শিরোনাম :
মহেশখালী ঘাটের অনিয়ম বন্ধ ও সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম প্রকল্প বাতিলের দাবি উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারের জেরে আরসা ও আরএসও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলিতে এক যুবক নিহত এবং পাঁচজন আহত মায়ের ডাক’র সমন্বয়ককে তুলে নেওয়ায় মির্জা ফখরুলের উদ্বেগ কৃষকের ফসল নষ্ট, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব সহ ৭৬ জনের নামে মামলা বদির ‘আন্তর্জাতিক ক্যাশিয়ার’ ফারুককে গ্রেপ্তারে র‌্যাবের অভিযান, দুর্বৃত্তদের হামলা মাহমুদুর রহমানের কারাগারে যাওয়া নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল কীভাবে ভারতে গেলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? দেশে ফিরলেন মিজানুর রহমান আজহারী টেকনাফের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা রক্ষাসহ ১২দফা দাবী বাস্তবায়ন না হলে আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারী বৈষম্য মুক্ত শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠায় রাসূলুল্লাহর স.- আদর্শই একমাত্র পথ “-মুহাম্মদ শাহজাহান

রামু বৌদ্ধ মন্দির ও পল্লীতে হামলার ১০ বছর: সাক্ষীদের অনিহায় থমকে আছে বিচার কার্য

নিউজ রুম / ১৮ বার পড়ছে
আপলোড : শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪৪ অপরাহ্ন

সাকলাইন আলিফ :
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে গুজবের জের ধরে কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ১০ বছর পার হলো আজ। এক সময়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর খ্যাত রামুতে ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে ১২টি বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলা চালায় দুস্কৃতিকারীরা। তবে এখন সম্প্রীতির বন্ধনে সকল ধর্মের মানুষ। সাক্ষীদের সাক্ষদানে অনিহায় ঘটনার বিচার কার্য থমকে আছে। ঘটনার বিচার কার্য শেষ করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সম্প্রীতি অটুট থাকুক এমনটাই দাবী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের। অপ্রীতিকর এ হামলার দিবস উপলক্ষে আজ (বৃহস্পতিবার) রামুর চেরাংঘাটা মৈত্রী বিহার উপাসনালয়ে সকালে বিশেষ স্মরণ সভার আয়োজন হবে। ধর্মীয় অর্চনায় এতে সবার শান্তি কামনা করা হবে, এমনটি জানিয়েছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতা নীতিশ বডুয়া।

