মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া:
কক্সবাজারের পেকুয়ায় নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনে অগ্রাধিকার তালিকায় পাঁচ নম্বরে থাকা দিলরুবা কাশেম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই পেল অগ্রাধিকার। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ইতিমধ্যে প্রেরিত তিনটি অগ্রাধিকার তালিকায় এক নম্বরে ছিল আলহাজ¦ মাস্টার আহমদ কবির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সংশ্লিষ্টদের এই অনিয়ম কারণে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পেকুয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর, ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ও সর্বশেষ ২২ জুন পাঠানো তালিকায় পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মধ্য মেহেরনামার খাসপাড়ার আলহাজ¦ মাস্টার আহমদ কবির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এক নম্বরে পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু গত ৭ জুলাই প্রেরিত চূড়ান্ত তালিকায় অগ্রাধিকার বিদ্যালয় হিসেবে পাঠানো হয়েছে পাঁচ নম্বরে থাকা পেকুয়া সদর ইউনিয়নের সৈকতপাড়ার দিলরুবা কাশেম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে। এতে এক নম্বরে থাকা আলহাজ¦ আহমদ কবির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২য় নম্বরে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা রমিজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তৃতীয় নম্বরে থাকা বদিউদ্দিন পাড়া কাশেম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪র্থ নম্বরে থাকা এডভোকেট মমতাজুল ইসলাম চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিদাতাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে আলহাজ¦ মাস্টার আহমদ কবির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিদাতা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আহমদ কবির বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকে বিদ্যালয়বিহীন এলাকা হিসেবে মধ্য মেহেরনামার খাসপাড়াকে এক নম্বরে অগ্রাধিকার দিয়ে পেকুয়া থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে তিনটি প্রস্তাব গেছে। গত মাসেও গেছে একই প্রস্তাব। কিন্তু মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে পাল্টে গেছে সেই অগ্রাধিকার তালিকা। পেকুয়ার ইউএনও রহস্যজনক কারণে তালিকায় থাকা পাঁচ নম্বরের বিদ্যালয়কে অগ্রাধিকার বানিয়েছে। অথচ বিদ্যালয়ের অভাবে মেহেরনামার অরোনিমা আশ্রয়ণ প্রকল্পের শতাধিক শিশু প্রতিবছর ঝড়ে পড়ছে। ইউএনও সরেজমিনে গিয়ে সেই চিত্র দেখেছেনও।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় নতুন বিদ্যালয় স্থাপন করতে হলে যে কেউ একজনকে জমি দান করতে হয়। দিলরুবা কাশেম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে জমিদাতা হলেন জোবায়দা আক্তার ও পারভিন হাছিনা আকতার নামের দুজন নারী। বিদ্যালয়ের নামে তাঁরা মেহেরনামা মৌজায় বিএস ৯১৮ নম্বর খতিয়ানের সৃজিত বিএস ২৬০০ নম্বর খতিয়ানের ৬৬৮৩ বিএস দাগ থেকে ৩৩ শতক জমি দেবেন বলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সঙ্গে অঙ্গিকারাবদ্ধ হয়েছেন।
তবে পেকুয়া উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৃজিত ২৬০০ নম্বর খতিয়ানের ৬৬৮৩ বিএস দাগে জমি রয়েছে মাত্র ২২ শতক। খতিয়ানে বিদ্যালয়ের পক্ষে জমিদাতা এই দুই নারীর নাম নেই। খতিয়ানে মেহেরনামার বাসিন্দা শরাফত আলীর তিনপুত্র ও তিন মেয়ের নাম রয়েছে। তাঁরা জমিদাতা ওই দুই নারীর ওয়ারিশ ও আত্মীয়ও নন।
জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) গৌর চন্দ্র দে বলেন, অগ্রাধিকার তালিকা সম্পর্কে আমার অত ধারণা নেই। তবে অগ্রাধিকার তালিকা পাঠাতে ইউএনওর নেতৃত্বে একটি কমিটি আছে, সেই কমিটি যে সিদ্ধান্ত দেয় তার আলোকে আমাদের তালিকা পাঠাতে হয়।
জমির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গৌর চন্দ্র দে বলেন, জমিদাতা যদি দলিল সম্পাদন করে দিতে না পারেন তাহলে বিদ্যালয় বাতিল হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে পেকুয়াকে বিদ্যালয় পাওয়া থেকে বঞ্চিতই হতে হবে।