বিডি প্রতিবেদক :
চাচার হত্যার প্রতিশোধ নিতেই কক্সবাজারে পরিকল্পিতভাবে এনেই গুলি করে হত্য করা হয়েছিল খুলনার সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুকে। আর টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এক নারীকে।
প্রায় ১০ বছর আগে খুলনায় খুন হন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা চাঁচা হাজী শহিদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদ। আর সেই খুনের বদলা নিতেই এক বিধবা নারীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে হুজি শহীদের অনুসারীদের সহযোগীতায় কক্সবাজার সৈকতে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানী টিপুকে গুলি করে হত্যা করেন ভাতিজা শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু (২৭)।
হুজি শহীদ হত্যার পরিশোধ সহ স্থানীয় দ্বন্ধের জের ধরে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আর পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে ঋতু নামের নারীটি।
হত্যার সময় পুরোদমে সহযোগির ভূমিকায় ছিলেন গোলাম রসুল নামের খুলনার অপর যুবক সহ কয়েকজন।
টিপু হত্যার ৬ দিন পর বুধবার বেলা ১১ টায় কক্সবাজার জেলা পুলিশ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। হত্যার সাথে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করে তাদের প্রাথমিক স্বীকারোক্তিমতে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবী করে পুলিশ।
ধৃতরা হলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ডের দেওয়ান মোল্লাপাড়া গ্রামের আক্কাস আলী সড়কের মো.সেলিম আকনের মেয়ে ঋতু (২৪), একই গ্রামের পাবলা হাজী পাড়া গ্রামের মো.জামাল শেখের ছেলে শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু। তাঁর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় অস্ত্র, হত্যা ও মাদক আইনে ৫ টি মামলা রয়েছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৬ নং ওয়ার্ডের মো. হায়দার সরদার অদুদের ছেলে গোলাম রসুল (২৫)। তিনি একই থানার একটি মামলার আসামী।
উদ্ধার করা আলামত হলো, মেড ইন ইউএস এ লেখা বাটের দুইপাশে কাট সংযুক্ত একটি ইউআরও পিস্তল, ৪টি তাজা কার্তুজ, একটি ম্যাগজিন ও একটি কালো রংয়ের ট্রাভেল ব্যাগ।
সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, গত ৮ জানুয়ারী রাত ১১ টার বাসে খুলনা থেকে কাউন্সিলর টিপু কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। এর পর দিন রাত সাড়ে ৮ টায় কক্সবাজার সৈকতে ভিকটিম টিপুর মাথায় গুলি করে হত্যা করে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ভিকটিমের পরিবার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এভ
ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আহমেদ পেয়ার এর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে কক্সবাজার সদর মডেল থানার একটি বিশেষ টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর সার্কেল নেতৃত্বে উক্ত আভিযানিক টিম মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি থানা এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে খুলনা সিটি কপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানী টিপু হত্যার ঘটনায়া জড়িত নারী সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে এবং পরে আসামীদের দেওয়া তথ্যমতে কক্সবাজার পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত কলাতলী রোড সংলগ্ন সৈকত বহুমুখী সমবায় সমিতি আবাসিক এলাকাস্থ কক্স কুইন রিসোর্টের ২০৮নং কক্ষের চিলেকোঠা হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এসপি আরো বলেন, খুলনায় আধিপত্য বিস্তার ও হুজি নেতা শহীদ হত্যার বদলা নিতেই টিপুকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি। এই হত্যাকান্ডে ঋতুকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর গুলি করেন হুজি শহীদের ভাতিজা পাপ্পু। এছাড়া এতে অস্ত্র সরবরাহ পলায়নে সহযোগিতা করা সহ নানাভাবে সহযোগীতা করেন হুজী শহীদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত গোলাম রসূল সহ আরো কয়েকজন।
তিনি আরো বলেন, টিপু হত্যায় জড়িত থাকার সন্দেহে এর আগে আমরা আরো দুজনকে গ্রেফতকর করেছি। এই ৫ জনকেই আমরা রিমান্ডে আনার আবেদন করেছি। তাদেরকে রিমান্ডে আনা গেলে আরো অনেক কিছুই জানা সম্ভব হবে।
গত ৯ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন হোটেল সীগালের সামনে রাস্তার ফুটপাতে গোলাম রব্বানী টিপুকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় র্যাবের অভিযানে টিপুর সঙ্গে বেড়াতে আসা কেসিসি’র আরেক সাবেক কাউন্সিলর শেখ ইফতেখার হাসান সালু ও কক্সবাজারের বন্ধু মেজবাহ উল্লাহ ভূট্টো গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তার সকলকে রিমান্ডের অবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে আদেশ পেলে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করা হবে।