মুকুল কান্তি দাশ :
কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারায় দ্রæতগতির পিকআপ চাপায় নিহত সেই আট ভাইয়ের পরিবারকে নবনির্মিত সেমিপাঁকা ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (১২ অক্টোবর) সকালে এসব ঘর হস্তাস্তর করা হয়। এর আগে গত ২১ জুলাই এই আট পরিবারের হাতে জমির দলিল, খতিয়ান হস্তান্তর করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) রাহাত উজ্জ জামান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) স্ইাদুল ইসলাম, উপজেলা টেকনিশিয়ান এরশাদুল হক, স্থানীয় মেম্বারসহ সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তারা।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মালুমঘাট হাইওয়ের পূর্বে পাশে মনোরম পরিবেশে দুই সারিকে সেমিপাঁকা আটটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরে দু্িট রুম, একটি রান্না ঘর, একটি বাথরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও সুপেয় পানির জন্য টিউবওয়েল এবং বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ওইসব পরিবার তাদের সংসারের ব্যবহার সামগ্রী সাজাতে শুরু করেছে। কয়েকদিনের মধ্যে তারা পুরোপুরিভাবে বসবাস শুরু করবেন।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ ফেব্রæয়ারি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট নার্সারি এলাকায় মৃত পিতা সুরেশ চন্দ্র সুশীলের শ্রাদ্ধনুষ্টান পূর্বে ক্ষুদান্ন দান করে বাড়ি ফেরার জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। এসময় কক্সবাজারমুখি একটি দ্রæতগতির সবজি বোঝাই পিকআপ তাদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ছয় ভাই অনুপম সুশীল, নিরুপম সুশীল, দীপক সুশীল, স্মরণ সুশীল, চম্পক সুশীল ও রক্তিম সুশীল। এতে গুরুতর আহত হন নিহতদের ছোট ভাই-বোন সাকী সুশীল এবং প্লাবন সুশীল। পরে এই পরিবারের সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নগদ অর্থ এবং প্রতিটি নিহত ও আহত পরিবারের জন্য একটি করে ঘর উপহার হিসেবে দেয়ার আশ্বাস দেন।
সরকারের পক্ষ থেকে ঘর পেয়ে আবেগাপ্লুত কন্ঠে প্লাবন সুশীল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে প্রতিটি মানুষ যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের ঋণ কখনও শোধ করতে পারবোনা। আমরা এতোদিন সরকারি জায়গার উপর বসবাস করে আসছিলাম। আমাদের একটা স্থায়ী ঠিকানা হলো।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় আমরা মাথাগুজার ঠাঁই পেয়েছি। তিনি আর্থিক থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, এই পরিবারের উপর বড় ধরনের একটা ট্রাজেডি ঘটে গেছে। তাদের পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করা আমাদের পক্ষ সম্ভব না। তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টিকে খুবই গুরু সহকারে বিবেচনায় নিয়েছেন। তাদের প্রতিটি পরিবারকে মুবিজবর্ষের ঘর হস্তান্তরের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসন মো.মামুনুর রশিদ।
এই প্রকল্পের আওতায় ডুলাহাজারায় সড়কে প্রাণ হারানো সেই আট পরিবার অর্থাৎ মা মৃণালীনি সুশীল, পপি সুশীল, গীতা সুশীল, সাকী সুশীল, তৃষ্ণা সুশীল, দেবিকা সুশীল, পূজা সুশীল ও শান্তা সুশীলকে ইতোপূর্বে ঘরের চাবি, জমির দলিল এবং খতিয়ান হস্তান্তর করা হয়েছে। পরবর্তীতে ১২ অক্টোবর তাদের নবনির্মিত ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।
ইউএনও জেপি দেওয়ান আরও বলেন, ডুলাহাজারায় সড়কে প্রাণ হারানো সেই পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন এবং সর্বস্তরের মানুষ সবসময় তাদের পাশে ছিলো। ভবিষ্যতেও এই পরিবারের পাশে থাকবেন বলে আশ্বস্ত করেন ইউএনও।