বিডি প্রতিবেদক :
চলতি পর্যটন মৌসুমের প্রথম কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। প্রথম যাত্রায় বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সকাল সোয়া ৭ টার দিকে সাড়ে ৭শ’ যাত্রী নিয়ে শহরের বিআইডব্লিউ ঘাট ছেড়ে যায় কর্ণফুলী এক্সপ্রেস নামে বিলাস বহুল জাহাজটি। এর আগে বৈরী আবহাওয়ার কারণে চলতি বছরের ৩১ মার্চ কক্সবাজার ও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
আবার, গত ১ অক্টোবর কক্সবাজারের পর্যটন মেলায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন। তিনি বলেছিলেন, নাফ নদীর বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর দেখা দেয়ায় আপাতত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেবিপপ মন্ত্রণালয়। তবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে সাগরপথে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন পর্যটকরা। এ রুটে পর্যটক পরিবহনে এগিয়ে আসছে বিভিন্ন ক্রুজশিপ।
সেই ঘোষণায় বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) কর্ণফুলী এক্সপ্রেস জাহাজ ৭৫০ জন যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন রওনা দেয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় মৌসুমে প্রথমবারের মতো কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিন গেছে। জাহাজে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি টিমও ছিলো। বেলা একটার দিকে জাহাজটি সেন্টমার্টিন পৌঁছেছে এবং আগের নিয়মে ৩ টায় আবার কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে সেন্টমার্টিন ত্যাগ করে জাহাজটি। আগামী ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম-সেন্টমার্টিনে চলাচল শুরু করবে ‘এমভি বে ওয়ান’। শিগগির এ বহরে যুক্ত হবে ‘বারো আওলিয়া’ নামে নতুন আরেকটি ক্রুজশিপ।
তবে, এটি পর্যটকদের জন্য ব্যয়বহুল হওয়ায় আগের নিয়মে টেকনাফ থেকেই জাহাজ চালানোর উদ্যোগ চান কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, অত্যধিক জ্বালানী খরচে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ পরিচালনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এতেবেড়ে যাবে পর্যটকদের ব্যয়ও। তাই, জাহাজ মালিক, পর্যটক ও ট্যুর অপারেটররা চাচ্ছেন কম খরছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন ভ্রমণ। তাই বিকল্প উপায়ে এ নৌ-পথে জাহাজ চালানোর উদ্যোগ নেয়া সময়ের দাবি বলে মন্তব্য তাঁদের।
সী-ক্রোজ অপারেটরস ওনার্স এসাসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব) সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, পর্যটন শিল্পকে ধংসের হাত থেকে রক্ষা করতে নাফনদীর বিকল্প পথে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জাহাজ পারাপার সম্ভব। নাফনদীর নাব্যতা শংকট এড়াতে বর্তমান দমদমিয়া ঘাটের বিকল্প হিসেবে টেকনাফের সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক সংলগ্ন সৈকত থেকে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা করা যায়। ওখানে জাহাজ মালিকদের নিজস্ব অর্থায়নে একটি অস্থায়ী টেকসই কাঠের জেটি নির্মাণ করে পল্টুন স্থাপনের মাধ্যমে জাহাজ চলাচল শুরু করলে পর্যটটকদের ঝুঁকিমুক্ত ভাবে পার করানো সম্ভব। সাবরাং পয়েন্ট থেকে জাহাজ বের হয়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পড়ায় জাহাজগুলো সরাসরী সেন্টমার্টিন জেটি ঘাটে পৌঁছানো অধিকতর সহজ। এতে করে ভাড়াও বাড়বে না সময়ও কম লাগবে।
স্কোয়াব সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, দু’দশক ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমন নিশ্চিত করে আসছি আমরা। পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে দেশের রাজস্ব খাতে বড় অবদান রাখা হচ্ছে। কক্সবাজারে প্রতিবছর ভ্রমণে আসা ২০-২৫ লাখ পর্যটকের ৭০ শতাংশের চাহিদা সেন্টমার্টিন ভ্রমন। পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্য রক্ষা করেই পর্যটকদের সেন্টমার্টিন ভ্রমন করানো হয়। তাতে কয়েশ মানুষের বিনিয়োগে টেকনাফ, উখিয়া ও সেন্টমার্টিনে গড়ে উঠেছে উন্নত মানের হোটেল-মোটেল রিসোর্ট ও অসংখ্য রেস্তোরা। এতে সৃষ্টি হয়েছে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটন মৌসুমে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথে ১০টি জাহাজ চলাচল করায় কম খরচে পর্যটকরা প্রবালদ্বীপ ভ্রমণের সুযোগ পান। কিন্তু বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্তে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা খুবই হতাশার ।
ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন সভাপিত রেজাউল করিম বলেন, নাফনদীর কয়েকটি অংশে ডুবুচর পুরোনো ইস্যু। নাব্যতা শংকটে মাঝে মাঝে ডুবোচরে পর্যটকসহ জাহাজ আটকা পড়ার খবর গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। হয়ত এ কারণে সরকার চাইছে আপাতত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকুক। তবে, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিনের জাহাজ চলাচলের অনুমতির আলোকে ৬ অক্টোবর থেকে কর্ণফূলী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের চাপ এবং পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব দেখে আমরা বিকল্প উপায় খুঁজেছি। কক্সবাজারের পর্যটনশিল্প সচলে সবার সহযোগিতা কাম্য।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, প্রতি বছর অন্তত ৩ লাখ পর্যটক টেকনাফ থেকে জাহাজে সেন্টমার্টিন ভ্রমনে যান। সেন্টমার্টিনে ১০ হাজার মানুষ পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন যেতে নাফ নদীর পশ্চিমে টেকনাফ উপকূল এবং পূর্বে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সীমানা দেখা যায়। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে ৮৫ কিলোমিটার মেরিনড্রাইভ দিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত আর সবুজ পাহাড়ের সম্মিলন দেখে জাহাজ ঘাটে পৌঁছা পর্যন্ত ভ্রমণে যোগ হয় বর্ণিল অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনগামী জাহাজের পিছু নেয় গাঙচিলের পাল। উড়ন্ত গাঙচিলের সঙ্গ নিয়ে পর্যটকের আসা-যাওয়ার বিরল দৃশ্য পৃথিবীর অন্য কোথাও আছে কিনা সন্দেহ। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজ পরিচালনা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বর্তমানে জ্বালানী খরচও অত্যধিক। তাই জাহাজ মালিকদের পাশাপাশি পর্যটকেরা চাচ্ছেন কম খরচে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন ভ্রমণ। তাই বিকল্প উপায়ে জাহাজ চলাচলের উদ্যোগ নেয়া সময়ের দাবি।
টুয়াক সাধারণ সম্পাদক মুনিবুর রহমান টিটু বলেন, যদি সাবরাং পয়েন্টে নতুন করে পর্যটক পারাপারের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে পর্যটকদের ভ্রমনের বিড়ম্বনা দূর হবে। পাশাপাশি অব্যাহত থাকবে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নেরধারাও।..
সায়ীদ
সায়ীদ আলমগীর
এক্ষেত্রে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্থক্ষেপ এবং জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা কামনা করছি।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, নাব্যতা সংকটের কারণে আপাতত টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে, পরীক্ষামূলক ভাবে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চলাচল করবে। পর্যটন সংশিল্পদের প্রস্তাবনা উর্ধতন মহলের কাছে উপস্থাপন করা হবে। অবস্থা বুঝে পরবতী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ###