পাওনাদারের ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকার হিসাব শনাক্ত করেন তাঁরা।
তিনি আরো জানান- ইটভাটা নিলাম দিয়ে প্রাপ্ত অর্থ পাওনাদার ও ইটভাটার জমিদারদের পরিশোধ করা হয়েছে। তবে পাওনাদার ও ইটভাটার জমিদারদের পুরোপুরি টাকা পরিশোধের মতো অর্থ সংকট ছিলো। তাই নিলামে প্রাপ্ত অর্থ পাওনাদারদের টাকার পরিমান অনুযায়ি শতকরা হারে বন্টন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর হলেও পাওনা টাকা ফিরে পেয়েছেন ৭৫ জন পাওনাদার।
পাওনাদারদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান- সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের এমন আন্তরিক হস্তক্ষেপে পাওনা টাকা ফিরে পেয়ে তাঁরা উৎফুল্ল। তারা আরো জানান- অনেক পাওনাদারের লেনদেনের লিখিত প্রমান ছিলো। আবার অনেক পাওনাদারের লেনদেন ছিলো মৌখিকভাবে। কিন্তু এখন প্রমান থাকা এবং মৌখিকভাবে লেনদেন করা উভয় পাওনাদারদের টাকা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। যা তাদের জন্য সৌভাগ্যের। অসংখ্য পাওনাদারের বিপুল পরিমান এ টাকা ফিরিয়ে দিতে গিয়ে দীর্ঘদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এমপি কমল। তারা এমপি কমলের এ ত্যাগ কখনো ভুলবেননা।
Homaun
Homaun Kabir