শিরোনাম :
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে- টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি পেকুয়া থানার নতুন ওসি মোস্তাফা’র যোগদান নারী-পুরুষ সমতা বিষয়ে শিশুদের সচেতন করতে কক্সবাজারে আরডিআরএস বাংলাদেশের নতুন প্রকল্প মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা। -মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা কক্সবাজারে দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ চিকিৎসা সেবা : রোগি শূণ্য হাসপাতাল # চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় মামলা; গ্রেপ্তার ২ কক্সবাজারে প্রবল বর্ষণ অব‍্যাহত উখিয়ায় ককটেল মৌলভীর সাম্রাজ্যে বনবিভাগের থাবা, বনের জমি উদ্ধার বিভাজনের রাজনীতিতে পা দিলে রাস্ট্র পুনর্গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা যাবে না–সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ কক্সবাজারে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর ফোন চুরি প্রান্তিক মৎস্যজীবী পরিবারের নারীদের নিয়ে “নারী সম্মেলন”

অবশেষে বাঁকখালী নদী দখল মুক্ত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান শুরু

নিউজ রুম / ১৭ বার পড়ছে
আপলোড : শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন

বিডি প্রতিবেদক :
উচ্চ আদালতের নির্দেশে অবশেষে কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালী নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন। এ উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে বাঁকখালীর তীরে সারাদিন নানা ঘটনা ঘটেছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ঠেকাতে নানা চেষ্টা চালিয়েছে দখলবাজরা। সাংবাদিকদের উপর হামলা চালানোর ঘটনাও ঘটেছে। এতে উদ্বেগ জানিয়েছে সাংবাদিক সংগঠনগুলো। মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ৯ টা এসকে বেটার দিয়ে ৩ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কথা জানিয়েছে প্রশাসন। এই অভিযান আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত জ্বালা ম্যাজিস্ট্রেট।
উচ্ছেদের নেতৃত্বদানকারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাটে নদী, খাল ও বালুচর শ্রেণির ৬ শত হেক্টরের বেশি জমির প্যারাবন ধ্বংস করে ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ৬ শতাধিক স্থাপনা। উচ্চ আদালত থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদের আদেশ রয়েছে। যে নিদের্শ মতে, মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। যা চলে টানা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

তিনি জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ, বিআইডবিøউটিএ সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিততে উচ্ছেদ অভিযানের প্রথম দিন ৩ শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। অন্যান্য সকল উচ্ছেদ সম্পন্ন করতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
দখলদারদের থাবায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রাণ হিসেবে পরিচিত বাঁকখালী নদী। এর সাথে বিপন্ন করা হয়েছে নদীর তীরবর্তী প্যারাবন। ইচ্ছেমতো তীর দখল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী প্রায় ৬শ হেক্টরের বন নিধন করে চলছে ভরাট ও প্লট তৈরির কাজ। নির্মাণ করা হচ্ছে একের পর এক স্থাপনা।

অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে মঙ্গলবার সকাল হতে অবৈধ দখল উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আবু নাছের মোঃ হেলাল উদ্দিন জানান, নদী দখল ও বন ধ্বংসে জড়িতদের তালিকায় এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা এমনকি জনপ্রতিনিধিও রয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট দফতর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করেই দিনে-দুপুরে এসব দখল, বন ধ্বংস এবং স্থাপনা নির্মাণ করেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে অভিযান শুরু করায় তিনি প্রশাসনকে ধন্যবাদ ও জানান।
কক্সবাজারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আবু সুফিয়ান জানান, উচ্ছেদ করা জমি নদীর। এটা আবার নদীর কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে। এর জন্য এসব জমি বিআইডব্লিউটি এর কাছে হস্তান্তর করা হবে।
\ সাংবাদিকের উপর হামলা \
বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে দখলের উচ্ছেদ অভিযানে দুপুরে ২ টার পর দায়িত্বপালনরত সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়েছে আবদুল খালেক নামের এক দখলদার। এতে কয়েকজন সাংবাদিক আহতও হয়েছেন।
উপস্থিত সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, হঠাৎ হাতে লাঠি নিয়ে আবদুল খালেক সহ যুবকরা গালি-গালাজ করতে করতে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়। এসময় ডিবিসি নিউজ ও বিডিনিউজের প্রতিনিধি শংকর বড়ুয়া রুমি, আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি মাইন উদ্দিন শাহেদ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপু সহ কয়েকজন ক্যামেরা পার্সনকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
পরিস্থিতি দেখে উপস্থিত পুলিশ সহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
উচ্ছেদের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটি, কক্সবাজার ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সহ কয়েকটি সাংবাদিক সংগঠন।
কক্সবাজার ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এস এ টেলিভিশনের রিপোর্টার আহাসান সুমন বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের উপর হামলা ও হুমকির ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। হুমকি দাদাকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিও জানান এই সাংবাদিক নেতা।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, উচ্ছেদ চলমান রয়েছে। থাকবে। এখানে অনেকভাবে উচ্ছেদ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। অনেকেই আইনজীবী এনে উচ্ছেদে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশে এ উচ্ছেদ। নদীর সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ পর্যন্ত অভিযান চলবে। সাংবাদিকদের উপর হামলাকারি আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছেন তিনি।
সাংবাদিকদের উপর হামলাকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রকাশ্যে এমন ঘটনাকারি চিহ্নিত একজন দখলদার। তার বিরুদ্ধে প্রশাসন দ্রæত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।
\ পরিবেশ সংগঠক, বিআইডব্লিউটিএ, নদী রক্ষা কমিশন যা বলছেন \
পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘দেরিতে হলেও বাঁকখালী নদী দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করায় প্রশাসন সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে অভিযানে পুরো জায়গা উদ্ধার করে নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় দখলদারচক্র সুযোগ নিবে এবং অভিযান নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি করবে। কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম থেকে পেশকারপাড়া পর্যন্ত ৫টি দাগে নদী, খাল ও বালুচর শ্রেণির ১৪৬ একর বাঁকখালী নদীর সরকারি জমি গত দুই বছরে প্রকাশ্যে দখল করা হয়েছে। এসব জমির ১০০ একর প্যারাবন, জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংস করা হয়েছে। এসব দখলে কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম কেন্দ্রিক ২টি এবং পেশকার পাড়া কেন্দ্রিক একটি চক্র জড়িত।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ এর উপ পরিচালক নয়নশীল জানান, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রæয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার বিআইডব্লিউটি এ-কে বাঁকখালী নদী বন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। প্রজ্ঞাপনে নদীর তীরের ৭২১ একর জমি বিআইডব্লিউটি একে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিলো। পরে ওই সময়ের জেলা প্রশাসনের আপত্তির কারণে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর ভূমি পুনঃ যৌথ জরিপ করা হয়। জরিপে নির্ধারিত ২৬৯ দশমিক ৪২৫ একর ভূমি নির্ধারিত হয়েছিল।

বিআইডব্লিউটি এ এর পক্ষে বিভিন্ন সংস্থায় পাঠানো এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাঁকখালী নদী বন্দরটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় তীরের ভূমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। নদী দখলের সাথে যুক্ত রয়েছে কক্সবাজারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। সংস্থাটি তাদের তদন্ত রিপোর্টে নদী দখলের সাথে জড়িত ১৩১ জনকে চিহ্নিত করে দখলদারকে উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দেয়।
এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের একটি রিটের পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে ২০১৬ সালে রায় ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে নদী তীরভূমি বিআইডবিøউটিএ-কে বুঝিয়ে দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।
পরিবেশবাদি সংগঠন নেতৃবৃন্দের মতে, খুরুশকুলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কস্তুরাঘাট পয়েন্টে বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘের একটি সেতু। এ সেতুটি সম্পন্ন হলে খুরুশকুল ও বৃহত্তর ঈদগাঁও অঞ্চলের সঙ্গে শহরের বিকল্প সড়ক যোগাযোগ তৈরির পাশাপাশি কমে আসবে দুরত্ব। কিন্তু সেতুটিই যেন বাঁকখালী নদী ও তীরবর্তী প্যারাবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুর জন্য সংযোগ সড়ক তৈরি হওয়ার আগেই সড়কের দুই পাশে প্যারাবন ধ্বংস করে নদী দখলের প্রতিযোগিতা চলেছে। নদী তীরের প্যারাবনের গাছপালা নিধন করে সেখানে বালু ফেলে নদী ভরাট করা হচ্ছে। ভরাট জমিতে প্লট বানিয়ে বিক্রিও শুরু হয়েছে। এভাবে সংযোগ সড়কের পাশে প্রায় ৬’শ হেক্টর এলাকার প্যারাবন উজাড় করে তৈরি হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা।
গতবছরের ডিসেম্বর মাসে পরিবেশ অধিদফতর দখলদারদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে। এ ঘটনায় কেউ গ্রেফতার না হওয়ায়, মামলার পরও দখল কার্যক্রম বন্ধ হয়নি।

