বিডি প্রতিবেদক :
কক্সবাজার সৈকতের কয়েকটি পয়েন্টে হঠাৎ নানা প্রজাতির মাছ ভেসে আসতে থাকে। মাছ দেখে উৎসুক জনতা আর সৈকতে থাকা পর্যটকরা ভিড় করে, এ দৃশ্য দেখে আর মাছ কুড়াতে থাকে। কুড়িয়ে পাওয়া মাছ বিক্রি করেছেন পর্যটকরা। কি কারনে কোথা থেকে এসব মাছ ভেসে আসছে তার নির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সমুদ্র গবেষণার একটি বৈজ্ঞানিক দল স্থান পরিদর্শন করে স্যাম্পল সংগ্রহ করেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা কারণ জানাবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
ট্রলারে রাখার জায়গা সংকুলান না হওয়ায় জেলেদের আটকে পড়া অতিরিক্ত এসব মাছ ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। যেগুলো জোয়ার সময় ভেসে এসে বালিয়াড়িতে পড়ে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত সৈকতের লাবনী, শৈবাল ও ডায়াবেটিক পয়েন্টে এসব মাছ ভেসে আসে। মৃত মাছগুলো দেখতে ও কুড়াতে উৎসুক জনতা ভিড় জমায় সৈকতে। সকালে হাটতে যাওয়া অনেকে এ চিত্র মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে।
গত সপ্তাহখানেক আগে সৈকতের কলাতলী থেকে বেলী হ্যাচারী পয়েন্ট পর্যন্ত অন্তত এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভেসে এসেছিল শত শত মৃত জেলিফিশ।
লাবনী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক আর স্থানীয়রা কুড়িয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার মাছ। সেখানে আছে পোয়া, ফাইস্যা ও ছোট ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ। মূলত টানা জালে এসব মাছ ধরা পড়ার পর ট্রলারে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় জেলেরা সাগরের পানিতে ফেলে দিয়েছে। এসময় অনেক জেলে আটকে পড়া মাছসহ জালও ফেলে গেছে।
এফবি আরিফ নামের ট্রলারের মাঝি আবুল কাসেম বলেন, বৃহস্পতিবার ১০ টার দিকে লাবনী ও শৈবাল পয়েন্টের মাঝামাঝি জায়গায় জাল ফেলেছিলেন। এতে তার ট্রলারের জাল টানার সময় বেশী ওজনের অনুভব হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মাছ আটকা পড়ার ব্যাপারে ধারণা করছিলেন।
” আমাদের ট্রলার ছোট। আমরা ট্রলারে নেওয়ার পরও অনেক মাছ জালে থেকে যায়। সেগুলো সাগরে ফেলে চলে যাচ্ছি। আমাদের মতো আরও অনেকে এভাবে মাছ সাগরে ফেলে দিয়েছে। চলতি মৌসুমে আজকে (বৃহস্পতিবার) সবচেয়ে বেশি মাছ ধরা পড়েছে। ”
কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলী এলাকার কাউন্সিলর এমএ মনজুর বলেন, কক্সবাজার সৈকতে অস্বাভাবিক ভাবে মরা মাছ ভেসে এসেছে। খবরটি জানার পর দর্শনার্থী সবাই ইচ্ছামতো কুড়িয়ে নিয়েছে এসব মাছ। কিছুদিন আগে ভেসে আসা জেলীফিশ এখনও পড়ে আছে সৈকত জুড়ে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম হোসেন বলেন, যখন সৈকতে মাছ পড়ে আছে। আমিও নিয়েছি এক বস্তা। অনেকে মাছ কুড়িয়ে নিয়েছে। পোয়া, ইলিশ, ছুরিসহ বিভিন্ন রকমের মাছ রয়েছে এখানে। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন, অতিরিক্ত মাছ ধরা পড়ায় জাল তুলতে না পেরে জেলেরা ফেলে দিয়েছে।
স্থানীয়দের পাশাপাশি সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও ভেসে আসা এসব কুড়িয়ে নিচ্ছেন। স্থানীয়দের অনেকে কুড়িয়ে নেওয়া মাছ বস্তাভর্তি করে সৈকতেই বিক্রি করছেন।
