মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া: ময়মনসিংহের ত্রিশালে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মা-বাবা ও বোন হারানোর সময় অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া সেই নবজাতককে কন্যা হিসেবে পেতে কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মো.রেজাউল করিম। এই নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকও স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, যে ওই নবজাতক কন্যা সন্তানকে পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করবেন তাকেও পাঁচ লাখ টাকা উপহার হিসেবে দিবেন বলেও জানান তিনি। গত শনিবার (১৬ জুলাই) বিকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের কোর্টভবন এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাক চাপায় প্রাণ হারান অন্ত:স্বত্তা রতœা বেগম (৩২), তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) ও তাদের ছয় বছরের মেয়ে সানজিদা। প্রসবের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় নিজের আলট্রাসনোগ্রাম করানোর জন্য রতœা ও তার স্বামী এবং ছয় বছরের মেয়েকে নিয়ে স্থানীয় একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথেই ট্রাকচাপায় ঘটনাস্থলে তারা তিনজন নিহত হন। তবে এ সময় অলৌকিকভাবে মায়ের গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ঠ হয় ফুটফুটে এক নবজাতক। জন্ম নিয়ে রাস্তায় পড়ার সাথে সাথে ছুটে যায় পুলিশ ও আশপাশের লোকজন। পরে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, নবজাতক কন্যাটি জীবিত আছে। তাই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ সদরের সিবিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে এক্স-রে রিপোর্টে জানা যায়, শিশুটির ডান হাতের দুটি হাড় ভেঙ্গে গেছে। বর্তমানে ওই নবজাতক শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে লাবীব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শিশুটি শঙ্কামুক্ত আছে এবং আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ভাঙা হাড় জোড়া লাগাসহ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। জানা যায়, ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী রতœা বেগমের আরও দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এর মধ্যে মা-বাবার সঙ্গে ছয় বছর বয়সী সানজিদা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দুজন হলোÑ ১০ বছরের মেয়ে জান্নাত ও সাত বছর বয়সী ছেলে এবাদত। মা-বাবা ও বোনকে হারিয়ে এখন তারা নির্বাক, দিশেহারা স্বজনরাও। এদিকে, দুর্ঘটনার পর পুলিশ ট্রাকটি জব্দ করলেও পালিয়ে যায় চালক রাজু আহমেদ ওরফে সিপন। পরে গত সোমবার ঢাকার অদূরে সাভার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তার কাগজপত্র পরীক্ষার করে দেখে যায়, রাজুর ভারী যানবাহন চালানোর অনুমতি ছিল না। কেবল মধ্যম সারির যান চালানোর একটি সনদ ছিল। সেটির মেয়াদও পেরিয়েছে ২০১৬ সালে। ট্রাকের মালিক রাজশাহীর ব্যবসায়ী মনজুর। ট্রাকটির ধারণক্ষমতা সাত টন হলেও ঘটনার সময় সাড়ে ১৩ টন মালামাল বোঝাই ছিল। ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ মালামাল নিয়ে চলা ট্রাকটির নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে চালক পথচারীদের ওপর তুলে দেয় বলে র্যাব’র আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন নিশ্চিত করেন। চকরিয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মো.রেজাউল করিম বলেন, আমি একটা কন্যা সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে অনেক আকুতি করেছি। একটি কন্যা সন্তানের আশায় আমার ঘরে মো.রাওয়াদুল করিম রাওয়াদ, মো.বিলওয়াদুল করিম বিলওয়াদ, মো.রাওয়ানুল করিম জারিফ এবং মো.নাউফ করিম নাউফ নামের চার ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে। তারপরও আল্লাহর কাছে সন্তুষ্ট। আমার স্ত্রী হুমাইরা আকবর কাজলও ওই নবজাতক কন্যা শিশুটিকে মেয়ের দিয়ে বড় করতে চাই। তিনি আরও বলেন, আমি যতবারই ওই নবজাতকের ছবি দেখি ততবারই বুক ফেটে কান্না চলে আসে। আমরা ওই নবজাতক কন্যা সন্তানকে নিজের মেয়ে হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে লালন-পালন করতে চাই। যে আমাকে ওই নবজাতককে পাইয়ে দিতে সাহায্য করবে তাকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দিতেও আমি রাজি আছি। এছাড়াও ওই নবজাতককে পেতে যেকোন স্বর্ত পূরণ করতেও আমি রাজি আছি। ওই নবজাতকের নামে আমার যা সম্পত্তি আছে ছেলেদের মতো সমান অংশ ওর নামে লিখে দিবো। শুধু ওই নবজাতককে আমাদের কন্যা হিসেবে পেতে চাই।