বিডি প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সদরে ‘স্বামীকে স্বর্ণালংকার তুলে না দেওয়ায়’ বিয়ের তিন মাস পর মারধরে আহত এক নববধূর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে; এ ঘটনার পর থেকে স্বামী পলাতক রয়েছে।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, মাদকাসক্ত স্বামীর যৌতুকের দাবি পূরণ না করা এবং বিয়ের সময় উপহার পাওয়া স্বর্ণালংকার তুলে না দেওয়ায় এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন জানান, বুধবার মধ্যরাতে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ নববধূর মৃত্যু হয়েছে।
নিহত সুমী আক্তার (২০) কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের ছনখোলা ঘোনারপাড়ার মো. বোরহান উদ্দিনের স্ত্রী।
বোরহান ওই এলাকার এখলাছ মিয়ার ছেলে।
সুমীর বাবা মো. শফিউল্লাহ একই এলাকার বাসিন্দা। মাত্র তিন মাস আগে সামাজিকভাবে সুমী ও বোরহানের বিয়ে হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধরাত মধ্যরাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক গৃহবধূর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। পরে নিহতের স্বজনরাও স্বামীর নির্যাতনে ওই নারীর মৃত্যুর বিষয়টি মৌখিকভাবে অবহিত করেছে।
সেলিম উদ্দিন বলেন, বুধবার মধ্যরাতে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে এক গৃহবধূ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশ অবহিত। ওই নারীর স্বজনদের অভিযোগ, স্বামীর নির্যাতনে মারধরে আহত হয়ে সুমী আক্তার নামের ওই গৃহবধূ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রাত ১১ টায় তার মৃত্যু হয়েছে।
নিহতের ভাই মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, গত তিন মাস আগে সামাজিকভাবে সুমী আক্তার ও বোরহান উদ্দিনের মধ্যে বিয়ে হয়। বিয়েতে কনের পক্ষ থেকে বরকে উপহার দেওয়া হয় পালসার কোম্পানীর একটি মোটর সাইকেল ও এক ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের গলার হার। কিন্তু বোরহান যে একজন পেশাদার মাদকাসক্ত তা কনে পক্ষের স্বজনরা আগে জানত না।
” বিয়ের কিছুদিন পর থেকে বোরহান মোটা অংকের টাকার জন্য সুমীকে চাপ দিয়ে আসছিল। এতে রাজী না হওয়ায় বিয়েতে উপহার পাওয়া মোটর সাইকেল ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে দেয়। ”
পারভেজের অভিযোগ, ” বোরহান উদ্দিন নিয়মিত মাদক সেবন করে। মাদকের চাহিদা মেটাতে গিয়ে সে অনেক টাকা অপচয় করেছে। এতে টাকা সংকটের কারণে সম্প্রতি সুমীর উপর বাবার বাড়ী থেকে মোটা অংকের টাকার জন্য জোর চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে বিয়েতে পাওয়া উপহারের স্বর্ণালংকারের জন্যও সুমীকে চাপ প্রয়োগ শুরু করে। ”
” এ নিয়ে বুধবার রাত ১০ টায় উভয়পক্ষের অভিভাবকদের মধ্যে পূর্ব নির্ধারিত এক সামাজিক বৈঠক হবার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই রাত সোয়া ৮ টার দিকে বাড়ীতে সুমীকে ব্যাপক মারধর করে স্বামী বোরহান। এক পর্যায়ে গলা চেপে ধরে সুমীকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। পরে বোরহান নিজেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। এরপর থেকে তার কোন খোঁজ নেই। ”
নিহতের ভাই জানান, রাত ১১ টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমী মারা যান। স্বামীর নির্যাতন ও মারধরে গলাসহ তার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরে রাতে ঘটনার বিষয়ে পুলিশের কাছে মৌখিকভাবে জানানো হয়। ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ঘটনার ব্যাপারে কথা বলতে বোরহান উদ্দিনসহ তার স্বজনদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়।
এ নিয়ে বোরহান ও তার ভাই রমজান আলীর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু দুইজনেরই ফোনের সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।
পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম জানান, খবর শোনার পর হাসপাতাল থেকে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। স্বজনদের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর মামলা নথিভূক্ত করা হবে।
ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।