পরিবেশ অধিদফতর, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও বিআইডব্লিউটিএর পৃথক প্রতিবেদনে বাঁকখালী নদী দখলের সাথে জড়িত ১৩১ জনকে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে নবনির্মিত সেতু ঘিরে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমে জড়িত আছেন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। এদের ২৩ জনের বিরুদ্ধে আবার পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগে বহু আগে থেকেই একাধিক মামলা রয়েছে।

এদিকে, গত ২৪ জানুয়ারি বাঁকখালী নদী ও প্যারাবনের অবস্থা পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। নদী দখল আর বন ধ্বংসের চিত্র দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দিনে-দুপুরে নদী দখল ও বন ধ্বংস অত্যন্ত বিস্ময়কর। এ দেশে নদী ও বন রক্ষার যে আইনগুলো আছে, প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, উচ্চ আদালতের যে রায়গুলো আছে, সেগুলো যেন একেবারেই অর্থহীন। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, নদী হলো জীবন্ত সত্তা। মানুষকে হত্যা করলে যেমন শাস্তি হয়, সে রকম নদীকে হত্যা করলেও শাস্তি হবে। ব্রিজ থাকে নদীর ওপরে, এখানে ব্রিজ যেন বাড়িঘরের ওপরে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এখানে নদী রক্ষায় সৃজিত বিশাল প্যারাবন নিধন করা হয়েছে। প্রকাশ্যে নদী দখল, বন ধ্বংস করা হচ্ছে, অথচ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা, পুলিশ, প্রশাসন সর্বোপরি সরকার যেন, মনে করছে যে আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে, যে রায় দিয়েছে, সেই রায় মানতে হবে না! বিষয়টি আবারও আদালতে উপস্থাপন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন বেলা প্রধান।

বেলার প্রধানের এ ঘোষণার পরই বাঁকখালী নদী তীর পরিদর্শনে যান কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. জিল্লুর রহমান, পরিবেশ অধিদফতর, বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

ইতোমধ্যে নদীর তীর দখল উচ্ছেদ নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালত আবারও নির্দেশনা দিয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকে সোমবার মাইকিং করা হয়। মালামাল স্ব স্ব উদ্যোগে সরিয়ে নিতে অনুরোধ করা হয় সেই মাইকিংয়ে। ঘোষণা মতো, মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল হতে বাঁকখালী তীরের কস্তুোরাঘাট এলাকা দখলমুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছে টাস্কফোর্স। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহর নেতৃত্বে চলা এ অভিযানে র্যাব, পুলিশ, পরিবেশ অধিদফতর, দমকল বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেয়।

নদী দখল ও প্যারাবন ধ্বংসের বিষয়ে এডিএম আবু সুফিয়ান বলেন, নদীর জীবন্ত সত্তাকে হত্যার পর বন নিধন চরম অমানবিকতা। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে এসব অবৈধ দখল যেকোন ভাবে উচ্ছেদ করা হবে।

