বিডি ডেস্ক :
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে দারুণ করেছেন বোলাররা, লঙ্কানদের অল্পরানে আটকে ব্যাট হাতেও দারুণ করেছে বাংলাদেশ। তানজিদ হাসান তামিমের দুর্দান্ত ইনিংসের পর রিশাদ হোসেনের ঝড়ো ইনিংসে বড় জয়ে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে টিম টাইগার্স। লঙ্কানদের বিপক্ষে টাইগারদের এটি দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ডাচ বাংলা ব্যাংক বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষটিতে সোমবার সকালে টসে জিতে আগে ব্যাটে নামে শ্রীলঙ্কা। স্রোতের বিপরীতে ছুটে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে লঙ্কানদের ২৩৫ রানের মাঝারি পুঁজি এনে দেন জানিথ লিয়ানেগে। জবাবে নেমে ৫৮ বল ও ৪ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
তানজিদ তামিমের ৮৪ রানের পর ম্যাচসেরা রিশাদ ৪০তম ওভারে হাসারাঙ্গাকে বেধড়ক পেটান। দুটি ছক্কা ও তিনটি চারে ওই ওভার থেকে ২৪ রান আদায় করে নেন। রিশাদের ওই ঝড়ে ম্যাচের আয়ু কমে আসে।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বহু ঘটনার সাক্ষী হচ্ছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। চোট ও কনকাশনের ঘটনা ঘটেছে, দুই খেলোয়াড়ের সংঘর্ষে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে একজনকে, হাসপাতালে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে, সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে এসে বদলে গেছে মাঠ আম্পায়ারও।
প্রথম ইনিংসে ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কেটলবরো। প্রচুর গরমের কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে মাঠের দায়িত্ব পালন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করেন চতুর্থ আম্পায়ার তানভীর আহমেদ।
একটি কনকাশন সাব এসেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপে। শ্রীলঙ্কার ইনিংসের ৪৯তম ওভারে বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পান সৌম্য সরকার। প্রথমে বাঁ-হাঁটুতে ব্যথা পান এবং বিজ্ঞাপন বিলবোর্ডে ধাক্কা লেগে আঘাত পান ঘাড়ে। মাথাব্যথা ও দেখতে সমস্যা হচ্ছিল টাইগার ওপেনারের। পরে কনকাশন সাব হিসেবে তানজিদ তামিম নামেন উদ্বোধনীতে।
সৌম্যর চোটের কয়েক মিনিট পর আরেকটি ঘটনা ঘটে। ৪৯.৫তম ওভারে প্রমোদ মাদুশানের ক্যাচ নিতে যান অনিক ও বিজয়। বিজয়ের কাঁধের সাথে ধাক্কা লাগে অনিকের মাথায়। দীর্ঘসময় মাঠে শুয়ে থাকার পর স্ট্রেচারে বাইরে নিতে হয় তাকে। পরে হাসপাতালেও নিতে হয় অনিককে।
স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়ার ঘটনা দেখতে হয় আরও একটি। ৪৭.১ ওভারে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। বোলিংয়ের সময় মাসল-ক্রাম্প হওয়ার কারণে নিজের শেষ ওভারে একটি ওয়াইড বল করে মাঠ ছাড়েন তিনি। পরে ওভারটি শেষ করেন সৌম্য সরকার।
রানতাড়ায় নেমে টাইগারদের উড়ন্ত শুরু এনে দেন সৌম্যর কনকাশন সাব হিসেবে নামা তামিম। হঠাৎ সুযোগ পেয়ে ব্যাট হাতে দারুণ করেছেন তরুণ ওপেনার। লম্বা ইনিংস খেললেও অবশ্য প্রথম সেঞ্চুরির অপেক্ষা বাড়িয়ে মাঠ ছেড়েছেন। দারুণ খেলতে খেলতে উইকেট ছুঁড়ে ফিরে গেছেন ৮৪ রানে।
রান তোলায় কিছুটা মন্থর ছিলেন তামিমের সঙ্গী এনামুল হক বিজয়। উদ্বোধনী জুটিতে ৫০ রান তোলেন দুজনে। নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে লাহিরু কুমারার শিকার হন বিজয়। ২২ বলে ১২ রান করে যান।
ব্যর্থ হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১১তম ওভারে কুমারার দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। ৫ বলে ১ রান করে যান টাইগার অধিনায়ক। ২১.৪ ওভারে ১০৫ রানে তাওহীদ হৃদয়কে ফেরান লাহিরু কুমারা। ৩৬ বলে ২২ রান করে যান তিনি। ব্যর্থ হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। ২৩.১ ওভারে ৪ বলে ১ রান করে কুমারার চতুর্থ শিকার হন।
