চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম “বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট” এর আত্মপ্রকাশ করেছে। সারাদেশে নির্যাতিত-নিপীড়িত সনাতনী সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সনাতনীদের নতুন জোট এই ব্যানারে আন্দোলন সংগ্রাম করবে।
এতে হাজারী গলির ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবিতে ৮ দফাসহ নতুন আরও ৫ দফা দিয়েছে নতুন সনাতনী জোট। হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চিত করতেই তাদের এসব দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
রবিবার (১৭ নভেম্বর) চট্টগ্রামের ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আত্মপ্রকাশ ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী সংবাদ সম্মেলনে হাজারী গলির ঘটনায় জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শ্রীপাদ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, শ্রীমৎ অজপানন্দ ব্রহ্মচারী, শ্রীমৎ স্বামী পরিতোষানন্দ গিরি, শ্রীমৎ গোবিন্দ ব্রহ্মচারী, শ্রীমৎ প্রেমময়ানন্দ ব্রহ্মচারী, শ্রীমৎ রণনাথ ব্রহ্মচারী, শ্রীমৎ উমেশানন্দ গিরি, শ্রীমৎ সোমনাথ চৈতন্য রুদ্রাক্ষ বাবাজী, শ্রীমৎ অক্ষরানন্দ পুরী মহারাজ, শ্রীমান গৌর দাস ব্রহ্মচারী, শ্রীমৎ স্বামী বীরেশ্বরানন্দ গিরি মহারাজ, শ্রীমৎ স্বরূপ দাস বাবাজী, শ্রীমৎ দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দাস ব্রহ্মচারী প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী লিখিত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট। বাংলাদশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং সনাতনী সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্রিয়াশীল সকল সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ মোর্চা বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। আগামীতে এ দুটি সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের ব্যানারে আন্দোলন সংগ্রাম করবে।
হাজারী গলির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর কোনো দুষ্কৃতকারী যদি হামলা করে থাকে সেজন্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে তাদের শাস্তির দাবি জানান।
এ সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যৌক্তিক ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ আরও ৫ দাবি তুলে ধরা হয়।
নতুন পাঁচ দাবি হলো- ৫ নভেম্বর হাজারী গলির ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, একই ঘটনায় আটক ও নির্মম নির্যাতনের শিকার নিরীহ সনাতনীদের মুক্তি দিয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, আটক সনাতনীদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিভিন্ন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করা, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে গভীর রাতে নিরীহ সনাতনীদের ওপর নির্যাতন করা অতিউৎসাহীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যৌক্তিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সাধু-সন্ত ও সংগঠকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার।
এর আগে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ ৮ দাবি জানানো হয়। দোষীদের দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অনতিবিলম্বে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন ও ‘সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন’ করতে হবে এবং জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক হারে আসন বরাদ্দ রাখতে হবে। হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করার পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করতে হবে। ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড’ আধুনিকায়ন করতে হবে। এবং শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা দিতে হবে