বিডি প্রতিবেদক :
উখিয়া জালিয়াপালং মোহাম্মদ শফির বিল এলাকায় সন্ত্রাসী ও দখলবাজচক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে অসহায় একটি পরিবার। তারা ভয়ে ঘরে থাকতে পারছে না। স্কুল পড়ুয়া ছেলেসহ সন্তানদের নিয়ে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। থানায় গিয়েও প্রতিকার পাননি। উল্টো পুলিশের আশকারায় বেপরোয়া দখলবাজরা।
এপরিস্থিতিতে ন্যায় বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংবাদ সম্মেলন করেছে নির্যাতিত পরিবার। ন্যায় বিচার না পেলে ৭ ডিসেম্বর আত্মহত্যা করবে বলে হুমকিও দিয়েছে পরিবারটি।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব বক্তব্য তুলে ধরেছেন ভুক্তভোগী বনি আলম।
তিনি উখিয়ার মোহাম্মদ শফির বিল এলাকার মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে।
বনি আলম বলেন, ইনানী রয়েল টিউলিপের পাশে মেরিন ড্রাইভের কাছে আমার একখন্ড জমি আছে। সেখানে আমার দোকান/রেষ্টুরেন্ট, বাড়ি, পুকুর ইত্যাদি রয়েছে। তাতে নজরে পড়ে চিহ্নিত দখলবাজচক্রের। চক্রটি গত ২ নভেম্বর আমার বাড়ী এবং দোকান ডাকাতি করে। এ সময় মূর্হর্মুহু গুলি ও পরিবারের লোকজনদের কোপায়। গুলিবিদ্ধ হয় আমার স্ত্রী ফরিদা, শাহিনা আক্তার, জান্নাতুল ফেরদৌস রিফা, মেয়েসহ বাড়ীর সবাই। পাড়া প্রতিবেশীরা আমাদের উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। নির্মমতা এমন ছিল যে, বাড়ীতে থাকা আমার এক বছরের শিশু নাতি আবাবিল পর্যন্ত রেহাই পায়নি।
ঘটনাকালে বাড়ী থেকে ১০০/২০০ গজ দূরত্বে পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন দিই। থানায় ফোন দিই। ৯৯৯ এ ফোন দিই। যথাসময়ে কেউ আসেনি। ইতোমধ্যে ডাকাতরা সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা দিতে ব্যর্থ হয়ে বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হই। শুনানি শেষে মামলা রেকর্ড করতে থানাকে আদেশ দেন বিচারক।
গত ৬ নভেম্বর মামলাটি অফিসার ইনচার্জ উখিয়ার টেবিলে যাওয়ার পর রেকর্ড না করে ফেলে রাখেন। উল্টো প্রধান অভিযুক্ত মোহাম্মদ তৈয়বকে ডেকে নিয়ে উল্টো যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে গত ৮ নভেম্বর মামলা নেন। যার জি.আর-১৩৯১/২০২২। পরবর্তীতে আমার মামলাটিও রেকর্ড করেন। যার মামলা নং জি.আর-১৩৯২/২০২২। আমার মামলার প্রধান আসামি মোহাম্মদ তৈয়ব জালিয়াপালং মোহাম্মদ শফির বিল এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, কাদির হোসেনের ছেলে আমিন প্রকাশ বর্মাইয়া আমিন, জুম্মা পাড়ার মৃত জালাল আহমেদের ছেলে শাহজাহান, পাটুয়ারটেকের মৃত জাফর আলমের ছেলে আবু সিদ্দিক, মৃত জালাল আহমদের ছেলে আমান উল্লাহ, মোহাম্মদ শফির বিলের মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে কাশেম, রানা, আব্দুল করিমের ছেলে রুবেল, সোহেল, আব্দুস সালামের ছেলে হারুন, চোয়াংখালীর বদি আলমের ছেলে মোজাম্মেল হক।
বনি আলমের অভিযোগ, আমার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কাউসার হামিদ। তাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর ছুটিতে পাঠিয়ে দিলেন, যাতে আসামীদের কোন ক্ষতি না হয়। ইতোমধ্যে আমরা হাসপাতালে থাকা অবস্থায় আসামীরা আমার বাড়ী, রেস্টুরেন্ট, দোকান, পুকুরের অস্বিত্ব পর্যন্ত রাখেনি। অন্যদিকে র্যাব সদস্যরা তিনজন আসামীকে গ্রেফতার করে থানায় দিলে, থানা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে চালান দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য সে একজন আসামী মোজাম্মেল নিজেকে জালিয়াতির মাধ্যমে মেম্বার পরিচয় দিয়ে জামিনে বেরিয়ে যান। অথচ সে এখন মেম্বারও না, তার ওয়ার্ডে বর্তমানে মেম্বার জাহিদ আলম। আসামী কোন এককালে মেম্বার ছিলেন সেই কাগজপত্র জাল করে চেয়ারম্যানের জাল প্রত্যয়নপত্র দিয়ে জামিন নেন। অর্থাৎ ভিকটিমের শরীর থেকে গুলি বের হওয়ায় আগেই আসামী জেল থেকে বেরিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে জামিনে যাওয়া আসামী প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে ঘটনাস্থলে।
এতে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে ন্যায় বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চান তিনি। আইনী সহযোগিতা না পেলে আহত সবাইকে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে ঝাপ দেবে বলে হুমকি দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী বনি আলমের স্ত্রী ফরিদা বেগম, মেয়ে শাহেনা আকতার, জান্নাতুল ফেরদৌস রিপা, ছেলে মহি উদ্দিন, জামাতা জাফর উল্লাহ, কাউছার ও রাসেল উপস্থিত ছিলেন।
এব্যাপারে উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মামলা আছে। আবার অনেক আসামি জামিনেও রয়েছে। পুলিশ ফৌজদারী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। জমি দখল বেদখলে কাজ করতে পারে না। মামলায় কেউ জমিনে না থাকলে অবশ্যই গ্রেফতার করবে।