দেলওয়ার হোসাইন :
তিনি বলেন, আল্লাহপাক বলেছেন, তোমরা (কখনো) তাদের মতো হয়ো না, যাদের কাছে (আল্লাহর) সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং (নিজেদের মধ্যে) নানা মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে; এরাই হচ্ছে সে সব মানুষ যাদের জন্যে কঠোর শাস্তি রয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বনবী (সাঃ) বলেছেন, হে আমার উম্মতরা নামাজ, রোজা, যাকাত, ছদকার চাইতে দুই ভাইয়ের ঝগড়া-বিবাদ মিমাংসা করা মর্যাদাপূর্ণ।
ড. আজহারি বলেন, ঐক্য হচ্ছে দেশ ও জাতির উন্নয়ন- অগ্রগতির ভিত্তি। বিগত ৫০ বছর নিজেরা বিরোধে লিপ্ত হয়ে এই দেশটাকে শেষ করে দিয়েছি। জুলাই- আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর জাতি হিসেবে আমরা ঐক্যবদ্ধ না হলে শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে। তিনি বলেন, আমাদের প্রভু এক, আমরা এক উম্মাহ, আমরা এক উৎস থেকে এসেছি। সুতরাং ভিন্ন ভিন্ন বিভক্তি ও মতাদর্শে বিশ্বাসী হলেও দেশের স্বার্থে আমাদের এক থাকতে হবে। আমাদের আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অব্যাহত ষড়যন্ত্র জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে রুঁখে দিতে হবে।
আল্লামা আজহারি আরও বলেন, সব বদলানো যায়, প্রতিবেশী বদলানো যায়না। আমরা ভারতের কাছে বন্ধুত্বে বিশ্বাসী, শত্রুতায় নয়। ভারতের দাদাগিরি ও মিথ্যা গুজব বাংলাদেশের মানুষ পছন্দ করে না। যদি গৌর গোবিন্দে রুপ নেয়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ হযরত শাহজালালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ভারতের আধিপত্যবাদ রুঁখে দেবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ। এদেশে পুজো-পার্বনে মাদ্রাসার ছাত্ররা মন্দির পাহারা দেয়। এছাড়া চট্টগ্রামে এডভোকেট আলিফ হত্যার পর গোটা বাংলাদেশ ধৈর্যের পরকাষ্টা দেখিয়েছে।
স্মরণাতীত কালের প্রায় দশ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে, পেকুয়ার মৃত্তিকার গর্বিত সন্তান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত মুসলমানরা। সর্বোপরি আলেম সমাজ। আল্লামা মিজানুর রহমান আজহারি এবং আমিও কম নির্যাতনের শিকার হইনি। এক বছর আগেও এরকম তাফসিরুল কোরআন মাহফিল আয়োজন করা কল্পনা করা যেত না। এদেশে কথা বলার অধিকার ছিল না, ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিল না। দেশ এখন ইসলাম বিদ্বেষী, আলেম বিদ্বেষী ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে ফ্যাসিবাদ হঠাতে জুলাই-আগস্টের শহীদরা অকাতরে প্রাণ দিয়েছে, শহীদ হয়েছে। তাদের স্বপ্ন ছিল শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, অতীতের মতোই দেশে বিভক্তির ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিজমের প্রেতাত্মারা। তাদেরকে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে রুঁখে দিতে হবে।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তৃতায় সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, দেশের সকল নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার, মৌলিক অধিকার, কথা বলার অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত ও শক্তিশালী- গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিএনপি কাজ করছে।
মাহফিলে ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারি ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও দেশের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক মুক্তি আসেনি। একমাত্র আল কোরআনই ঝঞ্ছাবিক্ষুব্ধ এই জাতিকে মুক্তি দিতে পারে।
ড. মাসুদ আরও বলেন, ভয় দেখিয়ে আল্লামা আজহারিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছেন। কোটি জনতার নয়নের মণি আল্লামা সাঈদীকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছেন। অথচ কোআনের কথা বলার জন্য সারা বাংলাদেশে লাখো সাঈদী তৈরী হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের হত্যা করা যায়, ফাঁসি দেয়া যায়, কিন্তু কোরআনের আদর্শকে শেষ করা যায় না।
পেকুয়ার সমাজ উন্নয়ন পরিষদ ও মাওলানা শহিদ উল্লাহ স্মৃতি সংসদ আয়োজিত ২৭ ডিসেম্বর দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ৮ম তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে অন্যান্যের মাঝে আলেচনায় অংশ নেন,শায়খ মুফতি কাজী ইব্রাহিম, মাওলানা আবদুল্লাহ আল আমিন, আল্লামা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী,মাওলানা সাদিকুর রহমান আজহারি, মাওলানা আবদুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আজহারি, জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ আল ফারুক। এর আগে প্রায় ৬ লাখ মুসুল্লির অংশগ্রহণে দুপুরে জুমার নাম অনুষ্ঠিত হয়। বিশাল এই জুমার নামাজে খুতবা দেন ও ইমামতি করেন শায়খ সালাহউদ্দিন মাক্কী।
এদিকে মাহফিলে দু’অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী, মাওলানা বদিউল আলম চেয়ারম্যান। সমগ্র মাহফিল সঞ্চালনা করেন মাহফিলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মোহাম্মদ নিয়ামত উল্লাহ নিজামী