কক্সবাজারের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যেন কাছে টানে মানুষকে। ফেনিল উর্মিমালায় নিজেকে সপে দিয়ে সব ক্লান্তি যেন ভুলে যায় পর্যটক। স্বাস্থ্যকর স্থান হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছে কক্সবাজার। এসব কারণে প্রতিদিন লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয় এই পর্যটন নগরী।
মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার মাধ্যমেও বিশ্বব্যাপী করাবাজারের নতুন করে পরিচিতি ঘটেছে। ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মানবিক সেবা দিতে এখানে দেশী-বিদেশী উন্নয়ন কর্মীদের বসবাস ও নিত্য আসা-যাওয়া।
দেশের সবচেয়ে বড় বড় উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে কক্সবাজারে। এসব উন্নয়ন কর্মকান্ডকে ঘিরে এখানে অবস্থান করেন গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তি। ২.৪৯১.৮৬ বর্গ কিঃমিঃ আয়তনের কক্সবাজার জেলায় স্থানীয় অধিবাসী প্রায় ২৮ লাখ। অশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, উন্নয়ন-কর্মী ও পর্যটক মিলে- স্থানীয় মূল জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখানে অতিরিক্ত অবস্থান করেন।
অথচ স্বাস্থ্যকর স্থান হিসেবে খ্যাত কক্সবাজারের প্রায় ৪০ লাখ মানুষের জন্য এখানে বিশেষায়িত
স্বাস্থ্যসেবা একেবারেই অপ্রতুল।
প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা নিতে কক্সবাজার থেকে মানুষকে যেতে হচ্ছে জেলার বাইরে। আবার কাঙ্খিত
বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবাটি না থাকায় অনেকেই ইচ্ছে করলেও ভ্রমণ করতে পারছেন না কক্সবাজার। যেমনঃ কক্সবাজারে ভ্রমণকালে কোন ব্যক্তি যদি হার্ট অ্যাটাক করেন, তাঁর জন্য এখনও সব ধরনের চিকিৎসা নেই। এখানে কোন ক্যাথল্যাব না থাকায় রোগীদের হার্টের এনজিওগ্রাম ও রিং পরানোর জন্য বাইরে ছুটতে হয়। কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের খুব বেশি মুভমেন্ট এবং সময়ক্ষেপন নিরাপদ নয়।
তাই হার্ট অ্যাটাকের রোগীরা অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন কক্সবাজারে। এমন কী- আমি এবং আপনিও এমন অনেক স্বাস্থ্য-ঝুঁকি কিংবা মৃত্যু-ঝুঁকিতেই রয়েছি।
এই ধরণের স্বাস্থ্য-ঝুঁকি কিংবা মৃত্যু-ঝুঁকি থেকে উত্তরণের উদ্দেশ্যে আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ- ইউনিয়ন হসপিটাল কক্সবাজার পিএলসি। কক্সবাজারের প্রথম পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী গঠিত হল; তাও আবার স্বাস্থ্যখাতে।
ইউনিয়ন হসপিটালে একে একে চালু হল- মুমূর্ষ রোগীর জন্য আইসিইউ, হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগীর জন্য সিসিইউ, সংকটাপন্ন রোগীর জন্য এইচডিইউ, মুমূর্ষ নবজাতকের জন্য এনআইসিইউ, মুমূর্ষ শিশুর জন্য পিআইসিইউ, সংকটাপন্ন নবজাতকের জন্য স্ক্যানো, কিডনি রোগীর জন্য ডায়ালাইসিস, ক্যান্সার রোগীর জন্য ক্যামোথেরাপীর মতো বিশেষায়িত সেবাসমূহ।
এসব বিশেষায়িত সেবা চালু হওয়ার মাধ্যমে কক্সবাজারে অনেকের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।
একসময় ডায়ালাইসিসের জন্য কক্সবাজারের রোগীদের চট্টগ্রামে গিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে মাসের পর মাস অবস্থান করে চিকিৎসা নিতে হতো। অনেক পর্যটকও কক্সবাজারে ডায়ালাইসিস সেবা না থাকায় ভ্রমণে আসতে পারতেন না। একমাত্র ইউনিয়ন হসপিটালে ডায়ালাইসিস সেবাটি চালু করায় এখন অনেকেই নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারছেন।
ডায়ালাইসিসই কেবল একমাত্র নয়; এরকম বিশেষায়িত সেবাসমূহ ইউনিয়ন হসপিটাল ছাড়া কক্সবাজারে এখনও আর কোথাও নেই। তবে বিশেষায়িত সেবার পরিসীমা এখানেই শেষ নয়। বিশেষায়িত সেবার পরিধি আরও বাড়ানোর ক্ষেত্র, সম্ভাব্যতা এবং প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এজন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা যেন জেলার প্রথম পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীটির উপরেই বর্তায়।
ভবিষ্যতে কক্সবাজারে ক্যাথল্যাব স্থাপন করা যেন এখনও স্বপ্নের মতো ব্যাপার। কিন্তু ইউনিয়ন হসপিটাল কক্সবাজার পিএলসি’র এই সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া চোখের, অর্থোপেডিক্সের বিশেষায়িত কোন চিকিৎসা সেবা নেই কক্সবাজারে। এই ধরণের বিশেষায়িত সেবাগুলো চালু করার উদ্যোগ নেয়া জরুরী।
একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মধ্যদিয়ে কক্সবাজারকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সুযোগ রয়েছে। সমুদ্র সৈকতের কোল ঘেঁষে স্বপ্নদেখা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজটিতে দেশ-বিদেশ থেকে পড়তে আসবেন শিক্ষার্থীরা। আর সৈকত শহরে গড়ে উঠা বিশেষায়িত সব হসপিটালে চিকিৎসা নিতে আসবেন দেশী-বিদেশী রোগীরা।
দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে কক্সবাজার থেকেই শুরু হতে পারে দেশের স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নেওয়ার অগ্রযাত্রা। কক্সবাজারেই হতে পারে বিশ্বমানের সব বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা।
সমুদ্রের নীল জলরাশি, ফনিল ঢেউ কিংবা সাগরের বুকে সোনার-বলের মতো সূর্যটির অন্ত যাওয়া দেখতে যেভাবে কক্সবাজারে ছুটে আসেন পর্যটকরা। একইভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিতে কিংবা স্বাস্থ্যশিক্ষা নিতে মানুষ ছুটে আসবেন কক্সবাজারে। কক্সবাজারকে এমন এক হেলথকেয়ার সিটি হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে পারে ইউনিয়ন হসপিটাল কক্সবাজার পিএলসি। এমন প্রত্যাশা আমাদের সকলেরই হোক। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
–
মোয়াজ্জেম হোসাইন সাকিল
ডিরেক্টর-মার্কেটিং এন্ড প্রমোশন
ইউনিয়ন হসপিটাল কক্সবাজার পিএলসি