চৌধুরী রোতাব :
নানা কারণে হুমকির মুখে রয়েছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ। তাই এখানকার পরিবেশ প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপকে প্রাকৃতিক স্বর্গ হিসাবে রাখতে আলাদা গাইড লাইন করার পাশাপাশি বিপর্যয়ের হাত থেকে দ্বীপকে রক্ষার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিবেশ ঠিক রেখে পর্যটকরা যাতে যেতে পারে সে কথা বলছেন স্থানীয়রা।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। যে দ্বীপের প্রতি রয়েছে পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ। এখানকার পরিবেশ প্রকৃতি ও স্বচ্ছ পানি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। তাই সারা বছরই এখানেই পর্যটকরা ছুটে যেতে চাই। কিন্তু পর্যটকদের অবাধ যাতায়াত, প্লাস্টিক ব্যবহারসহ নানা কারণে দ্বীপটির জীববৈচিত্র ও পরিবেশ দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে। এরকম অবস্থায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পরিবেশ প্রতিবেশ জীববৈচিত্র সুরক্ষা ও পরিবেশ বান্ধব পর্যটন উন্নয়নে অংশজনের সমন্বয়ে এক কর্মশালার আয়োজন করে ইউএনডিপি ও পরিবেশ অধিদপ্তর।
শনিবার সকালে কক্সবাজার শহরের এক হোটেলে আয়োজিত কর্মশালায় সেন্টমার্টিন দ্বীপ রক্ষায় অংশীজনরা নানা রকম বক্তব্য তুলে ধরেন।
সেন্টমার্টিনের স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন,পরিবেশ ও প্রতিবেশ ঠিক রাখার পাশাপাশি পর্যটকরা যাতে যাতায়াত করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। কারণ সেন্টমার্টিনের মানুষ পুরোপুরি পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। তাই পর্যটকদের যাতায়াত ঠিক রাখতে হবে পরিবেশও ঠিক রাখতে হবে। পর্যটক বন্ধ থাকলে দ্বীপের মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে যায়।
কর্মশালায় কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে নির্মাণ সামগ্রী ও প্লাস্টিক পণ্য যাওয়া বন্ধ করতে হবে। তা না হলে এই দ্বীপকে কোন ভাবে রক্ষা করা সম্ভব নয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ বলেন,
সেন্টমার্টিন দ্বীপকে রক্ষা করার জন্য, আলাদা গাইড লাইন করতে হবে। সেখানে গেলে কি কি করা যাবে কি কি করা যাবে না তার সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকতে হবে। তাহলেই সেন্টমার্টিন কে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ বলেন,
সেন্টমার্টিন কে প্রকৃতির স্বর্গ হিসেবে রাখা উচিত। কারণ সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের অহংকার। এখন যেভাবে চলছে সেভাবে ই চলতে দেওয়া যায় না। যে কোন মূল্যে সেন্টমার্টিন এর পরিবেশ ও জীববৈচিত্রকে সংরক্ষণ করতে হবে। তা না হলে আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা খারাপ হয়ে যাব।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন,প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন দেখতে এখন যেসব পর্যটকরা যাচ্ছে তারা আগ্রাসী পর্যটক ,তারা প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে। পর্যটকদের সংবেদনশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র কে রক্ষার কথা বলেন জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব।
যেকোন মূল্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ প্রতিবেশ ওজীববৈচিত্র কে রক্ষা করা জরুরী বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দা মাসুমা খানম। এর আগে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ সংরক্ষণ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ ও কক্সবাজারের প্রজেক্ট ম্যানেজার মাহতাবুল হাকিম।
কর্মশালায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু তাহের, মুহাম্মদ আলী জিন্নাত, সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান, দীপক শর্মা দিপু ও স্কোয়াবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর।
কর্মশালায় কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. গিয়াস উদ্দিন, সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সোলাইমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরওয়ার আলম, উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবু জাফর রাশেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম, টুয়াক সভাপতি আনোয়ার কামাল ও সাধারণ সম্পাদক একেএম মুনীবুর রহমান টিটুসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী ও অংশীজনেরা উপস্থিত ছিলেন