শিরোনাম :
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফরে আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা উখিয়ায় সংরক্ষিত বন থেকে বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন উখিয়ায় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে এডভোকেসী সভা অনুষ্ঠিত “আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে মানবিক বাংলাদেশ গড়তে হবে -মুহাম্মদ শাহজাহান পেকুয়ায় বিয়ের দাবীতে প্রবাসীর বাড়িতে তরুণীর বিষপান পেকুয়ায় ব্যবসায়ীকে হামলা ও দোকান লুটপাটের প্রতিবাদে মানববন্ধন কক্সবাজারে মার্কিন নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেপ্তার আসামির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কক্সবাজারে নারীর প্রতি সংহিসতা নিরোধে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল বেতুয়ায় ১৪ বসতবাড়ী জ্বলে-পুড়ে ছাঁইঃক্ষয়ক্ষতি প্রায় ২কোটি টাকা

রোহিঙ্গাদের ভাষানচরে নিতে বন্ধু রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা চেয়ে ২ প্রস্তাব সরকারের

নিউজ রুম / ৬০ বার পড়ছে
আপলোড : শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০১:২২ অপরাহ্ন

সাকলাইন আলিফ:
জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের কক্সবাজার থেকে ভাষানচরে নিতে বন্ধু রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা চেয়ে দুটি প্রস্তাব দিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া আজ বৃহষ্পতিবার ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, বন্ধু রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে দুটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রথম প্রস্তাব হলো রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাষানচরে নেওয়ার খরচ বহন করা। আর দ্বিতীয় প্রস্তাবটি হলো- রোহিঙ্গাদের জন্য ভাষানচরে আরও নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণের সঙ্গে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম’ বিষয়ক সভায় এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। যেখানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন, মানবিক কার্যক্রম বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়াও পৃথক অনুষ্ঠানে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য কামনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
ব্রিফিংয়ের আগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ১৭ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার এবং যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত প্রমুখ।
প্রথম প্রস্তাব প্রসঙ্গে মূখ্য সচিব বলেন, সরকার ভাষানচরে ১ লক্ষ লোকের বসবাসের জন্য আবাসন তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে সেখানে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিককে নেওয়া হয়েছে। আরও ৭০ হাজার লোক সেখানে নিতে চাই। এই স্থানান্তর ব্যয়বহুল বিষয়। আমরা আশা করছি যে, বন্ধু রাষ্ট্র যারা আমাদের সঙ্গে কাজ করে, তারা এই লোকদেরকে কক্সবাজার থেকে ভাষানচরে নেওয়ার খরচ বহন করবে। প্রধানমন্ত্রী এটি সিরিয়াসলি চাইছেন।
দ্বিতীয় প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভাষানচরে যে জমি আছে তার তিনভাগের একভাগ আমরা ব্যবহার করেছি। বাকি দুই ভাগ জায়গাতেও প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন অবকাঠামো নির্মিত হোক এবং আরও রোহিঙ্গাদের সেখানে নেওয়া হোক।
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ সেখানে নতুন অবকাঠামো নির্মাণে (বিদেশী বন্ধুদের কাছে) সহায়তা চেয়েছে”।
তিনি জানান, বৈঠকে বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে গুরুত্ব দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অত্যাধিক ঘনবসতি ও তাদের মানবেতর জীবন যাপনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে অবস্থানের কারণে সেখানে বেশ কিছু সামাজিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিরোধ তৈরি হচ্ছে, মারামারি হচ্ছে, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটছে, নিজেদের মধ্যে হত্যাকান্ড ঘটেছে, অপহরণ ঘটেছে, পাচার ঘটেছে, নিজেদের বিরোধের কারণে জিম্মি করার ঘটনা ঘটছে। এর একটা সামাজিক কুফল আছে। অনেকে বিভিন্ন ধরনের মাদকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, এসব কারণে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলেছি যে, যত দ্রুততম সময়ে আমরা যত বেশি লোককে ভাষাণচরে নিয়ে যাবো ততোই তাদের নিরাপত্তা বাড়বে, তেমনি তাদের সন্তানদের বেড়ে ওঠা ভালো হবে।
ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান এবং হাস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনসহ কৃষি কাজের সুযোগ ও অধিকতর ভালো পরিবেশ ও জীবন যাপনের সুযোগের কথা জানান মূখ্য সচিব।
এছাড়াও ভাষানচরে নেওয়া রোহিঙ্গারা কিছুদিন পর পর কক্সবাজারে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রত্যাশা অনুযায়ী সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব বলেন, আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে মানবিক সহায়তা পাচ্ছি।
২০২২ সালে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানবিক কাজ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে আমাদের দিক থেকে চাওয়া ছিল ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু তার ৬২ শতাংশ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা যে বৈদেশিক সহায়তা চাই সেটা আমরা পাইনি। আমরা এ সহায়তা আরও বাড়াতে বলেছি।
তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, শুধু ভাষানচরকে তৈরি করার জন্য সরকার প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদী অবস্থানের ফলে পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের আমরা জানিয়েছি যে, এই রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থানের ফলে বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হচ্ছে, একই সাথে আমাদের প্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, উখিয়াতে যেখানে এখন রোহিঙ্গারা আছে সেখানে ৮ হাজার একর বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে।
এর মধ্যে ২ হাজার ২৭ দশমিক ৫ একর সামাজিক বনায়ন ধ্বংস হয়েছে, প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়েছে ৪ হাজার ১৩৬ একরের বেশি। এছাড়া অন্যান্য বন সবুজ এলাকাসহ প্রায় ৮ হাজার একরের বেশি আমাদের বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি হচ্ছে অপূরণীয় একটা ক্ষতি।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর