সাকলাইন আলিফ :
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাস্তবতা এবং ভবিষ্যৎ পথ” শীর্ষক স্টেকহোল্ডারদের সংলাপে রোহিঙ্গাদের
জন্য পৃথক আদালত করা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মামলাগুলো এপিবিএন পুলিশকে দিয়ে তদন্ত করানো, পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি সহ বেশ কিছু প্রস্তাবনা করা হয়েছে।
২০২৪ সালে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে ৫৩ জন খুন হয়েছে। গেমগুলোতে অপরাধপ্রবণতা বেড়েই চলছে। ভারী অস্ত্র আসছে ক্যাম্পে। সে অস্ত্রগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে জানিয়ে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয় এর সংলাপ থেকে।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (BLAST) এবং ইউএনএসসিআর যৌথভাবে আয়োজিত “রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাস্তবতা এবং ভবিষ্যৎ পথ” শীর্ষক স্টেকহোল্ডারদের সংলাপ টি বুধবার সকালে কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপে আইনি সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বক্তারা নিবেদিতপ্রাণ তদন্ত ইউনিট এবং বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠার সুযোগ বিবেচনা করার, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি বাস্তবায়নের এবং ক্যাম্পে মহিলা কর্মীদের মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করার এবং লজিস্টিক সহায়তা উন্নত করার সুপারিশ করেছেন। আদালতের পদ্ধতির ক্ষেত্রে, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য অনলাইন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য অনলাইন জিডি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, ক্যাম্প এলাকায় ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) বৃদ্ধি, সময়োপযোগী ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগীয় কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং আইনি সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান কাঠামোর অধীনে আইনি অধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে যাতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে আরও ভালোভাবে সেবা প্রদান করা যায়।
সংলাপে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারে অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলছে। মামলার সংখ্যা বাড়ছে রোহিঙ্গাদের কারণে। কক্সবাজারে প্রায় এক লাখ মামলা রয়েছে। তাই রোহিঙ্গাদের জন্য পৃথক আদালত গঠনের আহ্বান জানান।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, থানাগুলোতে লোকবল সংকট রয়েছে। রোহিঙ্গারা বাইরে গেলে কোথাও ধরা পড়লে তাদের নিয়ে আসার জন্য তেল সংকটসহ নানা সমস্যা রয়েছে। রোহিঙ্গাদের সমস্যা গুলোকে নিয়ে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।
সংলাপে অংশ নিয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের ডিআইজি প্রলয় চিসিম বলেন, ২০২৪ সালে ক্যাম্পে ৫৩ জন খুন হয়েছে। তবে আগের চেয়ে অপরাধ প্রবণতা অনেকটা কমিয়ে এসেছে। বর্তমানে ৩ টি ব্যাটালিয়ানের৭৮ জন নারী পুলিশ সদস্য কাজ করছে। গেমগুলোতে বাড়ি বাড়ি অস্ত্র আসছে। এসব অস্ত্র ঢাকা-চট্টগ্রামে যাচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। রেবের মত এপিবিএনকেও সরকার চাইলে তদন্তের ক্ষমতা দিতে পারে।
কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আকতার হোসেন বলেন, চীফ জুডিশিয়াল আদালতের ৪০ হাজার মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ভূমি সংক্রান্ত মামলার রয়েছে প্রায় দশ হাজার। এখানেই মামলার অনেক চাপ।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বিনামূল্যে আইনি প্রতিনিধিত্ব এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে আইনি সহায়তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিচার ব্যবস্থার কর্মীদের সহযোগিতার মাধ্যমে গৃহীত পদক্ষেপ এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে আইনি তথ্য ও শিক্ষার প্রচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা তুলে ধরেন।
সংলাপ অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ, প্রধান বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আক্তার হোসেন, অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) শামসুদ্দোজা নয়ন, কক্সবাজারের এপিবিএনের ডিআইজি প্রলয় চিসিম, কক্সবাজারের ইউএনএইচসিআরের সিনিয়র টেকনিক্যাল কোঅর্ডিনেটর জিং সং এবং ইউএনএইচসিআরের কক্সবাজারের সিনিয়র প্রোটেকশন অফিসার (আইনি সুরক্ষা ইউনিট) হিরোশি মিয়াউচি। বিচার বিভাগের প্রতিনিধি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, কারা কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, ইউএনএইচসিআর এবং আইওএম সহ আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ব্লাস্ট, ব্র্যাক এবং জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থার মতো বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।