ইউনিয়ন হাসপাতালে ডাক্তারের ভুলে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ

ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হন, ইনজেকশন দেয়ার পর যা ঘটে শীলার ভাগ্যে

bdworldbdworld
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১১:১৭ PM, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিডি প্রতিবেদক :
কক্সবাজার শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটেছে।
কক্সবাজার ইউনিয়ন হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় আফসানা হোসেন শীলা নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ব্যাগ রক্ত দেয়ার পরও তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না স্বজনরা। তাদের দাবি- পেটে ব্যাথা নিয়ে ভর্তি হবার পর চিকিৎসক ইনজেকশন দেন তারপর থেকে শীলার অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসিউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার মোহাম্মদ হোসেনের কন্যা।
প্রসূতির স্বামী ইফতেখার বলেন, তার স্ত্রীকে গত ২১ এপ্রিল রাতে হালকা পেটে ব্যথা হওয়ায় কক্সবাজারের বেসরকারি ইউনিয়ন হাসপাতালে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নীনা জিহানের প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে যান। এরপর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্লাড দেওয়া হয়। ব্লাড দেওয়ার পরপরই অসুস্থতা বোধ করে। পরে ডা. নীনা জিহানের পরামর্শ অনুযায়ী ইউনিয়ন হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহেদ তার স্ত্রীকে ভর্তি করান।
ভর্তি করার পর পরই তার শরীরে ইনজেকশন পুশ করা হয়। ইনজেকশনটি পুশ করার কিছুক্ষণ পরেই তার স্ত্রীর প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়।
পরে ২২ এপ্রিল রাত ২ টার সময় জানানো হয় তার স্ত্রীকে ডেলিভারির জন্য রক্তের ব্যবস্থা করতে, এক ব্যাগ রক্ত চালানোর পর একটি স্যালাইন দেয়া হয়। পরবর্তীতে রাত সোয়া ৩ টার সময় ডাক্তার শাহেদ হিমু এবং সোমা নামে দুজন নার্স নিয়ে তার স্ত্রীকে ডেলিভারি করানোর জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। ডেলিভারিতে তার স্ত্রী একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
পরবর্তীতে ডাক্তাররা জানান, তার স্ত্রীর ব্লিডিং বন্ধ করা যাচ্ছে না। পরে ডাক্তার নীনা জাহানকে ইউনিয়ন হাসপাতাল থেকে বিষয়টি অবগত করা হলে তিনি বলেন, আমি সদর হাসপাতালের ডিউটিতে আছি, রোগীকে সদর হাসপাতালে পাঠাই দেন। আমরা আমার স্ত্রীকে সদর হাসপাতালে আনার পর তিনি আমার স্ত্রীকে আই.সি.ইউ তে প্রেরণ করেন।
এরপর বুধবার রাতে তার স্ত্রীকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বুধবার রাতে ইউনিয়ন হাসপাতাল ঘেরাও করে নিহতের স্বজনেরা। শহর জুড়ে তুলকালাম কান্ড সৃষ্টি হয় এ ঘটনা নিয়ে।
ইউনিয়ন হাসপাতালের এমন অবহেলার জন্য জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবী করেন আফসানার পিতা মোহাম্মদ হোসেন।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল চিকিৎসা করে আফসানাকে মৃত্যু পথে ঠেলে দিয়েছে। আমার মেয়ের দায় ইউনিয়ন হাসপাতালেকে নিতে হবে।
তিনি জানান, আফসানার ডেলিভারির তারিখ ছিলো ৬ মে। টাকার লোভে আগাম ডেলিভারি করাতে গিয়েই এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছ ইউনিয়ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
প্রসূতি নারী আফসানা হোসেন শীলা মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বুধবার রাতে ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনরা ও স্থানীয় মানুষেরা ইউনিয়ন হাসপাতালের আশেপাশে ভীড় করে।  ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ায় ভূয়া ভূয়া বলে হৈ-হুল্লোড় করে৷ তাৎক্ষণিক পুলিশ ও আনসার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে কোন  ভাংচুর করতে পারেনি বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
তবে ইউনিয়ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা হয়নি।
 হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোসাব্বির হোসেন তানিম বলেন, স্বজনদের অভিযোগটা এ জন্যই ভিত্তিহীন কারণ তার পরিবারের কাছে অপারেশন সম্মতি পত্র নেয়া হয়েছে। তিনি আমাদের এখানে মারা যাননি। তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে সদরে রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
কক্সবাজার ইউনিয়ন হসপিটালের চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন- ঘটনাটি নিয়ে আমরাও খুবই মর্মাহত। তবে সরাসরি অভিযোগগুলো চিকিৎসকের উপর চাপানো উচিত নয়। তারপরও আমরা বিষয়টি নিয়ে  তদন্তে কমিটি ঘটন করা হয়েছে। সেই কমিটির প্রতিবেদনের উপর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাঃ আসিফ আহমেদ হাওলাদার বলেন- বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস থেকে নির্দেশ পাওয়ার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একটি তদন্ত কমিটি ঘটন করা হচ্ছে। তদন্তের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

আপনার মতামত লিখুন :