এমপি থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান হতে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জাফর আলম: কেন এই পদে এ নিয়ে ছেলের ব্যাখ্যা

bdworldbdworld
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৫:২৮ PM, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিডি প্রতিবেদক :

কক্সবাজারের চকরিয়া পেকুয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলম এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জাফর আলমের ছেলে তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশাল ব্যাখ্যা দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছে। জাফর আলম জানিয়েছেন, তিনি বৃহস্পতিবার চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দেবেন।

এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলমের উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের খবর নিয়ে পুরো জেলা জুড়ে নানা আলোচনা চলছে।

আলহাজ্ব জাফর আলম ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ আসনে (চকরিয়া-পেকুয়া) আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে (বীরপ্রতীক) আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন জাফর আলম। সে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাফর আলম। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে ২০০৩ সালে চকরিয়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেন তিনি প্রার্থী হবেন, এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ব্যাখ্যা দেন জাফর আলমের পুত্র তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন,

তার পোস্টে তিনি লিখেছেন,

কেন ‘এমপি’ থেকে ‘উপজেলা চেয়ারম্যান’?

পারিবারিক ভাবে ‘সাবেক সংসদ সদস্য’ পরিচয়টিই আমাদের জন্য যথেষ্ঠ। আমাদের অন্য কোন পরিচয়ের দরকার নাই। কিন্তু আমার বাবার জীবনেই আমরাই শেষ কথা নই। তিনি গত ৩৫ বছর এই জনপদের মানুষের সাথে মিশে আছেন। তিনি হাজারো পরিবারের সুখ-দুঃখের সারথী।

গত নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির হিসাব-নিকাশে কক্সবাজার-১ আসনে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি। তা ঘটলে জনাব জাফর আলমই ৮০-৯০% ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হতেন। যা এখন পুরো দেশেই আলোচিত হচ্ছে। অর্থাৎ এখানে জনাব জাফর আলমই অধিকাংশ জনগণের পছন্দের প্রতিনিধি।

তাছাড়া ভিনদেশী এমপি হওয়ায় এখনও অধিকাংশ জনগণ দল-মত নির্বিশেষে বিপদে-আপদে সাবেক এমপির কাছেই ছুঁটে আসছেন। কিন্তু সাবেক এমপি পরিচয়ে নিজের পরিবার নিয়ে সম্মান নিয়ে থাকা সম্ভব হলেও জনগণকে প্রশাসনিক সহযোগিতা করা সম্ভব নয়।

এছাড়াও তাঁর দলের প্রায় ৮০% নেতাকর্মী ও অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে শত চাপ-তাপ উপেক্ষা তাঁর পক্ষে নির্বাচন করেছেন। যারা নির্বাচনের পর নানা ভাবে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। তাঁর পক্ষে নির্বাচন করায় অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি এখন এমপি-উপজেলার উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এমন এক বাস্তবতায় অধিকাংশ জনগণ, জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মী যারা তাঁর জন্য সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে ভালোবাসার নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তাদের বিপদে রেখে দূরে সরে যাওয়াটা হবে চরম স্বার্থপরতা।

তাই সকলের কথা ভেবে, তাদের সুখ-দুঃখের সারথী হয়ে পাশে থাকতেই নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধে তিনি উপজেলা নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দল-মত নির্বিশেষে জনগণের সেবা করতে চান।

মনে রাখা উচিত যে যিনি মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে এমপি পর্যন্ত হয়েছেন তার কাছে এমপি থেকে আবারো উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়াতে তেমন কোন বিশেষত্ব নাই।

বরং গত নির্বাচনে দলমত নির্বিশেষে লাখো মানুষের সমর্থনে তিনি সকলের কাছে চিরঋণী। তাদের সেই ভালোবাসার দায়বদ্ধতাই তাঁকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।

ইতিহাস বলে ভালোবাসার জন্য যেখানে রাজপুত্র রাজ্য ছেড়ে সন্ন্যাসী জীবন বেছে নেয় সেখানে জনগণ ও নেতাকর্মীদের ভালোবাসায় বেঁচে থাকতে তিনি না হয় এমপি থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানই হতে যাচ্ছেন!

তাছাড়া তা কি বৃ’টিশ প্র’ধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যা’মেরনের প্রধান’মন্ত্রী থেকে তাঁরজুনিয়রের মন্ত্রীসভায় প’ররাষ্ট্র মন্ত্রী হওয়ার চেয়েও অস্বাভাবিক কোন ঘটনা হবে?

জাফর আলমের উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রার্থী হওয়া নিয়ে পুরো জেলা জুড়ে চলছে নানা আলোচনা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, একজন রাজনীতিবিদের মূল কাজ হচ্ছে জনগণের সেবা করা। জনগণের জন্য কাজ করা। জনগণের জন্য কাজ করতে গিয়ে কোন পদে নির্বাচন করল তা মুখ্য বিষয় নয়।

চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম লিটু বলেন, আলহাজ জাফর আলম, জোট সরকারের আমলে নির্যাতিত একজন নেতা। জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও তিনি জনগণকে সাথে নিয়ে রাজনীতি ছিলেন। চকরিয়া পেকুয়ার মাটিকে তিনি আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে পরিণত করেছিলেন। তাই দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, জাফর আলমকে প্রয়োজন। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চান তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জনগণের জন্য কাজ করুক।

সাবেক সংসদ সদস্য চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলম এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার জীবনের বেশিরভাগ সময় চকরিয়া পেকুয়ার মানুষের জন্য ব্যয় করেছি। মেয়র উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। আমার পাওয়ার আর কিছু নাই। কিন্তু চকরিয়া পেকুয়ার মানুষের জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চাই।

মানুষের কাজ করার জন্য, সাধারণ জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য, আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চকরিয়া থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য বৃহস্পতিবার মনোনয়ন সংগ্রহ করে জমা দেব। আমি সকলের সহযোগিতা ও দোয়া চাই।

কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফায় কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া ও ঈদগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আপনার মতামত লিখুন :