
বিডি বিশেষ প্রতিবেদক :
‘ঘুষের টাকা’সহ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ শনিবার (২ জুলাই) দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সেলিম উদ্দীন।
তিনি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত মামলা রুজু হয়নি। তবে জেলা প্রশাসনের অভিযোগে তাকে ৫৪ ধারায় কারাগারে পাঠানো হয়। সরকারি কর্মচারী বিধি মতে সেটি সাধারণ ডায়রি হিসেবে নথিভুক্ত করেছে পুলিশ।
ওসি (তদন্ত) সেলিম উদ্দীন আরো জানান, ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকাসহ সার্ভেয়ার আতিককে সদর থানায় সোপর্দ করে জেলা প্রশাসন। সরকারি কর্মচারি বিধি মতে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজের একটি অভিযোগ সাধারণ ডায়রি হিসেবে নথিভুক্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। নিয়ম মতে, দুদকই সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের ঘটনায় মামলা দায়ের করবেন।
অন্যদিকে আতিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করছে উল্লেখ করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আল আমিন পারভেজ জানিয়েছেন, থানায় ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে তা শুরু হয়েছে। তিনি কিভাবে, কোথা থেকে এতো টাকা পেলো এবং তা ঢাকায় কেন নিয়ে গেছে- সব বিষয়ে উৎঘাটন করতে তদন্ত শুরু হয়েছে। অনুসন্ধান সহ সব বিষয়গুলো এখন দুদক করবে। এ ঘটনায় পুরো জেলা প্রশাসন বিব্রত।
শুক্রবার (১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্যাগ ভর্তি ২০ লাখ ঘুষের টাকা নিয়ে ঢাকা শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান ধরা পড়ে। শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই তাকে কক্সবাজারে ফেরত পাঠালে শুক্রবার রাতে কক্সবাজার মডেল থানায় তাকে সোপর্দ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার বিমানবন্দর সূত্র জানায়, আতিকুর রহমান শুক্রবার সকাল ৯ টার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন। তার ব্যাগ স্ক্যান করলে ব্যাগের ভেতর বিপুল পরিমাণ টাকার স্তূপ দেখা যায়। তাকে বিমানবন্দরে দায়িত্বরত এপিবিএন সদস্যরা ব্যাগসহ আটক করে বিশেষ কক্ষে বসিয়ে রাখেন। কিন্তু এর ৫ মিনিটের মাথায় রহস্যজনক কারণে সকাল পৌনে ১০ টার ইউএস বাংলার ফ্লাইটে চেপে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তিনি। ঘণ্টাখানেক পর ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে সেখানে তল্লাশিতে ব্যাগে টাকার উপস্থিতি পাওয়া যায়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে আটক করেন। পরে আতিকুর রহমানের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে বিকেল সাড়ে চারটার আরেকটি ফ্লাইটে তাকে কক্সবাজারে ফেরত পাঠানো হয়। বিমানবন্দর থেকে আতিকুর রহমানকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব সার্বিয়ারদের জন্য পুরো জেলা প্রশাসনকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। আমরা চাই সঠিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে তার সমস্ত সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা হোক।
সম্মিলিত কক্সবাজারের দুদুকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটি অনুমোদনের জন্য কমিশনে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ সহ এই টাকাগুলো কোথা থেকে এসেছে তার আরো কোন সম্পদ আছে কিনা সব বিষয়ে অনুসন্ধান করবে দুদক।
সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায় বলে জানা গেছে। তিনি সহ ৩ জন সার্ভেয়ার মহেশখালীতে সরকারের প্রায় ১৫টি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন। ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে জমির মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ বাবদ আতিকুর রহমান ওই অর্থ ঘুষ নিয়েছেন বলে সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্টজনেরা। কক্সবাজারে সরকারের ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের জন্য প্রচুর পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। অধিগ্রহণ কাজে সহযোগিতা করা সার্ভেয়ারদের মাঝে এর আগেও বেশ কয়েকজন নগদ কোটি টাকাসহ দুদকের হাতে গ্রেফতার হন।