শিরোনাম :
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে- টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি পেকুয়া থানার নতুন ওসি মোস্তাফা’র যোগদান নারী-পুরুষ সমতা বিষয়ে শিশুদের সচেতন করতে কক্সবাজারে আরডিআরএস বাংলাদেশের নতুন প্রকল্প মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা। -মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা কক্সবাজারে দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ চিকিৎসা সেবা : রোগি শূণ্য হাসপাতাল # চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় মামলা; গ্রেপ্তার ২ কক্সবাজারে প্রবল বর্ষণ অব‍্যাহত উখিয়ায় ককটেল মৌলভীর সাম্রাজ্যে বনবিভাগের থাবা, বনের জমি উদ্ধার বিভাজনের রাজনীতিতে পা দিলে রাস্ট্র পুনর্গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যাবে না–সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ কক্সবাজারে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর ফোন চুরি প্রান্তিক মৎস্যজীবী পরিবারের নারীদের নিয়ে “নারী সম্মেলন”

ঘূর্ণিঝড় হামুনে লণ্ডভণ্ড, অচল কক্সবাজার: নিহত ৩ আহত ৫০

নিউজ রুম / ১৯ বার পড়ছে
আপলোড : শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন

বিডি প্রতিবেদক :

হঠাৎ করে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় হামুনে লন্ড ভন্ড হয়ে গেছে কক্সবাজার। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও মোবাইল নেটওয়ার্ক। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মহেশখালী। গাছ ও মাটি চাপা পড়ে মারা গেছে তিনজন। আহত হয়েছে অর্ধশত। কক্সবাজার শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ চালু হয়েছে বুধবার সন্ধ্যায়।

অনেক এলাকায় নেই বিদ্যুৎ, নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে সড়ক-উপসড়কে গাছ উপড়ে বন্ধ যানবাহন চলাচল। কক্সবাজার পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত ১২০ পরিবারকে ঢেউটিন দিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের নিহতারা হলেন কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার আবদুল খালেক (৪০), মহেশখালী এলাকার হারাধন দে (৪৫) ও চকরিয়া বদরখালী এলাকার আসকর আলী (৪৭)।

মঙ্গলবার রাত ৭টার পরই ঘূর্ণিঝড় হামুন আঘাত হানে। এতে উপড়ে যায় গাছপালা ও ঘরবাড়ি। কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড়,  সদর হাসপাতাল সড়কেই উপড়ে পড়েছে ২৫টির বেশি গাছ। একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে বৈদ্যুতিক তার বন্ধ যানবাহন চলাচল। নেই বিদ্যুৎ।

শুধু এই সড়কই নয়; কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে উপড়ে পড়েছে বিশাল আকৃতির গাছ। বৈদ্যুতিক খুঁটিও উপড়ে পড়েছে সড়কে। ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে কক্সবাজার শহরের পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও একই অবস্থা। চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ।

তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মহেশখালীতে।

মহেশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ বাদশা জানান, মহেশখালী দ্বীপের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সড়কে অনেকগুলো গাছ পড়ে আছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই,  যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি পানের বরজ বিধ্বস্ত হয়েছে। তার মতে মহেশখালীতে ১০ হাজার ঘরবাড়ি ও ৫ হাজার পানের খরচ বিধ্বস্ত হয়। সাপের কামড়ে আহত হয়েছে তিনজন। ফায়ার সার্ভিসের নেতৃত্বে সড়কে যান চলাচল করার কাজ চলছে বলে জানান উপজেলা চেয়ারম্যান।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, পৌরসভায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের  কাজ চলছে। ঘর বাড়ি ভেঙ্গে যাওয়া ১৫০ পরিবারকে ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে বুধবার সন্ধ্যায়।

কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহেনা আক্তার পাখি বলেন, তার নির্বাচনী এলাকায় এক নম্বর ওয়ার্ডের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানকার শতকরা ৯৫ ভাগ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কক্সবাজার পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ কুতুবদিয়া পাড়া গ্রামের লুৎফুন নাহার, নিজের ভেঙ্গে যাওয়া বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার একটি সন্তান আর পাঁচ কন্যা সন্তান নিয়ে যে সম্পদ ছিল সেই পুরো ঘরটাই ভেঙ্গে গেছে। এ পাঁচ কন্যা সন্তান নিয়ে এখন আমি কি করব এরকম বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। লুৎফুন নাহার বলেন, আগে ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোন হলে মাইকিং করা হতো গাড়ি এনে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু এবার কোন মাইকিং করা হয় নাই ।আমাদেরকে সতর্ক করা হয় নাই । আর এর দায়িত্ব কে নেবে।

ওই এলাকার বাসিন্দা জেলে ফরিদুল আলম বলেন, আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের কোনভাবেই সতর্ক করা হয়নি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়।

বুধবার প্রকাশিত হয়নি কক্সবাজারের স্থানীয় ২৪টি পত্রিকা। কক্সবাজারের প্রাচীনতম পত্রিকা দৈনিক কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুজিবুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় বুধবার কক্সবাজারের স্থানীয় ২৪টি দৈনিক প্রকাশিত হয়নি। ফলে আমাদের পাঠকরা বঞ্চিত হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। জেলা শহর ছাড়াও উপজেলা গুলোতে সড়ক উপসড়কে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে বৈদ্যুতিক খুটি। বিদ্যুৎ, নেটওয়ার্ক না থাকায় কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কক্সবাজার অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনের কাজ চলছে। পুরো জেলায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সচল করতে কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানান জেলা প্রশাসক

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভেষণ কান্তি দাশ জানান, প্রাথমিক পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৩০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পুরোপুরি ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পেতে আরো সময় লাগবে বলে জানান তিনি। মহেশখালীতে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন সময় লাগার কথাও জানান তিনি।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় হামুনের তান্ডবের পর উপড়ে পড়া গাছপালা সরাতে বা বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে এখনো মাঠে নামেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে চরমে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব না থাকায় বুধবার সারাদিন কোন বৃষ্টি হয়নি কক্সবাজারে। আজ থেকে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার জেলা আবহাওয়া অফিস।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর