রহমান তারেক :
প্রজনন মৌসুম ও ইলিশ সুরক্ষায় ১১ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। এসময় সাগরে কোন ধরণের মাছ ধরা যাবেনা। এদিকে গেল ভরা মৌসুমে বৈরী আবহাওয়া সহ নানা প্রতিকূলতায় আশানুরূপ ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলে, বোট মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তার মধ্যে ২২ দিনেই এই নিষেজ্ঞায় কিভাবে সংসার চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় জেলেরা। প্রশাসন বলছে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হবে। তবে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি প্রদান করা হবে ত্রাণ সহায়তাও। কক্সবাজারের ২৪ হাজার ৪০ জেলে পরিবারকে দেওয়া হবে ৬০২ মেট্রিকটন চাল।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে প্রধান প্রজনন মৌসুম ও ইলিশ সুরক্ষায় ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ২২ দিন সাগরে মাছ আহরণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
এই আইন বাস্তবায়ন ও সঠিকভাবে ত্রাণ সহায়তা প্রদানের লক্ষে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩’ শিরোনামে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, গত ৯ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা সভা করে সিদান্ত নিয়েছি যে ১২ অক্টোবর পর থেকে সাগরে মাছ ধরার সকল ট্রলার বন্ধ থাকবে। এছাড়া ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাত করণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষেধ।
নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশ, র্যা বসহ অন্যন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকবে। এছাড়া জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিতরণে অনিয়মের খবর পেলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিসারীঘাটে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এরই মধ্যে প্রায় ৯৫ ভাগ মাছ ধরার ট্রলার উপকূলে ফিরে এসেছে। এদিকে জেলেরা বলছেন বৈরী আবহাওয়া সহ নানা করণে গেল ভরা মৌসুমে আশানুরূপ ইলিশ পায়নি তারা। তার মধ্যে এই বন্ধে কিভাবে জীবন চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেলে লিয়াকত মিয়া জানান, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে ২-১ দিন পর পর সিগনাল। যার ফলে ঠিকমত মাছ আহরণ হয়নি। তার মধ্যে শুরু হয়েছে ২২ দিনের বন্ধ। জানিনা সামনের দিনগুলো কি হয়? আরেক জেলে বেলায়ত হোসেন জানান, বন্ধের সময় সরকারের পক্ষ থেকে যে চাল দেওয়া হয় তা পর্যাপ্ত নয়। তার মধ্যে এই চাল বিতরণ নিয়েও অনেক সময় অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এই সময় খুবই কষ্ট হয়। দিনমজুরী কাজ করে কোনভাবে জীবন-যাপন করতে হয়। তাই জেলেদের প্রতি আরো আন্তরিক হওয়া উচিৎ।
ফিসারীঘাটের মাছ ব্যবসায়ী সৈয়দ আলম জানান, ‘ধারদেনা করে ব্যবসা করেছি। সাগরে ইলিশ মাছ পড়লেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সুবিধা করতে পারিনি। তার মধ্যে পড়েছে আবার ২২ দিনের বন্ধ। এই অবস্থায় ব্যবসায় লাভ দুরের কথা কোনভাবে দেনা শোধরাতে পারব কিনা সন্দেহ।’
কক্সবাজার জেলা ফিসিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, গেল ৬৫ দিন অবরোধের পর জেলেরা প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ পায়নি। এর বড় কারণ ছিল বৈরী আবহাওয়া। তাই মাছ ধরা বন্ধের দিনগুলোতে জেলেদের যথাযথ সহায়তা প্রদান করা প্রয়োজন। বিদেশী মাছ ধরার জাহাজ দেশের সমুদ্রসীমায় আসতে না দেওয়া, এছাড়া জলদস্যু মুক্ত নিরাপদ সাগর নিশ্চিত হলেই পুষিয়ে উঠেবে জেলেদের ক্ষতিপূরণ।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জানান, বিভিন্ন গবেষণা ও ফলাফলে দেখা যায় এই ২২ দিনে’ই ইলিশ বেশি পরিমাণে ডিম ছাড়ে। তাই এই সময়টা সমুদ্র ফ্রি রাখতে হবে। এর ফলে পরবর্তী বছর অধিক পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাবে। এই লক্ষকে সামনে রেখেই ‘মা ইলিশ সংরক্ষন ২০২৩’ উৎযাপন হতে যাচ্ছে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে ইলিশ মাছ আহরণের সাথে জড়িত জেলেদেরকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়। তাই বন্ধের সময় বেকার হয়ে যাওয়া ২৪ হাজার ৪০ জেলে পরিবারকে ৬০২ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হবে।