বিডি প্রতিবেদক :
উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গৃহহারা রোহিঙ্গারা এখনো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তবে তাদেরকে তাবু সহ বিভিন্ন সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। বিতরণ করা হয়েছে রান্না করা খাবার। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অনুসন্ধানে করা হয়েছে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালীর ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প যেখান থেকে রোববার বিকাল ৩ টায় আগুনের সূত্রপাত হয়। টানা ৩ ঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও এর মধ্যে পুড়ে গেছে ২ হাজার ঘর। যেখানে ১২ হাজার রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কোন হতাহতের তথ্য পাওয়া না গেলেও ২৪ ঘন্টা পরও ক্ষত চিহ্ন দেখা গেছে।
সোমবার বেলা ৪ টায় বালুখালীর ১১ নম্বর ক্যাম্প জুড়ে পুড়া গন্ধে ধু-ধু ক্ষত আর ক্ষতের দেখা মিলে। ক্যাম্পের কোথাও কোথাও ২৪ ঘন্টার পর ধোঁয়া-ধোঁয়া পরিবেশ। যে ক্ষত চিহ্নের বুকে রোহিঙ্গাদের নতুন বসতি তৈরি শুরু করেছে প্রশাসন ও সাহায্য প্রদানকারি সংস্থা। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সেবা ও জরুরী খাদ্য সরবরাহের ব্যস্ত সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজারের শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, ক্যাম্পের অগ্নিকান্ডে দুই হাজার ঘর ভস্মীভূত হয়। এতে ১২ হাজার রোহিঙ্গা ঘর বাড়ি হারায়। সোমবার সকাল থেকে তাদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করা শুরু করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ডবিøউএফপি রোহিঙ্গাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।
তিনি জানান, অগ্নিকান্ডে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা হচ্ছে। অগ্নিকান্ডে নিখোঁজ কিংবা হতাহতের কোন ঘটনা নেই। অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থলে ৫ টি মেডিকেল টিম রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। যেখানে ৯০ জন কমিউনিটি হেলথ কর্মী কাজ করছেন।
আইওএম এর কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ জানিয়েছেন, সোমবার সকাল থেকে আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের ইমার্জেন্সি শেল্টার কিটস বাঁশ, তারপলিন, দড়ি ইত্যাদি দেওয়া হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গা নজরুল ইসলাম জানান, আগুনের সূত্রপাত হওয়ার সাথে সাথে মুহুর্তের মধ্যেই ব্যাপকতা বেড়ে যায়। দৌঁড়ে স্ব পরিবারে ঘর ছেড়ে পালাতে পারলেও ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারেননি। সোমবার সকালে এসে তাকে ২০ টি বাঁশ, একটি বড় তাবু দেয়া হয়েছে। ওটা নিয়ে এখন ঘর করছে।
জরিনা খাতুন নামের রোহিঙ্গা নারী জানিয়েছেন, তাদের খাবারের জন্য বিস্কুট ও রান্না করা ভাত দেয়া হয়েছে। ঘর করার কাজ করছেন তিনি।
শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী ঘর করে দেয়া হবে।
\ রহস্য অনুসন্ধানে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি \
অগ্নিকান্ডের কারণ জানতে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে এই কমিটিটি গঠন করা হয়।
কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, তাকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস, এপিবিএন, পুলিশ সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা সদস্য রয়েছেন। সোমবার সকাল থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে। আগামি ৩ দিনের মধ্যে কারণ বের করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
আগুনের সূত্রপাতের মুল কারণ এখনো জানা না গেলেও এই আগুনকে রহস্যজনক বলছেন শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি জানান, আগুন লাগিয়ে দেয়ার একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে। এটা তিনি দেখেছেনও। এই ভিডিওর সূত্র ধরে তদন্তের কাজ চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এপিবিএন এর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোববার আগুন ধরিয়ে দেয়ার সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে। তার বয়স ১৫-১৬ বছর। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্ত কমিটির মুখোমুখি করা হবে।
\ অস্ত্র দেখিয়ে আরসা আগুন লাগিয়ে দেয় \
সোমবার ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৫-৩০ জন রোহিঙ্গা নারীর সাথে আলাপকালে সকলেই এক বাক্যকে এ আগুনকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন।
কুলসুম বিবি নামের এক বৃদ্ধা নারী জানিয়েছেন, আরসা সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। শুধু এক স্থানে না এক যোগে অনন্ত ৫ টি স্থানে আগুন ধরিয়ে দেন তারা।
১১ নম্বর ক্যাম্পের বি ও ডি বøকের ২ টি ঘর থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছেন রফিক নামের এক রেহিঙ্গা। এরপর পরই বিভিন্ন ক্যাম্পে বিচ্ছিন্নভাবে আগুন দেখে। যার কারণে ভয়াবহতা বেড়েছে। এটা পুরোটাই নাশকতা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
\ ২ হাজার ঘর পুড়লেও হতাহতে শূন্য \
কক্সবাজারস্থ অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা জানিয়েছেন, প্র্রাথমিক অবস্থায় ২ হাজারের মত ঘর পুড়েছে। যেখানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১২ হাজার রোহিঙ্গা। পুড়ে যাওয়ার মধ্যে ৩৫ টি মসজিদ-মক্তব, ২ টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, হেল্প পোষ্ট একটি, যুব কেন্দ্র ১ টি, নারী বান্ধব কেন্দ্র ১ টি, শিক্ষা কেন্দ্র ১ টি, শিশু বান্ধব কেন্দ্র ১ টি, মানসিক পরিচার্যা কেন্দ্র ১ টি পুড়ে গেছে। এপর্যন্ত হতাহতের কোন তথ্যও পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
কোন প্রকার আহত ছাড়া আগুনটাই পরিকল্পিত বলে প্রমাণ করে দাবি করেছেন কক্সবাজার পিপলস্ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল। তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিও দেখে বুঝা যায় এই আগুন পরিকল্পিত নাশকতা। এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা হয়ে ছিল। ওই সময় ১১ জনের মৃত্যু, ৫ শতাধিক আহত হয়। পুঁড়ে গিয়ে ছিল ৯ হাজারের বেশি ঘর। এবার আহত শূন্য আগুন বলে দেয় আগুন দেয়ার আগেই রোহিঙ্গা পালানোর প্রস্তুতি ছিল।
আমরা কক্সবাজারবাসি সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মহীসন শেখ জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন সন্ত্রাসে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া না হলে ভবিষ্যতে আরও অপরাধ বাড়বে। আগুন সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ জরুরী।
এদিকে, সোমবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ, এপিবিএন সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।
প্রসঙ্গত, একই ক্যাম্পে ২০২১ সালের ২২ মার্চ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা হয়ে ছিল। ওই সময় ১১ জনের মৃত্যু, ৫ শতাধিক আহত হয়। পুঁড়ে গিয়ে ছিল ৯ হাজারের বেশি ঘর