জানা গেছে,২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তম বড়ুয়া নামের এক বৌদ্ধ যুবকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার একটি ছবি ট্যাগকে কেন্দ্র করে রামুতে সংঘটিত হয় ভয়াবহ ঘটনা। রাতের অন্ধকারে রামুতে ১২টি বৌদ্ধ বিহার, ৩০টি বসতঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে দুস্কৃতিকারীরা। ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে একইভাবে উখিয়া ও টেকনাফে আরো ৭টি বৌদ্ধ বিহার ও ১১টি বসতঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঘটনার পর পরই সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ বিহার ও ঘরবাড়ি নতুন কারুকাজে পুণনির্মাণ করে দেয় সরকার। সরকারি পৃষ্টপোষকতায় নান্দনিকভাবে নির্মিত এসব বৌদ্ধ বিহার ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জেলা দায়রাজজ আদালতের সরকারি কৌশলী এডভোকেট ফরিদুল আলম জানান,এঘটনায় ১৯ টি মামলা দায়ের হলেও একটি মামলা আপোষে নিস্পত্তি হয়। এজাহারভুক্ত ৩৭৮ জনসহ অজ্ঞাত আরো ১৪/১৫শ জনকে অভিযুক্ত করে ১৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৮টি মামলায় ১০২০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, ঘটনার ১০ বছরে এসে এসব ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় এনে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সম্প্রীতি অটুট থাকুক।
রামু বৌদ্ধ কল্যান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পলক বড়ুয়া আপ্পু বলেন, বৌদ্ধপল্লী ট্যাজেডির হোতাদের দ্রæত শাস্তি নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল গঠন করা হলেও সাক্ষীর কারণে গত ১০বছরেও মামলার চূড়ান্ত অগ্রগতি হয়নি। তবে বিচারকার্য নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও সম্প্রীতিতে আস্থার সংকট অনেকটা কেটেছে। সরকার নিজ উদ্যোগে দ্রæত বিচার কার্যক্রম শেষ করলে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করতে কেউ সাহস পাবেনা। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান আইনজীবী ঐক্য পরিষদ কক্সবাজার জেলা শাখার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা বলেন, বৌদ্ধপল্লী ট্র্যাজেডিতে রামুর সহস্রাব্দের গর্ব ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে’ যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল তা কেটেছে। আমাদের প্রত্যাশা প্রকৃত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত হলে সম্প্রীতির জায়গাটা আরও সমৃদ্ধ হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ- দ্রæত সময়ে দৃষ্টিনন্দন ক্যাং স্থাপন করে ক্ষতস্থান মুছে দেয়ায়। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম পিপি এম বার বলেন, মোট ১৮টি মামলায় এ পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছে। যেসব আসামি পলাতক রয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা চলছে।
রামু সীমা বিহারের আবাসিক ভিক্ষু সিল প্রিয় বলেন, বিচার কাজটি সম্পন্ন না হওয়ায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন এখনো ভয় ভীতির মধ্যে রয়েছে। আমরা চাই এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক। সে সাথে নিরপরাধ কোন মানুষ যাতে শাস্তি না পায় সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।
জেলা বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি মাস্টার জেমসন বড়ুয়া বলেন, আমরা চাই নেক্কার জনক হামলার সাথে যারা জড়িত তাদের জন্য অবশ্যই শাস্তি হয়। সাক্ষীরা হয়তো নিরাপত্তার অভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছে না। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে সাক্ষ গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চত করার কথা বলেন এই বৌদ্ধ নেতা।
ঘটনার ১০ বছর পার হয়ে গেছে। দীর্ঘসুত্রিতার কারনে মামলার প্রথমদিকে যে গতি ছিল তা ভাটা পড়েছে। ভুক্তভুগিদের মধ্যে অনেকে স্বাক্ষ্য দেয়ার ক্ষেত্রে আর এগুতে চায়না। সবকিছু যেন ঠিক হয়ে গেছে এমন ভাব সবার। যার দরুন মামলার কার্যক্রম থমকে আছে।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতা জেমসন বড়ুয়া বলেন,রাস্ট্রপক্ষ ও ভুক্তভুগি স্বাক্ষীদের মধ্যে সমন্বয় করে মামলার সুরাহা হবে বলে আশা করছি আমরা।
কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি, প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার। শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী যারা এই ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত তাদের জন্য শাস্তি হয়, নিরপরাধ কোন মানুষ যাতে কষ্ট না পায়। আমরা চাই রামুর যে ঐতিহ্য সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে সেটি বজায় থাকুক। কারণ এসব অপরাধীদের বিচার না হলে বাংলাদেশে এরকম ঘটনা আরো ঘটবে।
ওই ঘটনায় মামলা হয়েছিল ১৯টি। এরমধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ১৮টি মামলা করেন। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে অপর একটি মামলা করলেও পরবর্তীতে বিবাদীদের সঙ্গে আপোষনামায় নিষ্পত্তি হয়। বিচারাধীন ১৮টি মামলায় আদালতে স্বাক্ষী না আসায় বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা। তবে সাক্ষীদের উপস্থাপনের মধ্যদিয়ে সব মামলা নিস্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট অপরাধিদের বিচার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান রাস্ট্র পক্ষের কৌশলী এডভোকেট ফরিদুল আলম। তিনি জানান ১৮ টি মামলার চার্জশিটে কিছু ত্রুটি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলা পুন তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকসহ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেন আর কোন সহিংসতা না হয় তার জন্য সজাগ থাকার কথা বলছেন সকলেই।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর