চকরিয়া প্রতিনিধিঃ
চকরিয়ার জমজম হাসপাতালে গাইনী ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ফয়জুর রহমান এর অপচিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী উক্ত চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারনে তার স্ত্রীর স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতিসাধন সহ তার নবজাতক বাচ্চাকে মেরে ফেলার বিষয়ে অভিযোগ এনে ইউএনওর বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
চকরিয়া পৌরসভা,চিরিংগা, সোসাইটি পাড়া, ০৮ নং ওয়ার্ডের মাহাবুব আলমের পুত্র মোঃ আনিসুর রহমান এ অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, গত বছরেে ১৯ ডিসেম্বর তার স্ত্রীর রোকসানা আকতার,(৩৩)র হঠাৎ প্রসব-বেদনা শুরু হলে তিনি দ্রুত চিকিৎসার জন্য ওই হাসপাতালের গাইনী ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ফয়জুর রহমান এর কাছে নিয়ে যায়।
ডাক্তার তার স্ত্রীর পরীক্ষা করার জন্য আল্ট্রোসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করার জন্য বলেন। স্ত্রী – সন্তানকে বাঁচতে তিনি ডাক্তারের পরামর্শে সব পরীক্ষা করান।
এমনকি ডাক্তার নিজে তার স্ত্রীর আল্ট্রো পরীক্ষা টি নিজে করেন।
ওই সময় সব কিছু টিকটাক আছে বলে তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি দেয়া হয়।
তিনি জানান, ওইদিন রাত আনুমানিক সাড়ে ৩:সময় তাঁর স্ত্রীকে নরমাল ডেলিভারি করানোর জন্য লেবার ওয়ার্ডের মিডওয়াইফ ও আয়ারা মিলে আমার স্ত্রীকে লেবার রুমে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর ডাঃ ফয়জুর রহমান লেবার রুমে যান। ওই সময় তিনি (ভুক্তভোগী) তার মা লেবার রুমের বাইরে অপেক্ষায় ছিল। ওইদিন রাতে তাঁর স্ত্রীর কন্যা সন্তান প্রসব করে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে করানো পরীক্ষার রিপোর্ট ও তার সন্তানের উজনে গরমিল পাওয়া যায়।
হাসপাতালের রিপোর্টে বাচ্চার ওজন হয় ৫ কেজি। কিন্তু বাচ্চা ডেলিভারির পর, আল্ট্রা রিপোর্টে বাচ্চার ওজন দেখানো হয় ৩ কেজি ৫৩৮ গ্রাম যা বাচ্চার ডেলিভারির পরের বাস্তবিক ওজনের সাথে কোনরকম মিল নেই।
তিনি আরো দাবি করেন, সম্পূর্ণ ভুল রিপোর্টের মাশুল হিসাবে নরমাল ডেলিভারি করাতে গিয়ে শিশু কন্যা মাথা থেকে পা অবধি পুরো শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত পায় (যার চিহ্ন সময়ের সাথে তার শরীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে)।
তিনি ধারণা করছেন,তাঁর স্ত্রীর নরমাল ডেলিভারি করাতে গিয়ে ডাঃ ফয়জুর রহমান স্বয়ং এবং তাহার নির্দেশনায় লেবার রুমের মিডওয়াইফ ও আয়ারা মিলে তার স্ত্রীর পেটে পা ও হাঁটুর চাপ দিয়ে বাচ্চা ডেলিভারি করান (যেটা আমি আমার স্ত্রীর নিকট থেকে ২দিন পর জানতে পারি; যা শুনার পর আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি)।
তিনি বলেন, তৎপর কাপড় পেচানো অবস্থায় বাচ্চাকে গাইনী ওয়ার্ডে নিয়ে এসে মিডওয়াইফ কবিতা বাচ্চাকে অক্সিজেন ও মুখে বাতাস দেওয়ার মত কিছু একটা করছিল। তখন বাচ্চার অবস্থা দেখে আমি মিডওয়াইফ কবিতাকে জিজ্ঞেস করি, বাচ্চার মাথায় ও মুখে এইটা কি হয়েছে? তখন ওনি বললেন, “সেটা তেমন কিছু না, ডাঃ ফয়জুর রহমান বলেছেন বাচ্চাকে একটা শিশু ডাক্তার দেখাতে।”
তৎক্ষনাৎ ঐ হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে দায়িত্বরত শিশু ডাক্তার কাপড় পেচানো অবস্থায় থাকা আমার কন্যাকে দেখে জানালেন বাচ্চার অবস্থা ভালো না আপনারা দ্রুত বাচ্চাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যান। এসময় আমার স্ত্রীকে ডেলিভারি রুম থেকে কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার কন্যাকে তার মায়ের সাথে দেখা করিয়ে: আমি ও আমার মা কন্যাকে নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই (
