বিডি প্রতিবেদক :
বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় নিখোঁজ বাকিদের খুঁজতে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস রংপুরের ডুবুরি দল।
এ দুর্ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জরুরি তথ্যের জন্য খোলা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় মাঝ নদীতে উল্টে যায় নৌকাটি। কিছু মানুষ সাঁতরে নদীর তীরে আসলেও ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং নৌকায় থাকা অধিকাংশ যাত্রী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
রোববার ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। পরে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর রংপুর থেকে ডুবুরি দল এসে সন্ধ্যা ৬টার দিকে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
মৃতদের মধ্যে ৮ শিশু
জেলার ইতিহাসে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৮ শিশু, ৪ পুরুষ ও ১২ নারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর আটজনের মৃত্যু হয়েছে। সবগুলো মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
যারা মারা গেছেন
মৃতরা হলেন- বোদা উপজেলার মাড়েয়া ফুটকিবাড়ী এলাকার হেমন্তের মেয়ে কলি রানী (১৪), দেবীগঞ্জ শালডাঙা হাতিডোবার কার্তিক রায়ের স্ত্রী লক্ষ্মী রানী (২৫), কাবুল চন্দ্র রায়ের ছেলে দিপঙ্কর চন্দ্র রায় (৩) বোদার মাড়েয়া বামনপাড়া এলাকার সজিব চন্দ্র রায়ের মেয়ে প্রিয়ন্তী (২), দেবীগঞ্জের লক্ষ্মীগড় ডাঙাপাড়া এলাকার চন্ডি দাসের স্ত্রী প্রমিলা রানী (৫৫), দেবীগঞ্জ পশ্চিম শিকারপুর এলাকার কালি কান্তের ছেলে অমল চন্দ্র (৩৫), রবীন চন্দ্রের স্ত্রী তারা রানী (২৪), বোদার পাঁচপীর বংশীধর পূজারী এলাকার মৃত চুড়ামোহন রায়ের স্ত্রী ধনবালা (৫৭), রমেশ চন্দ্রের স্ত্রী সুমিত্রা রানী (৫৭), ময়দান দীঘি এলাকার বিলাশ চন্দ্রের স্ত্রী সফলতা রানী (৫৫), মাড়েয়া বামনহাট এলাকারর রমেশ চন্দ্রের স্ত্রী শিমলা রানী (৩৫), বোদার বড়শশী কুমারপাড়া এলাকার আহম্মদ আলীর ছেলে হাছান আলী (৫২), বোদা মাড়েয়া আলোকপাড়া এলাকার রমেশ চন্দ্র ও মিনুতি রানীর শিশু কন্যা উশোশী, দেবীগঞ্জের হাতিডুবা এলাকার নারায়ণের শিশু কন্যা তনুশী, বোদার পাচঁপীর মদনহার এলাকার রতন চন্দ্র ও শুতী রানীর শিশু কন্যা শ্রেয়শী, সাকোয়ার গড় দিঘী বাবু বাজার এলাকার ধর্ম নারায়ণের শিশু কন্যা প্রিয়ন্তী, বোদার মাড়েয়া এলাকার রবীন্দ্রের ছেলে বিলাশ চিন্দ্র, বোদা মাড়েয়া বামন হাট এলাকার নির্মল চন্দের স্ত্রী শোভা রানী (২৭) ও খুশি রানী নামে এক নারী। অপর দুজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী ছিল
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী নৌকাটিতে ছিলেন। ছোট নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়রা জানান, মহালয়া উপলক্ষে দুপুরে বোদা, পাঁচপীর, মাড়েয়া, ব্যাঙহারি এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকায় করে বদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় মাঝ নদীতে উল্টে যায় নৌকাটি। কিছু মানুষ সাঁতরে নদীর তীরে আসলেও ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং নৌকায় থাকা অধিকাংশ যাত্রী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। পরে উল্টে যাওয়া সেই নৌকা উদ্ধার করে তীরে রাখেন স্থানীয়রা।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, তাৎক্ষণিকভাবে কোনো নৌকা না পাওয়ায় সেই নৌকা দিয়েই উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়েছে। এখন কোনো কিছুই জানানো যাচ্ছে না।
তদন্ত কমিটি গঠন, খোলা হয়েছে জরুরি তথ্য কেন্দ্র
দুর্ঘটনা তদন্তে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথৈ আদিত্যকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। সবগুলো মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নৌকাডুবিতে হতাহতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য জরুরি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে ৬ নম্বর মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে। সেখানে দায়িত্বে থাকা স্থানীয় ভূমি অফিসের অফিস সহকারী জাকির হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত ৪০ জন নিখোঁজ বলে জানা গেছে। স্বজনরা তাদের সন্ধানে এসে তথ্য দিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
নৌকায় ৭০-৮০ জনের মতো যাত্রী ছিলেন বলে জানিয়েছেন বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোলেমান আলী।
এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, যাত্রীদের বেশির ভাগই মহালয়ার পুণ্যার্থী ছিলেন। তারা দুপুরে বোদার মারেয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়ার ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে বদ্বেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। ঘটনাস্থলে মারওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পুলিশ ছিল। তারা সবাই ওই নৌকায় এত লোক উঠতে নিষেধ করেছিলেন।
‘গতকাল বৃষ্টি হওয়ার কারণে নদীতে পানি বেশি ছিল, স্রোতও বেশি ছিল। নিষেধ করতে করতে সবাই উঠে যায়। যেহেতু ধর্মীয় বিষয় সবাই উঠতে চাইছিলেন। এরপর মাঝনদীতে গিয়ে ডুবে যায় নৌকাটি।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন: এ জেলার ইতিহাসে ভয়াবহ নৌকাডুবি এটি। এখন পর্যন্ত ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে। মৃতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে। আর আহতদের চিকিৎসা খরচ বহন করবে জেলা প্রশাসন।