বিডি আদালত প্রতিবেদক :
কক্সবাজারে ব্যবসায়িকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাত সদস্যের প্রত্যেককে সাত বছর করে সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত; এছাড়া প্রত্যেক আসামিকে তিন লাখ টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের সাজার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ১২ টায় জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালত এ রায় দেন বলে জানান কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হল, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বহিস্কৃত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামান, আবুল কালাম আজাদ, সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. ফিরোজ, গোলাম মোস্তফা ও আলাউদ্দিন এবং কনস্টেবল মো. আল-আমিন ও মোস্তফা আজম।
এর আগে সকাল ৮ টায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে আসামিদের কোর্ট হাজত আনা হয়। পরে সাড়ে ১০ টায় সেখান থেকে আসামিদের আদালতে নেওয়া হয়।
পিপি ফরিদুল বলেন, সকাল সাড়ে ১০ টায় মামলার ৭ আসামিকে আদালতে আনা হয়। এরপর ১১ টায় বিচারক রায় পড়া শুরু করেন। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক প্রত্যেককে পৃথক দুই ধারায় সাত বছর করে সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন। এছাড়া প্রত্যেক আসামিকে তিন লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন মাসের সাজা দেওয়া হয়।
” এর মধ্যে অপহরণের দায়ে প্রত্যেক আসামিকে ৫ বছর এবং ২ লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়। এছাড়া মুক্তিপণ আদায়ের দায়ে ৩ বছর এবং ১ লাখ টাকা করে জরিমানার সাজা হয়েছে। ”
রায় ঘোষণার সময় সব আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, মামলার রায়ে বাদীপক্ষ খুশি হলেও সাজার পরিমান নিয়ে কিছুটা অতৃপ্ত। মামলার যে দুইটি ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে তাতে সাজার রায় অন্তত ১০ বছর হওয়ার কথা।
এ ব্যাপারে বাদী উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেবেন বলে জানান বাদীপক্ষের এ আইনজীবী।
মামলার বাদীর বড় ভাই মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, আদালতের রায়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে আসামিদের বিরুদ্ধে যে সাজা হয়েছে তাতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। মামলা ও ঘটনার জেরে এর আগে পুলিশের কাছে হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয়েছেন। আসামিরা আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য হওয়ায় বাদীপক্ষের লোকজন নিরাপত্তা হীনতায় ভূগছেন।
মামলার নথির বরাতে ফরিদুল বলেন, গত ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর কক্সবাজার সদর থানার পেছনের রোড থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী একদল লোক টেকনাফের ব্যবসায়ী আব্দুল গফুরকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ‘ক্রসফায়ারে’ মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তার স্বজনদের কাছে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
“এক পর্যায়ে দেন-দরবারের পর ১৭ লাখ টাকা দিতে রাজি হয় পরিবার। পরে ওই টাকা পৌঁছে দেওয়া হলে পরদিন ভোররাতে আব্দুল গফুরকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়।”
পিপি ফরিদুল বলেন, এরপর ব্যবসায়ী গফুরের স্বজনরা বিষয়টি টেকনাফের শামলাপুরে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা চৌকির দায়িত্বরত সদস্যদের অবহিত করেন। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সেনাবাহিনীর এই নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করা হয়েছিল।
“মুক্তিপণ আদায়কারী ডিবি পুলিশের সদস্যরা মাইক্রোবাসযোগে মেরিন ড্রাইভ সড়কে নিরাপত্তা চৌকিতে পৌঁছালে সেনা সদস্যরা থামিয়ে তল্লাশি চালান। এতে পুলিশ সদস্যদের হেফাজত থেকে ১৭ লাখ টাকা পান।”
ওই সময় এসআই মনিরুজ্জামান দৌড়ে পালিয়ে গেলেও সেনা সদস্যরা বাকি ছয়জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
ফরিদুল বলেন, এ ঘটনায় ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় ডিবি পুলিশের ৭ সদস্যকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর ২০১৮ সালের অগাস্টে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।