শাহ্ আলম শাহী,দিনাজপুর থেকে:
কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ায় যবুথবু অবস্থা উত্তরের জনপদ দিনাজপুরের। মানুষের পাশাপাশি
প্রাণিকুল পশুপাখিরও বেহালদশা।
আজ বুধবার জেলার সর্বোনিন্ম তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বেড়েছে হিমেল হাওয়া। বাতাসের আদ্রতা ৯৫ শতাংশ। গতিবেগ ০০৪ নটস। ঘন কুয়াশার সঙ্গে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছ শ্রমজীবী ও দরিদ্র মানুষের দূর্ভোগ। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেনা ঘরের বাইরে।তীব্র শীতে কাজ মিলছে না ‘মানুষ বিক্রির হাটে।’
শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে,খড়-কুটো জ্বালিয়ে। স্টেশন,বাস স্ট্যান্ড,মোড় সহ বিভিন্ন এলাকায় খড়-কুটো জ্বালিয়ে মানুষ তা নিচ্ছে। এমন দৃশ্য প্রায় চোখে পড়ছে।
‘মানুষ বিক্রির হাট’ নামে খ্যাত শহরের ষষ্ঠীতলা মোড়ে কাজের সন্ধ্যানে আসা নির্মাণ শ্রমিক মোতালেব হোসেন (৪৮)জানালেন, তিনি বিরল উপজেলা বিজোড়া থেকে কাজের সন্ধানে সকাল সড়ে ৭টার সময় এখানে এসেছেন। কিন্তু সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ভাগ্যে জুটেনি কাজ।
তিনি বলেন, ‘বাপুরে বাকিতে নাস্তা এখোনে করিনি। আইজ আর কাম (কাজ) পাওয়া মুশকিল। যে জার ( শীত) করছে। এই সপ্তাহে এর আগোত আরো দু’দিন কাম (কাজ) পাওনি।’
বালুয়াডাঙ্গা অন্ধ মহাফেজ মোটে কথা হয়, শ্রমজীবী আইনুল ইসলামের (৪৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আইজ খুবই জার (শীত) করছে। বের হওনি ( হয়নি) কামোত ( কাজে)। কাইল গেইছুনু ( গেছিলাম)’আধাবেলা কাম করি দুইশ টাকা পাইছো ( পেয়েছি)। এই জারত কাম নাই।’
বালুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে অটো ভ্যান চালক সিদ্দিক হোসেন (৫০) জানালেন,’খুবই কষ্টে আছি ভাই। এই শীতে ভাড়া-বাট্রা নাই। সকাল সকাল মানুষ বের হচ্ছে না হওয়ায়,কাজেও নাই। কঠিন ঠান্ডা।গরম কাপড়-চোপড়ের এইবার মেলায় ( বেশি) দাম। খুবই কষ্টত আছি ভাই।’
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়া সহকারী আসাদুজ্জামান জানান, আজ বুধবার সকাল ৯ টায় জেলায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৫ শতাংশ। গতিবেগ ০০৪ নটস। দু’একদিনে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে।
শীতের তীব্রতার সাথে বেড়েছে, শীতজনিত রোগ। শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।হাসপাতালগুলোতে রোগির সংখ্যাও বেড়েছে।
দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডে ২৪ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ৪৭ জন।
ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র স্টাফ নার্স নাসিমা সুলতানা জানায়, সাধারণত ২৫-৩০ জন রোগী ভর্তি থাকে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে প্রতিদিন ৪৫-৫০ জন রোগী ভর্তি থাকছে। এসব শিশু জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে।
চিরিরবন্দর উপজেলার আন্ধারমুহা গ্রাম থেকে
এসেছেন তৈয়বা বেগম ( ৫৩)। তিনি মেয়ের শিশু নিয়ে এসেছেন।সাথে মেয়েও রয়েছে।তার নাতি সুইটিত বয়স আড়াই মাস। নিজেরও ঠান্ডা লেগেছে জানিয়ে তৈয়বা বলেন, চারদিন ধরে নাতির জ্বর, সর্দি। স্থানীয়ভাবে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাইয়েছেন, কিন্তু কমছে না। দুইদিন হয় হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।’
হাসপাতালের নিচতলায় ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১০টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ১৯ জন। দুই দিন আগে ৪০ জন রোগী ভর্তি ছিল এখানে। সিনিয়র স্টাফ নার্স রিনা পারভীন বলেন, ‘এক থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুরাই বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। পাতলা পায়খানার সঙ্গে বমি হচ্ছে শিশুদের।’
এদিকে ঘনকুয়াশার কারণে সড়ক-মহাসড়কে দিনের বেলাতেও যান-বাহন চলাচল করছে,হেড লাইড জ্বালিয়ে। এর পরও বাড়ছে,সড়ক দুর্ঘটনা। সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে,রেলওয়ে ট্রেনে। রাজধানী ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী আন্তঃনগর ট্রেন ‘ পঞ্চগড় এক্সপ্রেস তিন-চার ঘন্টা অবিলম্বে চলাচল করছে।
এতে চরম দূর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা। তীব্র শীতেও তাদের ট্রেনের জন্যে স্টেশনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।