ঢাকার আজিমপুর থেকে বেড়াতে আসা আহমদ হোসেন বলেন, সৈকতে ভেসে আসা এসব মাছ অন্যদের দেখা-দেখি তিনি কুড়িয়েছেন। তার বেড়াতে আসা অনেকেও মাছ কুড়িয়েছেন।
অনেক পর্যটক কুড়িয়ে নেওয়া এসব মাছ নিয়ে বাড়ী ফিরছেন বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নুর বলেন, সকালে সৈকত জুড়ে মাছ ভেসে আসার খবরে তিনি বস্তা নিয়ে আসেন। তার মত স্থানীয় অনেকে মাছ সংগ্রহে আসে।
” অনেকে কুড়িয়ে নেওয়া মাছ বালিয়াড়িতে জড়ো করে বস্তা ভর্তি করে বিক্রি করেছে। আবার অনেকে বস্তায় করে নিয়ে যাচ্ছেন। ”
এসব জেলেদের জালে ধরা অতিরিক্ত মাছ বলে ধারণা স্থানীয় এ বাসিন্দার।
সৈকতে গোসলে নামা পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সী-সেইফ লাইফগার্ডের ইনচার্জ ওসমান গণি বলেন, সকালে জোয়ার শুরু হওয়ার পর থেকে সৈকতে মাছ ভেসে আসতে দেখা যায়। তারপর পর্যটক ও স্থানীয়রা এসব মাছ কুড়িয়ে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ” ধারণা করা হচ্ছে, জেলেদের জালে অতিরিক্ত মাছ ধরা পড়েছে। তাই অতিরিক্ত মাছগুলো নিতে না পারে সাগরে ফেলে দিচ্ছে জেলেরা। ”
বিচকর্মি মাহাবুবুর রহমান বলেন, ফেলে দেয়া মাছগুলো মূলত সৈকতে পড়ে আছে। সেগুলো সবাই নিয়ে যাচ্ছে। সৈকতে তৈরি হয়েছে এক উৎসব মুখর পরিবেশ।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, সকাল থেকে সৈকতের দীর্ঘ এলাকা জুড়ে মাছ ভেসে আসার খবরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এতে পর্যটক ও স্থানীয়দের মাঝে মাছ সংগ্রহে অন্যরকম উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। যে যেভাবে পারছেন, সেভাবেই মাছ সংগ্রহ করেছেন।
প্রাথমিকভাবে ট্রলারে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় জালে আটকা পড়া এসব অতিরিক্ত মাছ সাগরে ফেলে দেওয়ার তথ্য পেয়েছেন বলে জানান প্রশাসনের এ কর্মকর্তা।
মাসুম জানান, তারপরও বিষক্রিয়ায় নাকি অতিরিক্ত ধরা পড়ায় এসব মাছ সাগরে ফেলে দেওয়া হয়েছে; এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বদরুজ্জামান জানান, বালিয়াড়িতে মাছ আসার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তা তদারক করে দেখেছি। অতিরিক্ত মাছ বোঝাই ট্রলার উল্টে এ ঘটনা ঘটেছে। পোয়া, ছুরি, চাপিলাসহ নানা প্রজাতির ছোট মাছ রয়েছে এখানে। অন্যকোন বিপর্যয় নয় বলে মনে হচ্ছে। এরপরও আমরা সঠিক বিষয়টি দ্রুত নির্ণয় করতে পারবো বলে আশা করছি।
কক্সবাজারের রামুতে অবস্থিত সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি বৈজ্ঞানিক দল মাছ পাওয়ার খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বেশ কিছু সিম্পল সংগ্রহ করেছেন।
সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান বিভাগের জাগিয়া প্রধান মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, এই মাছগুলো কেন এসেছে কি কারনে এসেছে তা জানার জন্য আমাদের কয়েকদিন সময় লাগবে। আমরা সিম্পল সংগ্রহ করে তা ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর জানতে পারবো। কোন ব্যাকটেরিয়া আছে কিনা। এসব মাছের সাথে কোন বিষক্রিয়া বা ক্ষতিকারক কিছু আছে কিনা। সবগুলো বিষয় গবেষণাগারে দেখা হবে।