বাঁকখালী দখলে যাদের নাম রয়েছে :-
পরিবেশ অধিদপ্তর, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও বিআইডব্লিউটিএ’র পৃথক প্রতিবেদনে বাঁকখালী নদী দখলে জড়িত ১৩১ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে নতুন নির্মিত সেতুকে ঘিরে দখলে জড়িত রয়েছেন আরও ৫০ জনের মতো, যাদের মধ্যে ২৩ জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর মামলাও করেছে।

এই প্রতিবেদনে যাদের নাম উঠে এসেছে তারা হলেন- কক্সবাজারশহরের বদরমোকাম এলাকার জসিম উদ্দিন, হোটেল তাজসেবার খাইরুল ইসলাম জিসান, নতুন বাহারছড়ার গিয়াস উদ্দিন, মাসেদুল হক রাশেদ, ঝাউতলার মোহাম্মদ আলী মুন্না, নতুন বাহারছড়ার জনি, মেয়র মুজিবুর রহমান, বদর মোকাম এলাকার কফিল উদ্দিন এ্যানি, রুমালিয়ারছড়ার মো. ইসমাইল, ঝাউতলা এলাকার আনিস মোহাম্মদ টিপু, শাহীনুল হক, নেত্রকোনা থেকে আসা ওমর ফারুক, রামুর হেলালুর রশিদ, টেকনাফের মোহাম্মদ ইউনুচ বাঙ্গালী, শফিক মিয়া, ঝিলংজার নুরুল আলম, বাহারছড়ার শহীদুল হক, কাইসার, মেহেদী, নুরপাড়ার তায়েফ আহমদ, তাইছাদ সাব্বির, সিটি কলেজ এলাকার আবদুল মালেক ইমন, পাহাড়তলীর আরিফুল ইসলাম, খুরুশকুলের নুরুল আমিন, মহেশখালীর কুতুবজোমের মেহেরিয়াপাড়ার রোকন উদ্দিন, মহেশখালী পৌরসভার চরপাড়ার মো. ইউসুফ, সাতকানিয়া কাঞ্চনার শরিফুল আলম চৌধুরী, মহেশখালী পুটিবিলা এলাকার জাহেদুল ইসলাম শিবলু, বদরমোকাম এলাকার মো. কামাল ওরেফে কামাল মাঝি, সাতকানিয়া পশ্চিম ডলুর জসিম উদ্দিন, বাঁশখালী চনুয়ার জিয়া মো. কলিম উল্লাহ, লোহাগাড়া চৌধুরীপাড়াস্থ উত্তর হরিয়া এলাকার খোরশেদ আলম চৌধুরী, মনোহরগনজয়ের দক্ষিন সরসপুর বাতাবাড়িয়া এলাকার ফিরোজ আহমদ, বদর মোকাম এলাকার মিজানুর রহমান, চট্টগ্রামের চাদগাঁও এলাকার মাহমুদুল করিম, কক্সবাজারের লালদিঘীপাড় এলাকার আশিক, কক্সবাজার সদর উপজেলার হাজীপাড়ার আমীর আলী, রামু চাকমারকুলের মোস্তফা কামাল, বৈল্যাপাড়ার আমিন, রুমালিয়ারছড়াস্থ এবিসি ঘোনা এলাকার মো. ইসলাম ওরফে খোল বাহাদুর, বদরমোকাম এলাকার মো. ইব্রাহীম, পানবাজার সড়কের মারুফ আদনান, কস্তুরাঘাটের ইশতিয়াক আহমেদ, ইকরা রিয়েল এস্টেট হাউজিং এর মালিক আমিনুল ইসলাম আমান, খুরুশকুল মনুপাড়ার মোহাম্মদ সেলিম প্রকাশ বার্মাইয়া সেলিম, কক্সবাজার শহরের হোটেল তাজসেবার মাহবুবুর রহমান, মধ্যম বাহারছড়ার মো. রানা, লালদীঘির পাড় এলাকার ঝুমা ও মহেশখালীর শাপলাপুরের দীনেশপুর এলাকার ইকবাল হাসান।

এদের বিরুদ্ধে যথাযত আইনী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।


আরো বিভিন্ন বিভাগের খবর