একপ্রান্ত ভালোভাবেই আগলে রেখেছিলেন তানজিদ তামিম। ৫১ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। পরেও দারুণ ব্যাট করছিলেন। তাড়াহুড়াও দেখা যাচ্ছিল। ২৫.৫ ওভারে হাসারাঙ্গার বল উড়িয়ে মারেন। লংঅনে বাউন্ডারি লাইনের কাছে ধরা পড়েন চারিথ আশালাঙ্কার হাতে। ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৮১ বলে সাজানো ইনিংস খেলে ফিরেছেন।
৩৬.১ ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে ফেরান হাসারাঙ্গা। ৪০ বলে ২৫ রান করেন মিরাজ। সপ্তম উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গী হয়ে ব্যাটে আসেন রিশাদ হোসেন। ছক্কা দিয়ে ইনিংস শুরু করেন লেগ স্পিন-অলরাউন্ডার। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে লঙ্কানদের ওপর ঝড় তোলেন। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৪০.২ ওভারে জয়ের বন্দরে নোঙর করে টিম টাইগার্স।
পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কায় ১৮ বলে ৪৮ রান করেন রিশাদ। তিনটি চার ও এক ছক্কায় ৩৬ বলে ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। লঙ্কানদের হয়ে লাহিরু কুমারা নেন ৪ উইকেট। ভানিডু হাসারাঙ্গা নেন দুটি উইকেট।
এর আগে ব্যাটে নেমে শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা। টানা দুই ওভারে দুটি উইকেট তুলে নেন পেসার তাসকিন আহমেদ। ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে সফরকারীদের তৃতীয় উইকেট তোলেন মোস্তাফিজুর রহমান। নিজের প্রথম ওভারেই সাফল্য পান বাঁহাতি পেসার। সিরিজ জয়ের মিশনে দুর্দান্ত শুরু পায় বাংলাদেশ।
শরিফুল ইসলামের প্রথম ওভারে এক রান তোলেন লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। পরের ওভারে বল হাতে উইকেট তোলেন আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ। ফুল লেংথের বল, ডিফেন্ড করতে গিয়ে মিস করে করেন নিশাঙ্কা। তাতে ১ রানের মাথায় এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন।
পরের ওভারে আরেক ওপেনার আভিষ্কা ফের্নান্দোকেও সাজঘরে পাঠালেন তাসকিন। অফস্টাম্পের বাইরে থেকে কিছুটা বেরিয়ে যাওয়া বলে কট বিহাইন্ড হন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ৪ রান। ১১তম ওভারে শরিফুলের জায়গায় আসেন মোস্তাফিজ। দলে ফেরা মোস্তাফিজ সফল প্রথম ওভারে। সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ব্যক্তিগত ১৪ রানে ফেরান দ্য ফিজ।
২৯ রান করে রিশাদের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের গ্লাভসে ক্যাচ জমা করেন কুশল। মোস্তাফিজ দ্বিতীয় শিকারের দেখা পান চারিথ আশালঙ্কাকে আউট করে। ৪৬ বলে ৫টি চারে ৩৭ রান করেন এ লঙ্কান। ১১৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় সফরকারী দল। মেহেদী হাসান মিরাজ দ্রুত দুটি উইকেট নিয়ে কোণঠাসা করেন দেন শ্রীলঙ্কাকে।
১৫৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে পথ দেখান লিয়ানাগে। স্রোতের বিপরীতে ছুটে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে শ্রীলঙ্কাকে এনে দেন ২৩৫ রানের মাঝারি পুঁজি।
১০২ বলে ১১টি চার ও দুটি ছয়ে ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন লিয়ানাগে। মাহেশ থিকশানার অবদানও কম নয়। নিজে বোলার হয়েও অষ্টম উইকেট জুটিতে ৬০ রান যোগ করেন। ৪০ বলের দীর্ঘ ইনিংসে মাত্র ১৫ রান করলেও লঙ্কান ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি সেটিই।
টাইগার বোলারদের হয়ে তাসকিন আহমেদ ৩টি উইকেট নেন। মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ নেন ২টি করে উইকেট। রিশাদ হোসেন ও সৌম্য সরকার একটি করে উইকেট নেন।