এটাই যে আমার স্ত্রীর সাথে তার ৯ মাস গর্ভে লালন করা সন্তানের শেষ দেখা হবে তা আমি ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি)। অতঃপর আমার কন্যাকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পৌঁছানোর পর জরুরী বিভাগ থেকে মেডিকেলের ৩২নং ওয়ার্ডের এনআইসিও তে বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। ঐখানে যাওয়ার পর যখন আমি ডাক্তারকে বাচ্চার বিষয়ে অবগত করি তখন ডাক্তার বাচ্চার গায়ে থাকা কাপড় সরাতে গিয়ে দেখতে পান নরমাল ডেলিভারির নামে আমার বাচ্চার সাথে ঘটে যাওয়া এক পৈশাচিক চিত্র: যা আমার কন্যার সারা শরীরে ততক্ষণে কালো কালো দাগ হয়ে ভেসে উঠে। আমার কন্যার শরীরের এমন বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে আমি, আমার মা এবং ৩২নং ওয়ার্ডের কর্মরত ডাক্তাররা সহ সবাই ভয়ে আঁতকে ওঠেন এবং কর্মরত ডাক্তাররা বলেন, “এই সাইজের বাচ্চা সুষ্ঠুভাবে নরমাল ডেলিভারি করা কখনও সম্ভব না, আর এভাবে জোরপূর্বক ডেলিভারি করার ফলে বাচ্চা পুরো শরীরে আঘাত পেয়ে এখন মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে, এই অবস্থায় বাচ্চাকে বাঁচানো আমাদের পক্ষে কোনভাবে সম্ভব নয়।”
এদিকে জমজম হাসপাতাল কতৃপক্ষ তার স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করে দেয়।
দিবে, রোগীর আর হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই। তখন আমি আমার ছোটভাইকে জানাই যে, বিকেল পর্যন্ত রোগীকে তাদের তত্বাবধানে রেখে হাসপাতালের যাবতীয় বিল পরিশোধ করে রোগীকে বাসায় নিয়ে আসে। অপরদিকে ৩২নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকা আমার বাচ্চা আর বেঁচে নেই বলে কর্তব্যরত ডাক্তাররা আমাকে জানান। আমি নিজেকে কোনভাবে সামলিয়ে কয়েকঘন্টার জন্য নিয়ামত হিসেবে আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া আমার কন্যার নিথর দেহ নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা রাতে কন্যার দাফনের কার্য সম্পন্ন করি।
ডাঃ ফয়জুর রহমান ও জমজম হাসপাতাল দ্বারা আমার নবজাতক কন্যা ও স্ত্রীর সাথে এমন বিভৎস ও অমানবিক অত্যাচারের পর আমি নিজেকে কোনভাবে স্থির রাখতে না পেরে ইউএনও বরাবর লিখতে অভিযোগ দায়ের করে।
অভিযোগ টি বর্তমানে তদন্তধীন রয়েছে।
এদিকে তার স্ত্রীর স্ত্রীর কাটাছেঁড়ার সেলাইয়ের স্থানে ব্যথা কোন ভালো ভালো লক্ষণ বুঝা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, তার স্ত্রীর অবস্থা সংকটাপন্ন। স্ত্রীকে ভালো চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হওয়ায় তৎক্ষনাৎ চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালসহ বিভিন্ন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগনের কাছে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে দৌড়ের ওপরে আছে। জমজম হাসপাতালে চিকিৎসা ডাঃ ফয়জুর রহমান ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের মিথ্যা রিপোর্টে বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে ও সাধারণ মানুষ যাতে আর প্রতারণার শিকার না হয় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
চকরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুর রহমান বলেন-দরখাস্ত পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মকর্তাকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তদন্তভার অর্পন করেছি।