বিডি প্রতিবেদক :
কমিটি বানিজ্য করতে না পারায় কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মারুফ আদনানের ইন্ধনে শহর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মনিরুল হকের নেতৃত্বে চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মো: আকিথ হোসাইনের উপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের সাথে আলাপ শেষে করে বাড়ি ফেরার পধে বুধবার ( ৬ অক্টোবর ) রাত পৌণে ১১ টায় শহরের পুরাতন পান বাজার সড়কের ( ফিরোজা শপিং কমপ্লেক্সে) জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের বাসভবনের নিচেই ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
কেন্দ্র থেকে কমিটি আনায় এবং জেলা ছাত্রলীগের পরামর্শ ছাড়া ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করায় পরিকল্পিতভাবে ডেকে এনে ওই সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে দাবী করেছেন চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের দুইনেতা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত শহর ও জেলা ছাত্রলীগের দুই সাধারন সম্পাদকই।
ঘটনার প্রত্যেক্ষদর্শী ওই সড়কের কয়েকজন ব্যবসায়ীর দেয়া তথ্য মতে, বুধবার রাত পৌণে ১১ টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মারুফ আদনানের বাসা থেকে বের হয়ে মার্কেটের নিচে আসে চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরহান মাহমুদ রুবেল ও সাধারন সম্পাদক মো. আকিথ হোসাইন। তখনই ১০/১২ জনের একটি সন্ত্রাসী দল তাদের দুইজনকে ঘিরে ধরে। ওই সময় সন্ত্রাসীরা আকিথকে মারধর করে এদিক সেদিক ছড়িয়ে যায়। তবে কে বা কারা হামলা করেছে তাদেরকে চেনা সম্ভব হয়নি বলে জানান ওই ব্যবসায়ীরা।
এবিষয়ে আহত চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মো. আকিথ হোসাইন বলেন, ৩১ জুলাই রুবেলকে সভাপতি ও আমাকে সাধারন সম্পাদক করে চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৯ সেপ্টেম্বর আমাদের উপজেলা আওতাধীন ৪টি নিস্ক্রিয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করি। কিন্তু সেদিনই চকরিয়া উপজেলার আমাদের বিলুপ্ত করা কাকারা,খুটাখালি,চিরিংগা এবং বরইতলি ইউনিয়ন শাখার কমিটিগিুলেঅ পূর্ণবহাল করেন জেলা ছাত্রলীগ। বিষয়টি নিয়ে আমরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের সাথে কথা বললে তারা আমাদের দেখা করতে বলেন। এতদিন সাধারন সম্পাদক ঢাকায় থাকার কারণে আমরা দেখা করতে পারিনি। কিন্তু বুধবার প্রথমে রামুর উপজেলার জোয়ারিয়ারনালায় গিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির সাথে দেখা করি। এরপর সভাপতির পরামর্শে সাধারন সম্পাদকের সাথে দেখা করি। সেখান থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে সাধারন সম্পাদকের বাসার নিচেই আমার উপর হামলা হয়।
তিনি আরো বলেন, কমিটি বানিজ্য করতে না পারায় এবং তাঁর ( মারুফ আদনানের) অনুমতি ছাড়া ইউপি কমিটি বিলুপ্ত করায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মারুফ আদনানের হুকুমেই শহর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মনিরের নেতৃত্বে আমার উপর হামলা হয়েছে। এর আগেও জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আমার সথে খারাপ ব্যবহার করেছে। বিষয়গুলো আমি কেন্দ্রকে অবহিত করেছি।
আহত আকিথ বলেন, এব্যাপারে বৃুহস্পতিবার আমি কক্সবাজার সদর থানায় এজাহার দায়ের করব।
আহতের সাথে থাকা চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরহান মাহমুদ রুবেল বলেন, কেন্দ্র থেকে কমিটি দেওয়ায় প্রথম থেকে আমাদের উপর ক্ষুব্দ ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মারুফ। ঢাকাতেও তিনি আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছিলেন। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর আমাদের বিলুপ্ত করা কমিটি ক্ষোভের বশে সেদিনই পূর্ণবহাল করেন তাঁরা। এবিষয়ে কথা বলতে এবং একটি বর্ধিত সভার আয়োজন করতেই আমরা সাধারন সম্পাদক মারুফের বাসায় যাই। আমরা যখন সেখানে যাই তখন সেখানে শহর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মনির সহ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিলেন। কিন্তু আমরা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মনিরকে ইশারা করেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মারুফ আদনান। তখন সে বের হয়ে যায়। এরপর আমরা সেখানে ঘন্টা খানেক সময় অবস্থান করে বের হওয়ার সাথে সাথে আমাদেরকে ঘিরে ধরা হয়। পরে আকিথের উপর হামলা করে হামলাকারীরা কয়েকজন মার্কেটের ভেতর ডুকে যায়। কয়েকজন দ্বিতীয়তলার দিকে উঠে। সেসময় হামলার বিষয়টি আমি মুঠোফোনে মারুফ আদনানকে জানানোর সাথে সেখানে মনির সহ হামলাকারীদের কয়েকজন আমাদেরকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল নিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, মার্কেটের চারপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই প্রমান মিলবে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের অনুসারী শহর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মনির।
সভাপতি আরো বলেন, হামলার বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে জেলা আওয়ামীলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে অবহিত করা হয়েছে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত শহর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মনিরুল হক বলেন, ছাত্রলীগ মানে আমার ভাই। আমি কেন আমার ভাইয়ের উপর হামলা করব। আমি তো আমার ভাইকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে গেছি।
তিনি আরো বলেন, যেখানে হামলার ঘটনা ঘটেছে সেখানে টোকাই, ছিনতাইকারীদের উপদ্রব বেশি। হয়ত মোবাইল ছিনতাই করতেই টোকাইরা এঘটনা ঘটিয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মারুফ আদনান বলেন, হামলার খবর শুনে আমি মনিরকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে তাদেরকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে বলি। পরে আমি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলি কিন্তু কেউ হামলাকারীদের চিনতে পারেনি। আমি
আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। সেখান থেকে হামলাকারীদের সনাক্ত করা হবে। এছাড়া আমি সদর থানার ওসিকে ফোন করেছি ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে।
তিনি আরো বলেন, চকরিয়ার দুই নেতা বুধবার রাতে যে আমার বাসায় আসবে তা আমি আগে জানতাম না। এছাড়া তারা কমিটি বিলুপ্ত করা, পূর্নবহাল, কর্মী সমাবেশ বিষয়ে কথা বলতে আমার এখানে সর্ব্বোচ্চ ১০ মিনিট ছিল। এই সময়ে তো আর হামলা কিংবা মারধরের পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, আমার মনে হচ্ছে মোবাইল ছিনতাইকারীরা তাদের মোবাইল ছিনিয়ে নিতেই এই হামলা করেছি। তবে আমি চাই হামলার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।
এবিষয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মো.রেজাউল করিম বলেন, হামলাকারী কারা তারা চিহ্নিত নন। ওই ঘটনায় সদর থানায় এজাহার দেয়া হবে । আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করে বের করবে এখানে কে বা কারা দোষী। পাশাপাশি জেলা আওয়ামীলীগও তদন্ত করবে। এছাড়া আহতদের বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে বিষয়টি জানাতে।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের বাসার নিচে হামলার বিষয়ে কোন খবর এখনো কেউ আমাকে দেয়নি। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।