রহমান তারেক :
কক্সবাজার সদরে ‘বড় বোন প্রেমের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায়’ পাঁচ বছর বয়সী ছোট ভাইকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগে দায়ের মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ব্যাটালিয়নটির কোম্পানী কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম।
গ্রেপ্তার মো. তারেক আজিজ (২৬) কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের মধ্যম জুমছড়ি এলাকার মোহাম্মদ আজিজের ছেলে।
নিহত মোহাম্মদ আবিদ (৫) একই এলাকার মোহাম্মদ ইসহাকের ছেলে।
গ্রেপ্তার আসামি ও নিহত শিশু পরস্পর আপন চাচাতো ভাই।
মামলার নথির বরাতে আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, মোহাম্মদ আবিদের এক বড় বোনকে তারেক আজিজ দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বড় বোনকে প্রেমে রাজী করাতে ছোট ভাই আবিদকে প্রায় সময় চকলেট ও আচারসহ অন্যান্য খাবারের লোভ দেখিয়ে সখ্য গড়ে তোলার চেষ্টা চালায় তারেক আজিজ। এতে সে ( তারেক ) ব্যর্থ হয়ে আবিদকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
“ গত ১ ফেব্রুয়ারী বিকালে বাড়ীর পাশে অন্য শিশুদের সাথে খেলাধুলা করছিল মোহাম্মদ আবিদ। এক পর্যায়ে আবিদকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে তারেক আজিজ ইজিবাইক যোগে পিএমখালী ইউনিয়নের জুমছড়ি এলাকায় বাঁকখালী নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে আবিদের সাথে তারেক খেলাধুলা করে। যাতে আবিদকে হত্যা ঘটনায় কেউ তাকে সন্দেহ না করে। পরে নদীর পাড়ে গাছের সাথে আবিদকে বেঁধে রেখে তারেক আজিজ বাড়ী চলে আসে। “
র্যাবের এ কোম্পানী কমান্ডার বলেন, “ এদিকে সন্ধ্যার পরও আবি বাড়ী ফিরে না আসায় স্বজনরা সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে আবিদকে খুঁজাখুঁজি করতে থাকে। এদিকে সন্দেহ এড়াতে বাড়ী ফিরে তারেকও খুঁজাখুঁজি শুরু করে আবিদকে। পরে খুঁজাখুঁজির না পেয়ে স্বজনরা বাড়ী ফিরে গেলে তারেক আবারও বাঁকখালী নদীর পাড়ে যায়। এরপর আবিদের হাতের বাঁধন খুলে জুমছড়ি এলাকার স্থানীয় একটি পুকুরে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে। তার মরদেহ পানিতে ফেলে রেখে তারেক বাড়ী ফিরে যায়। “
আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, “ নিখোঁজ হওয়ার দিন রাতে অজ্ঞাত একটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে কল আসে আবিদের মায়ের ফোনে। এসময় তার ছেলে অপহরণ করা হয়েছে জানিয়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আর মুক্তিপণের টাকা না দিলে ছেলেকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। “
“ পরদিন ( ২ ফেব্রুয়ারী ) সকালে পিএমখালী ইউনিয়নের জুমছড়ি এলাকার একটি পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় মোহাম্মদ আবিদের মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। “
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ঘটনায় নিহত শিশুর বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বুধবার বিকালে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে র্যাব ঘটনাটি অবহিত হওয়ার পর হত্যার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। পরে মধ্যরাতে ঘটনায় জড়িত প্রধান হোতা পিএমখালী ইউনিয়নের জুমছড়ি এলাকায় অবস্থান করছে খবরে র্যাবের একটি দল অভিযান। এতে র্যাব সদস্যরা সন্দেহজনক বাড়িটি ঘেরাও করলে সন্দেহজনক এক যুবক দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা চালায়। পরে ধাওয়া দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেপ্তার আসামী হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানান আনোয়ার হোসেন শামীম।
তিনি জানান, বিকালে গ্রেপ্তার আসামিকে কক্সবাজার সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।